Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সোনা জিতে মা ও সচিনের কথা মনে পড়ছে মানিকার

অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অকপট সোনার মেয়ে।

সেরা: গোল্ড কোস্টে পদকের হ্যাটট্রিক মানিকার। ছবি: পিটিআই

সেরা: গোল্ড কোস্টে পদকের হ্যাটট্রিক মানিকার। ছবি: পিটিআই

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১১
Share: Save:

কমনওয়েলথ গেমসে ইতিহাস গড়ে সোনা জেতার পরে মানিকা বাত্রার (মণিকা নন, নিজে বলছেন মানিকা) মনে হচ্ছিল দু’জনের কথা। প্রথম জন, তাঁর মা সুষমা বাত্রা। অন্য জন, সচিন তেন্ডুলকর।

‘‘আমার এই সাফল্যের পিছনে সব কৃতিত্ব আমার মায়ের। যেখানে যখন অনুশীলনে গিয়েছি, টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছি, মা সব কাজ ফেলে আমার সঙ্গে থেকেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। সোনাটা তাই মাকেই উৎসর্গ করেছি।’’ অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অকপট সোনার মেয়ে। তাঁর উচ্ছ্বসিত গলা থেকে এরপর বেরোয়, ‘‘সচিন তেন্ডুলকর আমার অনুপ্রেরণা। রিও অলিম্পিক্সে যাওয়ার আগে উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘বিজয় স্তম্ভে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত শোনার চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কিছু হয় না। আর দেশের হয়ে যখন খেলতে নামবে তখন প্রত্যাশার চাপ থাকবেই। সেটা সামলানোটাও শিখতে হবে।’ ফাইনাল খেলতে নামার আগে সচিন স্যরের কথাগুলো মাথায় রেখেছি। সোনার পদকটা হাতে নেওয়ার সময় যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজছিল, তখন সচিন স্যরের মুখটা ভাসছিল। অসাধারণ অনুভূতি।’’

দলগত বিভাগে সোনা জেতার পরে গেমসের ইতিহাসে ভারতের প্রথম মেয়ে হিসেবে ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা জয়। এর মাঝে মেয়েদের ডাবলসে রুপো জিতেছেন। মিক্সড ডাবলসে আজ রবিবার ফের পদক জেতার সুযোগ। টেবল টেনিসের ইতিহাসে চমকপ্রদ ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাচ্ছেন একের পর এক। অথচ এ দিন সিঙ্গাপুরের ইউ মেনজিউকে ৪-০ উড়িয়ে সোনা জেতার পরে বিজয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন দিল্লির নারায়িনা বিহারের বছর বাইশের মেয়ে। কেন? প্রশ্ন শুনে ফোনের ও প্রান্তে শোনা যায় বিজয়িনীর গর্বিত হাসি। ‘‘প্রচণ্ড আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিলাম তখন। আসলে ভাবিইনি এত সহজে স্বপ্ন সফল হবে। যাদের কাছে শুক্রবার হেরেছিলাম ডাবলসে, তাদের এক জনের সঙ্গে খেলা। সেমিফাইনালে হারিয়েছিলাম বিশ্ব ক্রমপর্যায়ের চার নম্বরকে। ফাইনালে আমার সামনে ছিল ১৩ নম্বর। আমার তো ক্রমপর্যায় সেখানে মাত্র ৫৮। ওদের এ ভাবে হারাব….. এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সবাই বলেছিল, খেলার সময় উল্টোদিকের প্রতিদ্বন্দ্বী কতটা শক্তিশালী সেটা মাথায় না রেখে খেলতে। বিশ্বাস করুন, একটা ঘোরের মধ্যেই ম্যাচটা খেললাম এবং জিতলাম।’’

ফাইনালে নামার আগে শান্ত থাকার জন্য গেমস ভিলেজে একই ঘরের সঙ্গী মৌমা দাসের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা অনুশীলন করেন মানিকা। আর চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট তুলে নেওয়ার পরে মানিকাকে দেখা গেল জাতীয় কোচ, ইতালির ম্যাসিমো কসট্যানটিনির বুকে মাথা রাখতে। সেই ম্যাসিমো, যাঁর হাতে পরে বদলে গিয়েছে এ দেশের টেবল টেনিস। মানিকাও।

তিন ভাই বোনের মধ্যে মানিকা সব চেয়ে ছোট। তাঁর দাদা সাহিল এবং দিদি আঁচলও টেবল টেনিস খেলতেন। আঁচল আবার দিল্লির হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। মানিকা বলছিলেন, ‘‘দিদিকে দেখেই ছোট বেলায় আমার টিটিতে আসা। হনস রাজ মডেল স্কুলে সন্দীপ গুপ্তা স্যরের কাছে অনুশীলন শুরু করি চার বছর বয়সে।’’

আকর্ষণীয় চেহারা ও উচ্চতার জন্য অন্তত চার বার তাঁকে মডেল হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু মানিকা ফিরিয়ে দেন সব প্রস্তাব। ঝড়ের গতিতে পয়েন্ট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার পর ‘মডেল’ প্রসঙ্গ তুলতেই লাজুক হাসেন মানিকা। এমনিতে খুব ধীরে এবং শান্ত ভাবে কথা বলেন। কেন মডেল হওয়ার মোহময় জগতে পা না দিয়ে টেবল টেনিস বেছে নিলেন? মানিকা বললেন, ‘‘মডেল হওয়ার ইচ্ছে হয়নি কখনও। তবে আমি সব সময়ই ভেবে এসেছি এমন একটা কিছু করব যাতে সবাই আমাকে চিনবে, জানবে।’’

শনিবারের পরে মানিকাকে নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই। আলোড়ন। দিল্লির বাড়িতে মিষ্টি বিলি করছেন বাবা-মা। তবে ডোপ পরীক্ষার পরে সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে এতটাই সময় চলে গিয়েছে যে, বাড়ির কারও সঙ্গে রাত পর্যন্ত কথা বলার সময় পাননি এ দেশের নবতম তারকা। এর পরের লক্ষ্য কী? দিল্লির মেয়ের জবাব, ‘‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। তারপর এশিয়াড।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Commonwealth Games 2018 Manika Batra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE