Advertisement
E-Paper

যন্ত্রণায় মাঠ ছাড়লেন রোনাল্ডো, ফ্যান জোনে পর্তুগিজদের কান্না

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর ব্রাজিলের রোনাল্ডোর মধ্যে এমনিতে দুটো মিল পাওয়া যায়। এক, অবশ্যই দু’জনের নাম। আর দুই, দু’জনেই পর্তুগিজ বলতে জানেন। রবিবার রাত দু’জনের মধ্যে তৈরি করে দিল আরও একটা মিল— স্তাদ দ্য ফ্রঁসের অভিশাপ। আটানব্বইয়ের ফ্রান্স বিশ্বকাপে এই মাঠেই চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন ব্রাজিলের রোনাল্ডো।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৮
২৪ মিনিটেই ইউরো ফাইনাল শেষ রোনাল্ডোর। ছবি: রয়টার্স

২৪ মিনিটেই ইউরো ফাইনাল শেষ রোনাল্ডোর। ছবি: রয়টার্স

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর ব্রাজিলের রোনাল্ডোর মধ্যে এমনিতে দুটো মিল পাওয়া যায়। এক, অবশ্যই দু’জনের নাম। আর দুই, দু’জনেই পর্তুগিজ বলতে জানেন। রবিবার রাত দু’জনের মধ্যে তৈরি করে দিল আরও একটা মিল— স্তাদ দ্য ফ্রঁসের অভিশাপ।

আটানব্বইয়ের ফ্রান্স বিশ্বকাপে এই মাঠেই চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন ব্রাজিলের রোনাল্ডো। শুধু তাই নয়, জড়িয়ে পড়েছিলেন ভালমতো বিতর্কেও। টিমলিস্টে প্রথমে তাঁর নাম ছিল না, সেটা পরে ঢোকে। এবং জল্পনা শুরু হয়ে যায় যে, রোনাল্ডো সুস্থ নন। সেই ফাইনালে একেবারেই প্রভাব ফেলতে পারেননি ব্রাজিলীয় তারকা।

আর ক্রিশ্চিয়ানো? ২০০৪ ইউরোর পর পর্তুগিজ তারকা সুযোগ পেয়েছিলেন নতুন ইতিহাস লেখার। সে বার পারেননি, এ বার ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে হাঁটু ধরে বসে পড়লেন মাঠে। তিন-তিন বার মাঠ ছেড়ে বেরোলেন, আবার ফিরলেন। চোখে জল নিয়ে খেলার মরিয়া চেষ্টা করলেন। শেষ পর্যন্ত স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়লেন।

আইফেল টাওয়ারের ফ্যান জোন দেখে তখন মনে হচ্ছিল, ইউরো কাপ বোধহয় ফ্রান্স জিতেই গিয়েছে! লাল-নীল-সাদা সমুদ্রের মধ্যে থেকে তখন মুহুর্মুহু বিয়ারের ফেনা উঠছে। কানে আসছে অদ্ভুত সম্মোহনী একটা গান। কাকে একটা বলতে শোনা গেল, এই ফাইনালটা নব্বই শতাংশ জিতেই আমরা মাঠে নেমেছিলাম। বাকি যে দশ শতাংশ নিয়ে সন্দেহ ছিল, সেটাও এখন শেষ!

আগাম উৎসবের এই জনসমুদ্রে চরম হতাশার একটা দ্বীপও পাওয়া গেল। পাওয়া যাবে, জানা কথা। এঁরা পর্তুগাল সমর্থক। এঁদের কেউ হাতের বিয়ার গ্লাস লাথি মেরে ভেঙে ফেলে হাউহাউ করে কাঁদছেন। কেউ যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না, শুধু নিথর ভাবে মাটিতে বসে। কারও মাথায় হাত। কারও চোখে জল। এক পর্তুগিজ তরুণী তখন ক্ষুব্ধ ভাবে বলে চলেছেন, ‘‘ফ্রান্স যে এত ফিজিক্যাল ফুটবল খেলছে, রেফারি সেটা দেখতে পাচ্ছেন না? ওরা রোনাল্ডোকে এ ভাবে মারল? এটা আমাদের কেউ করলে কি রেফারি ছেড়ে দিতেন?’’

ফ্যান জোনের ওই শব্দব্রহ্মে উত্তর দেওয়া সম্ভব হল না। সম্ভব হলেও তরুণীকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। রবিবারের ফ্রান্স জুড়ে যা চলেছে এবং চলছে, সে সব দেখে রোনাল্ডোর দেশের লোকের খুব খুশি হওয়ার কথা তো নয়।

সকাল দশটা নাগাদ যেমন দেখা গেল, স্তাদ দ্য ফ্রঁসের সামনে ভাল জমায়েত হয়েছে। কী, না লোকে সেলফি তুলছে। স্তাদ দ্য ফ্রঁসের সঙ্গে সেলফি! এক পর্তুগিজ সমর্থক চোখে পড়ল, যাঁর টি শার্টের প্রথম থেকে শেষ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর অন্তত গোটা দশেক মুখের ছবি আঁকা। দুই ফরাসি তরুণকে গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করা গেল, এত সকালে কেন? তাঁরা চটপট লিখে দিলেন, ফাইনাল মানে তাঁদের কাছে শুধু ম্যাচ দেখা নয়। গোটা দিনের প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড উপভোগ করা। এখান থেকে সোজা বার। সেখানে যথেচ্ছ পানাহার পর্ব মিটিয়ে সন্ধের দিকে স্টেডিয়াম। ফ্রান্স জিতলে সোজা সঁজেলিজেতে গিয়ে পার্টি। গ্রিজম্যানদের জেতা নিয়ে এঁদের কোনও সন্দেহ নেই। এখন শুধু ফাঁকায় ফাঁকায় সম্ভাব্য ইতিহাস-মঞ্চের সঙ্গে গোটা কয়েক ছবি তুলে গেলেন আর কী!

সমর্থকদের নিয়ে লিখে কী হবে। সমগ্র দেশটাই এমন উন্মাদনার এমন সব নাটকীয়তায় ঢুকে পড়েছে যে, সময়-সময় বিকারগ্রস্ত মনে হচ্ছে। ফ্রান্সের একটা কাগজ দেখা গেল, লে ব্লুজ নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কথা লিখেছে। যার মধ্যে একটা অলৌকিক ভাবে ফলেও গিয়েছে। যেমন, আঠারো বছর আগের কাপ ফাইনালে ব্রাজিলের রোনাল্ডোর অবস্থা আজ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হোক। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ুন। সবচেয়ে ভাল হয়, ফাইনালটাই খেলতে না নামলে! গ্রিজম্যানকে বক্সে ট্যাকল করতে গিয়ে পেপে লাল কার্ড দেখুন। গ্রিজ নিখুঁত প্লেসিংয়ে গোল করে চলে যান। টিমের অধিনায়ক হুগো লরিস এমন সব সেভ করুন যাতে ’৯৮-এর ফাবিয়েন বার্থেজ মনে পড়ে যায়।

ফরাসি মিডিয়া প্রবল খোশমেজাজে এটা দেখে যে, গোটা ফুটবল-বিশ্ব ইউরো ফাইনালে ফ্রান্সকে এগিয়ে রেখেছে। কোন কাগজ কী লিখেছে, তা সদর্পে তারা পোস্ট করে দিচ্ছে নিজেদের ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইট বলতে মনে পড়ল, ফুটবল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমর্থকদের চ্যাটের বন্দোবস্তও করে ফেলেছে ফরাসি কাগজগুলো। ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেদের প্রশ্ন পোস্ট করে দিলেই চলবে। দু’মিনিটের মধ্যে উত্তর এসে যাবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রসোয়াঁ অল্যাঁদের রবিবাসরীয় সাক্ষাত্কার আরও সব কিছুর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এ দিন এক দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলে দিয়েছেন, “শুধু রবিবারের জন্য ফ্রান্সের সব রাজনৈতিক দলকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, যাবতীয় মতবিরোধ তুলে রাখতে। আসুন, আমরা আজ এককাট্টা হয়ে যাই। গোটা ফ্রান্সের আজ এক হয়ে যাওয়া খুব দরকার। ফ্রান্স অনেক দুঃখ পেয়েছে অতীতে। আঘাত সহ্য করেছে। আমাদের তাই এক হয়ে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট এখানেই থামেননি। দিদিয়ের দেশঁর টিমের প্রতিও উদাত্ত ডাক দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের। বলেছেন, “ফুটবলাররা জানে, সন্ত্রাসে আক্রান্ত হওয়াটাই এ দেশের পরিচয় হয়ে গিয়েছিল এক সময়। আমি নিশ্চিত ওরা চাইবে দেশকে আনন্দ দিতে। ওরা জানে, ফ্রান্সের উঠে দাঁড়ানোর এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।”

কী দাঁড়াল?

স্রেফ ইউরো জয় নিয়ে গোটা একটা দেশের চেতনা কেমন অবলুপ্তির পথ ধরে হাঁটতে শুরু করেছে বোঝা গেল? বিদেশিদের বোধহয় সব দেখেশুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়াই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত অনুভূতি।

Cristiano Ronaldo injured forced off Euro 2016 Final
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy