স্তেফানোস চিচিপাসের বিরুদ্ধে তাঁর ফোরহ্যান্ড (ডান হাতি খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে ডান হাত ও বাঁ হাতি খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে বাঁ হাতে মারা শট) যখন লাইনে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ক্রিস্টোফার ইউব্যাঙ্কস। তত ক্ষণে বিশ্বের পাঁচ নম্বর তারকাকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পাকা করে ফেলেছেন আমেরিকার এই টেনিস খেলোয়াড়। দর্শকাসনে বসে কোকো গফ। মহিলাদের সিঙ্গলসে নিজে হারলেও দেশোয়ালি খেলোয়াড়ের সমর্থনে এসেছিলেন আমেরিকার গফ।
কিছুটা ধাতস্থ হয়ে দর্শকদের চিৎকারের মাঝে ইউব্যাঙ্কস প্রথমে দু’হাত উপরে তুললেন। তার পরে হাসি মুখে দু’আঙুল দিয়ে হৃদয় চিহ্ন দেখালেন। অথচ তিনি যে পেশাদার টেনিস খেলবেন, সেটাই কয়েক বছর আগে পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল না।
আমেরিকার এই খেলোয়াড় ছোট থেকে টেনিস খেললেও কোনও দিন তাকে পেশা হিসাবে ভাবেননি। বাবা চার্চে বাচ্চাদের পড়াতেন। ইউব্যাঙ্কস জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। চাকরি করার ইচ্ছা কোনও দিন ছিল না। তার মধ্যেই টেনিস চলত। ভেবেছিলেন, পরবর্তীতে কোচিং করাবেন। হঠাৎই পেশাদার টেনিসের দিকে ঝোঁকেন ইউব্যাঙ্কস।
২০১৬ সালে স্থানীয় একটি প্রতিযোগিতায় ভাল খেলেছিলেন ইউব্যাঙ্কস। তার পরেই টেনিসের নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। পরের বছর পেশাদার টেনিসে পা। ধীরে ধীরে এটিপি প্রতিযোগিতায় খেলা শুরু করেন। ২০১৯ সালে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে নামেন ইউব্যাঙ্কস। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলেন। কিন্তু প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যেতে হয়। পরের বছর ইউএস ওপেনে অভিষেক।
আরও পড়ুন:
চলতি বছরের শুরুতে ক্রমতালিকায় ১০২ নম্বরে ওঠেন ইউব্যাঙ্কস। মায়ামি ওপেনে পর পর তিনটি ম্যাচ জেতায় ক্রমতালিকায় ১০০-র মধ্যে পৌঁছে যান তিনি। গত কয়েক মাসে ধীরে ধীরে ক্রমতালিকায় উন্নতি করেছেন ইউব্যাঙ্কস। ২০২৩ সালে ২৭ বছর বয়সে উইম্বলডনে প্রথম বার খেলতে নেমেছেন আমেরিকার খেলোয়াড়। এখন ক্রমতালিকায় ৪৩ নম্বরে রয়েছেন তিনি। কিন্তু ঘাসের কোর্টে অঘটন ঘটিয়েছেন ইউব্যাঙ্কস। চিচিপাসকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ বিশ্বের তৃতীয় বাছাই ড্যানিল মেদভেদেভ।
খেলার পাশাপাশি অভিনয়েও দক্ষ ইউব্যাঙ্কস। দু’টি ডকুমেন্টরিতে কিংবদন্তি আর্থার অ্যাশের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই অভিনয় করতে গিয়েও টেনিসের বিষয়ে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানিয়েছেন ইউব্যাঙ্কস।
প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছলেও নিজের ক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ইউব্যাঙ্কস। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো ছোট থেকে পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হতে চাইনি। কিন্তু নিয়তি অন্য কিছু ভেবেছিল। যে দিন থেকে পেশাদার টেনিস খেলছি নিজের খেলা উপভোগ করছি। অতিরিক্ত চাপ নিচ্ছি না। কোয়ার্টার ফাইনালেও সেটাই করতে চাই।’’