বাগানে এখন ডাফির দাপট। শনিবার। -উৎপল সরকার
মোহনবাগান-৫ : এরিয়ান-১
(প্রবীর, ডাফি-হ্যাটট্রিক, আজহারউদ্দিন)
(কাজিম)
উল্টে দেখুন পাল্টে গেছে—কলকাতা লিগ শুরুর দিনে এটাই রিংটোন হতে পারে শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মোহনবাগানে।
কেন? চব্বিশ ঘণ্টা আগেও গঙ্গাপারের তাঁবুতে কর্তাদের মনোভাব ছিল— টিভি সত্ত্বের টাকা না পেলে কলকাতা লিগের প্রদর্শনী ম্যাচ বয়কট।
কিন্তু বাগান কর্তাদের সেই অটল মানসিকতা প্রায় একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলল স্যাটারডে নাইটে ডাফি-প্রবীর যুগলবন্দি দেখার পর। বাল্যবন্ধু বাগান সচিব অঞ্জন মিত্রের সঙ্গে ডাফির হ্যাটট্রিক দেখার পর ক্লাব সভাপতি টুটু বসু গ্যালারিতে হাজির বাগানের ‘শ্যাডো কোচ’ সঞ্জয় সেনকে বলে গেলেন, ‘‘দারুণ চনমনে সব ছেলেদের পেয়ে গিয়েছ।’’
তার চেয়েও বড় প্রতিক্রিয়াটা এল তার মিনিট দশেক পর। টিমের পাঁচ গোল দেখে বাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলেই ফেললেন, ‘‘টিভি সত্ত্বের টাকার সমানাধিকার চাই— এই দাবি নিয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলব না বলে প্রতিবাদ করছি। কিন্তু ফুটবলাররা এ রকম পারফরম্যান্স করতে থাকলে প্রতিবাদ সরিয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে বাধ্য হতে হবে আমাদের।’’
বহু দিন পর ময়দানে হাজির বর্ষায় কলকাতা লিগের সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ছবি। মাউন্টেড পুলিশের রক্তচক্ষু। টিকিটের জন্য সর্পিল লাইন। অফিস ফেরত সদস্য-সমর্থকদের খেলা দেখতে ভিড়। তাও আবার নৈশালোকে। নতুন সহস্রাব্দে প্রথম বার। দ্বিতীয়ার্ধে ডাফি যখন হ্যাটট্রিক করে দু’হাত প্রসারিত করে সবুজ গ্যালারির দিকে দিলেন ছুট তখন ফ্লাডলাইটের আলো ছাড়াও বাগান গ্যালারি আলোকিত সমর্থকদের মোবাইল ফ্ল্যাশে। যা সচরাচর দেখা যায় ইউরোপের ক্লাবগুলোর হোম ম্যাচে। টুইটারে যে ছবি দেখে খেলার মাঝেই মোহনবাগান মাঠের পরিবেশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা বেঙ্গালুরুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত।
আর বাগানে ভরসন্ধ্যায় যিনি হ্যাটট্রিকের প্রদীপ জ্বালিয়ে মরসুম শুরু করলেন সেই ড্যারেল ডাফি সমর্থকদের বীরপুজো সামলে ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে বললেন, ‘‘অভিষেকেই হ্যাটট্রিক এই প্রথম বার। দারুণ পরিবেশ।’’
স্কোরিং জোনে গোলের গন্ধ পান। শান্ত মাথা। ফিনিশিংটাও বেশ। ডাফির প্রথম দিনের পারফরম্যান্স দেখতে তাঁর পুরনো ক্লাবে এ দিন হাজির ছিলেন বাগানের প্রাক্তন বাঙালি গোলমেশিন শিশির ঘোষ। ডাফির মতোই প্রথম বার বাগান জার্সিতে হ্যাটট্রিক রয়েছে শিশিরের। স্কটিশ স্ট্রাইকারকে সম্পর্কে মোহনবাগানের বিখ্যাত ন’নম্বরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ফিটনেসটা বাড়লে ডাফি কিন্তু দাঁড়িয়ে যাবে।’’
ডাফি ম্যাচের সেরা হলেও এ দিন সারা ম্যাচ জ্বলজ্বল করলেন সোদপুরের বঙ্গসন্তান প্রবীর দাস। নিজে গোল করলেন। ডাফিকে দিয়ে হ্যাটট্রিকও করানোর কারিগরও তিনি। বল পায়ে বা বল ছাড়া গতিটা ভাল। একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে ড্রিবল করে ঢুকতে পারেন। ঠিকানা লেখা ক্রস বক্সে ফেলতে সিদ্ধহস্ত। ময়দানে আশির-নব্বইয়ের উইঙ্গার প্রণব মণ্ডল, উত্তম মুখোপাধ্যায়দের ছায়া দেখা গেল এ দিন তাঁর খেলায়। মরসুমে গোলের খাতা খুলে মাতৃভক্ত বঙ্গসন্তানের হুঙ্কার, ‘‘ মা-কে প্রণাম করে বলে এসেছিলাম আজ গোল করবই। কলকাতা লিগ আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।’’ শেষ আজহার ব্যবধান বাড়ালেও বাগান কিপারের অনুমান ক্ষমতার ভুলেই গোল হজম।
তা হলে ছ’বছর পর কি সমর্থকরা লিগের স্বপ্ন দেখতে পারেন? বাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও পোড় খাওয়া ঢঙে বলছেন, ‘‘দিল্লি বহুত দূর হ্যায়।’’
মোহনবাগান: অর্ণব, সার্থক, সঞ্জয়, রাজু, তন্ময় (চিন্তাচন্দ্র) প্রবীর (আমনদীপ) রবিনসন, পঙ্কজ, তপন, ডাফি (অজয়), আজহারউদ্দিন।
রবিবার কলকাতা লিগে
ইস্টবেঙ্গল : পিয়ারলেস
(কল্যাণী, ৩-৩০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy