Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রিওর ইচ্ছেপূরণ তৈবিচারা গ্রামের দুর্গা পুজো মন্ডপে

পিভি সিন্ধু বা সাক্ষী মালিকের মতো অলিম্পিক্স পদক পাননি তিনি। পদক না পাওয়া সত্ত্বেও দীপা কর্মকারের মতো সংবর্ধনায় তাঁকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়নি দেশে।

পাড়ার মন্ডপে দেবশ্রী মজুমদার। -নিজস্ব চিত্র

পাড়ার মন্ডপে দেবশ্রী মজুমদার। -নিজস্ব চিত্র

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

পিভি সিন্ধু বা সাক্ষী মালিকের মতো অলিম্পিক্স পদক পাননি তিনি।

পদক না পাওয়া সত্ত্বেও দীপা কর্মকারের মতো সংবর্ধনায় তাঁকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়নি দেশে।

রিওর গেমস ভিলেজে সিন্ধু-সাক্ষী-দীপাদের সঙ্গে একই ছাদের তলায় ছিলেন বারো দিন, ভারতীয় অ্যাথলটিক্স টিমের সদস্য হয়ে।

তিনি, দেবশ্রী মজুমদার কিন্তু অলিম্পিক্স-উত্তর এমন একটা কাজ করলেন, যা শুধু চমকপ্রদ নয়, মনে রাখার মতোও।

কখনও অলিম্পিক্সে নামার সুযোগ পেলে একটা দুর্গা প্রতিমা কিনে দেবেন নিজের গ্রামের পুজোয়, তিন বছর আগে শেষ বার অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার সময় মানত করেছিলেন বঙ্গতনয়া অ্যাথলিট। তাঁর সেই ইচ্ছেপূরণ হল এ বারের দুর্গাপুজোয়, তবে অদ্ভুত ভাবে।

অর্থের অভাবে নিজের গ্রামের পুজো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে রিও থেকেই ফোনে দুর্গা প্রতিমা কেনার ব্যবস্থা করেছিলেন দেবশ্রী। আর শুক্রবার মহাষষ্ঠীর বিকেলে দেশের অন্যতম সেরা এই অ্যাথলিট সল্টলেকের সাই থেকে অনুশীলন শেষে গ্রামে ফিরে প্রতিমা শিল্পীকে মিটিয়ে দিলেন দুর্গা ঠাকুর গড়ার টাকা। তার পর সাইকেল চালিয়ে সন্ধ্যেয় গেলেন তৈবিচারা স্কুল পাড়ার মাঠে। নিজের গ্রামের পুজো মণ্ডপে। ‘‘তিন বছর আগে শেষ বার যখন এই মণ্ডপে অষ্টমীর অঞ্জলি দিয়েছিলাম, মানত করেছিলাম যদি রিও অলিম্পিক্সে যাওয়ার সুযোগ পাই তা হলে একটা দুর্গা ঠাকুর কিনে দেব এখানকার পুজোয়,’’ এ দিন বললেন এশিয়াড রিলেতে সোনাজয়ী মেয়ে।

নদিয়ার বেথুয়াডহরি স্টেশন থেকে দেবশ্রীর গ্রাম তৈবিচারা প্রায় সাত কিলোমিটার। সেখানে পাশাপাশি দুটো গ্রাম পশ্চিমপাড়া আর উত্তরপাড়া।

কিন্তু একটাই দুর্গাপুজো নিয়ে মেতে থাকেন দুই গ্রামের প্রায় হাজার ছয়েক মানুষ। অর্থাভাবে সেই পুজোটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল এ বার।

‘‘আমি মানতের কথা কাউকে বলিনি। বাড়ির কেউও জানত না। ভেবেছিলাম কলকাতায় ফিরে গ্রামের সবাইকে আমার ইচ্ছেটা জানাব। কিন্তু দিদি যখন আমাকে রিওতে ফোন করে বলল যে, পুজোর সঙ্গে যুক্ত একজন কাকু এসে বলেছেন টাকার অভাবে এ বার পুজোটাই হবে না, নিজের মনের ইচ্ছেটা তখনই প্রকাশ করে ফেলেছিলাম। দিদিকে বললাম, আমার এটিএম কার্ড থেকে টাকা তুলে এখনই প্রতিমার বায়না করে দিতে। আজ গ্রামে ফিরে পুজো হচ্ছে দেখে এত ভাল লাগছে কী বলব!’’ শুক্রবার বলার সময় দেবশ্রীর গলায় রীতিমতো উচ্ছ্বাস।

রিওতে যাওয়া ছত্রিশ ভারতীয় অ্যাথলিটের কেউই পদক পাননি। রিলে দলের সদস্য হিসেবে দেবশ্রীও সফল নন। কিন্তু লক্ষ্য থেকে সরেননি তিনি। দীপার মতো টোকিওতে কিছু করতে চান তিনি। এখন দেবশ্রী ব্যস্ত এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপের প্রস্তুতি নিয়ে। কলকাতার সাইয়ে নিজেকে ফিট রাখার জন্য সুশান্ত সিংহের কাছে অনুশীলন করছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যাবেন পাতিয়ালা বা দিল্লির জাতীয় ক্যাম্পে। তার পর দেশ-বিদেশে নানা টুনার্মেন্টে। বেথুয়াডহরিতে এক পুজো কমিটির আমন্ত্রণে সংবর্ধনা নিতে যাওয়ার পথে ফোনে তৃপ্ত মেয়ে বললেন, ‘‘তিন বছর দুর্গাপুজোর সময় গ্রামে থাকতে পারিনি। অঞ্জলি দিতে পারিনি। তুরস্কে ছিলাম একবার। আর দু’বছর ছিলাম দেশের অলিম্পিক্স ক্যাম্পে। অনেক দিন পরে আবার আমার স্কুলের সামনের পুজো প্যান্ডেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারব। সারা বছর তো হয় শিবিরে না হয় টুর্নামেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকি। গ্রামে থাকা হয় না। এখানে আনন্দই আলাদা।’’

দেবশ্রী এ বার অঞ্জলি দেওয়ার পরে কি ফের নতুন কোনও মানত করবেন? প্রশ্ন শুনে পোল্যান্ড আন্তর্জাতিক মিটে ব্রোঞ্জজয়ী মেয়ের হাসতে হাসতে উত্তর, ‘‘মানতের কথা বলতে নেই। তবে আরও কিছু করার ইচ্ছে আছে। যেখানেই যাই, নিজের গ্রামকে ভুলি কী করে।’’

কয়েকশো অনুরোধ সরিয়ে রেখে পাঁচ বছর পর পুজোর সময় বাড়ি ফিরে দীপা কর্মকার যেমন আগরতলা ছেড়ে বেরোচ্ছেন না কোথাও, দেবশ্রীও তেমনই পুজোর চার দিন তৈবিচারায় থাকতে চান গ্রামের মাটির গন্ধ পেতে। দীপা-দেবশ্রীরা হিল্লি-দিল্লি যেখানেই যান, দুগ্গা মা যে বঙ্গতনয়াদের টেনে আনেন নিজের বাড়িতে। তা সে পাঁচ বা তিন বছর পরে যখনই হোক না কেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RIO Debasree Mazumder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE