গোল বাঁচিয়ে নায়ক দেবজিৎ। গোল করে হিউম।
দেবজিৎ মজুমদারের মতো চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়ার পরেও পর্দার আড়ালে থাকার লোক কি এটিকে-তে আর কেউ আছেন?
মিক্সড জোনে এসে সবাইকে এড়িয়ে টিম বাসে উঠে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন ম্যাচের নায়ক। কাধে কিটব্যাগ ঝোলানো। মুখে ক্লান্তির ছাপ। কারও সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছুক। অথচ দেবজিতের দুর্দান্ত কয়েকটা সেভ ছাড়া শনিবার তিন পয়েন্ট পেতে পারত না কলকাতা। রবীন্দ্র সরোবরকে আরও অপেক্ষা করতে হত ঘরের দলের প্রথম জয় দেখতে।
শেষমেশ সাংবাদিকরা জোর করায় কথা বলতে রাজি হলেন। আন্দাজ মতোই তাঁর গলায় ঔদ্ধত্যের বদলে সমীহ। ‘আমি’-র বদলে আমরা।
ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্সের পরে দেবজিৎ বলে দিলেন, ‘‘আমার একার জন্য কলকাতা জেতেনি। ফুটবল এগারো জনের খেলা। সবাইকে লড়াই করতে হয়। আজ গোটা দলই দারুণ খেলেছে। আমি সাহায্য করতে পেরে খুশি।’’
দেবজিতের এত ভাল পারফরম্যান্সের পিছনে রহস্য কী? নেপথ্যের নায়ক হিসেবে বেরিয়ে আসছে জোসে মলিনার নাম। ম্যাচের আগে যাঁর পেপটক দেবজিতকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বিপক্ষে যেই থাকুক না কেন, তাঁকে ক্লিনশিট রাখতেই হবে— এই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন দেবজিৎ। ‘‘কোচ আমাদের বলেছিলেন, তিন পয়েন্ট ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠ ছাড়তে নয়। জেতা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমারও তাই লক্ষ্য ছিল আজ যা কিছু করে বিপক্ষকে আটকাতেই হবে। দল তিন পয়েন্ট পাওয়ায় আমি সন্তুষ্ট,’’ বললেন মোহনবাগানের আইলিগ জয়ী গোলকিপার।
দিল্লি আক্রমণ রুখে দিলেন দেবজিৎ।
আইএসএলে এটা দেবজিতের দ্বিতীয় মরসুম। কিন্তু বঙ্গ কিপারের ধারাবাহিকতার সাক্ষী আগেই থেকেছে গোটা দেশ। মোহনবাগানের আই লিগ জয়ী মরসুমে একটার পর একটা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছিলেন দেবজিৎ। তাই একপ্রকার আশা ছিল, আইএসএলের মতো বড় মঞ্চেও আই লিগের সেই বিশ্বমানের গোলকিপারকেই দেখা যাবে। দেবজিতও কাউকে নিরাশ করেননি। হাসতে হাসতে বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি প্রতিটা ম্যাচেই নিজের সেরাটা দিতে চাই। আজও তাই করেছি।’’ পারফরম্যান্স কাকে উৎসর্গ করছেন? দেবজিতের জবাব, ‘‘আটলেটিকো সমর্থক, কর্তা ও পরিবারকে উৎসর্গ করছি।’’
আটলেটিকো দে কলকাতার গোলকিপারদের তালিকায় রয়েছেন দানি মাল্লো-ও। যাঁর সিভিতে রয়েছে পর্তুগিজ লিগ, লা লিগায় খেলার অভিজ্ঞতা। খেলেছেন উয়েফা কাপেও। কিন্তু দেবজিতের ধারাবাহিকতার কারণে সেই মাল্লো-ও আইএসএলে রিজার্ভে ঠাঁই পাচ্ছেন।
দুটো ড্রয়ের পরে তিন পয়েন্ট। রবীন্দ্র সরোবরে প্রথম জয়। লিগ টেবলের দু’নম্বরে। টেনশনের চোরাস্রোত কাটিয়ে কলকাতা ড্রেসিংরুমে যেন আবার বসন্ত। সাময়িক স্বস্তি ফেরানোর পিছনে দেবজিৎ ছাড়াও নায়ক ইয়ান হিউমও। মাথা ঠান্ডা করে যাঁর পেনাল্টি কলকাতাকে এক গোলে এগোতে সাহায্য করেছিল।
ঘাড়ে হেডফোন ঝুলিয়ে। হাতে জলের বোতল নিয়ে মিক্সড জোনে এলেন হিউম। ম্যাচের সেরা হিসেবে দেবজিতকে বাছতে একটুও দ্বিধাবোধ করলেন না। ‘‘হোয়াট রিফ্লেক্সেস! অসাধারণ কয়েকটা সেভ করল। দেবজিৎ দুর্দান্ত গোলকিপার। ওর রিফ্লেক্স হোক বা ডিস্ট্রিবিউশন, সব কিছুই দারুণ। জয়ের পিছনে অবশ্যই দেবজিৎ অন্যতম কারণ,’’ বলছেন হিউম।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মলিনারও তো সেই এক সুর। আটলেটিকোর কোচ একটা কথাতেই গোটা ম্যাচের নির্যাস দিয়ে দিলেন— ‘‘দেবজিৎ ইজ গ্রেট।’’
ছবি :উৎপল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy