Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ছেলেদের সঙ্গে প্রস্তুতির ফল পেলেন সাইনা’

প্রাক্তন জাতীয় কোচ সৈয়দ মহম্মদ আরিফ বলছেন, ‘‘ওর সব চেয়ে যে জিনিসটা ভাল লেগেছে সেটা হল, মানসিক দৃঢ়তা। সাইনা যে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবে বলেই জন্মেছে, এই বিশ্বাসটা ওর খেলায় ফুটে ওঠে।

প্রত্যাবর্তন: সাইনার সামনে এ বার লক্ষ্য এশিয়ান গেমস। ফাইল চিত্র

প্রত্যাবর্তন: সাইনার সামনে এ বার লক্ষ্য এশিয়ান গেমস। ফাইল চিত্র

এন জগন্নাথ দাস
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৩
Share: Save:

আট বছর পরে দ্বিতীয় কমনওয়েলথ গেমসে সোনা। তাও কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার মতো একটা বড় চোট থেকে ফিরে এবং ফাইনালে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা সতীর্থ পি ভি সিন্ধুকে (বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং ৩) হারিয়ে। সাইনা নেহওয়ালের (বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং ১২) এই সাফল্যের প্রশংসায় মুখর দেশের ক্রীড়ামহল।

প্রাক্তন জাতীয় কোচ সৈয়দ মহম্মদ আরিফ বলছেন, ‘‘ওর সব চেয়ে যে জিনিসটা ভাল লেগেছে সেটা হল, মানসিক দৃঢ়তা। সাইনা যে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হবে বলেই জন্মেছে, এই বিশ্বাসটা ওর খেলায় ফুটে ওঠে। যে ভাবে ও লড়াই করে আবার বিশ্ব মঞ্চে খেতাব জিতেছে, সেটা দারুণ লেগেছে।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘কঠোর পরিশ্রম করাটা উপভোগ করে সাইনা। তা ছাড়া নিজেকে আরও উন্নত করার নিরন্তর প্রয়াস সাইনাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। অনেক ছোট থেকেই ওর আত্মবিশ্বাস ভীষণ মজবুত। আর একটা জিনিস ও প্রচণ্ড অপছন্দ করে। সেটা হল, হেরে যাওয়া।’’

কমনওয়েলথ গেমসে এই সাফল্য শুধু একা সাইনার নয়, তাঁর কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দেরও। প্রাক্তন জাতীয় কোচ বিমল কুমারের প্রশিক্ষণে দু’বছর থাকার পরে হায়দরাবাদে গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে ফিরেই সাইনা বিশ্বমঞ্চে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে নেমে পড়েন। হাঁটুর চোট কাটাতে আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দেন। পায়ের শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি কোর্টে পুরুষদের বিরুদ্ধে প্রচুর র‌্যালি অনুশীলন শুরু করেন। কমনওয়েলথ গেমসের খেতাব জয়ের অনেক আগে সাইনা বলেছিলেন, ভুলগুলো ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ‘‘প্রস্তুতি নিয়ে আমি খুশি। পায়ের চোটটা সারাতে যে রকম রিহ্যাব দরকার ছিল, সেটা পেয়েছি। তবে খুব শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে না খেললে, বুঝতে পারব না, কতটা প্রস্তুত।’’

সাইনা এও বলেছিলেন, কোর্টে নড়াচড়া আরও নিখুঁত করতে হবে তাঁকে। গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে ফিরে তাই সাইনা প্রথমেই তাঁর ক্ষিপ্রতা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের ওজন কমাতে পরিশ্রম শুরু করেন। সাইনার পুরো লক্ষ্যটাই তখন ছিল, নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া এবং রিহ্যাব। তার ফলটাও আমরা দেখেছি কমনওয়েলথে। সাইনাকে কোর্টে অনেক বেশি ক্ষিপ্র মনে হয়েছে। প্রতিপক্ষের কঠিন শট যে রকম বাঁচাতে পেরেছেন, সে রকমই, র‌্যালি নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন বিপক্ষের চেয়ে। সঙ্গে আরও ধারালো হয়েছে তাঁর নেট প্লে।

প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন অপর্ণা পোপাট বলছেন, ‘‘সাইনা জানে কী ভাবে জিততে হয়। এই প্রত্যাবর্তনের জন্য কম পরিশ্রম করেনি। ও তো এখন আর তরুণী নেই। তা ছাড়া সারা বছরই খেলে যেতে হয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। তাই ওর প্রধান লক্ষ্য ছিল শারীরিক সক্ষমতা আরও উন্নত করা। তবে আমার যেটা সব চেয়ে ভাল লেগেছে সেটা হল, ওর জেতার অদম্য খিদে। এটা খুব ভাল লক্ষণ। সিন্ধুর বিরুদ্ধে ও যে ভাবে খেলেছে, তাতে পুরনো সাইনার ঝলক স্পষ্ট ছিল।’’ অপর্ণা আরও মনে করেন, ভবিষ্যতে আরও সাইনা-সিন্ধু লড়াই দেখা যাবে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ‘‘সাইনা যদি গোল্ড কোস্টের মতো এ ভাবেই খেলে যাতে পারে, তা হলে ভবিষ্যতে আমরা আরও দারুণ লড়াই দেখতে পারব। কোর্টে সাইনাকে খুব স্বচ্ছন্দ লাগছে এখন। শারীরিক ভাবে অনেক বেশি সক্ষম। অবশ্যই এশিয়ান গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও কঠিন হবে। ওখানে লড়াইটা অনেক শক্ত।’’

এশিয়াডে লড়াইটা শক্ত হলেও আরিফ মনে করেন, এই সাইনা পরীক্ষার জন্য তৈরি। সে এশিয়ান গেমসে যত কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনেই পড়তে হোক না কেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE