এক সময় জুভেন্তাস জার্সিতে জুটি বেঁধে বিপক্ষ রক্ষণের ত্রাস হয়ে উঠতেন ওঁরা, দু’টো সেরি এ জিতেছেন, এক জন নির্দ্বিধায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার মঞ্চ ছেড়ে দিতেন আর এক জনকে। নিজে সেই দৌড়ে প্রবল ভাবে থাকা সত্ত্বেও।
আর ভারতে এসে ওঁদেরই কি না নামতে হচ্ছে মুখোমুখি যুদ্ধে! সেরি এ যা কখনও দেখেনি, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ তা দেখবে।
দেখবে আলেসান্দ্রো দেল পিয়োরো আর ডেভিড ত্রেজেগুয়েকে যুদ্ধে নামতে।
একসঙ্গে নয়। ভিন্ন দু’টো টিমের হয়ে। আজ ওঁরা শত্রু! দিল্লি ডায়নামোসের রক্ষাকর্তা আজ দেল পিয়েরো। এফসি পুণে সিটির ত্রেজেগুয়ে।
আর ত্রেজেগুয়ের বিরুদ্ধে খেলার অনুভূতিটা বোধহয় একটু বিব্রতই করছে দেল পিয়েরোকে। বলেও ফেলেছেন, “কত দিন আমরা জুভেন্তাসে খেলেছি। সেরি এ-র সেরা জুটিগুলোর একটা ছিলাম আমরা। এ বার ডেভিডের বিরুদ্ধে নামব। ব্যাপারটা অন্য রকম। তবে নামতে আমি প্রস্তুত।”
খেলবেন বলছেন, যুদ্ধে নামতে প্রস্তুত, সেটাও বলছেন। কিন্তু কত দূর ম্যাচে মন দিতে পারবেন, কে জানে। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও দেল পিয়েরো-বরণ যে ভাবে চলছে! ইতালির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমের স্ট্রাইকার নিজেও তাতে আচ্ছন্ন। বললেন, “দিল্লির খাবার আর ঘোরার জায়গাগুলো এত ভাল লাগছে, কী বলব! নেহরু স্টেডিয়ামে কাল দিল্লির সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কাম অন দিল্লি!”
ত্রেজেগুয়ে সম্পর্কে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও, তাঁকে হারাতে যে তিনি মরিয়া তা বোঝা যায় দেল পিয়েরোর কথা শুনলেই। বলে দেন, “আমাদের কম্বিনেশন খুব ভাল। ব্যালান্সড। দিল্লির বিরুদ্ধে সহজে কেউ জিততে পারবে না।” প্রাক্ মরসুম প্রস্তুতিতে মাত্র একটা ম্যাচ খেললেও চিন্তিত নন দেল পিয়েরো। বলছিলেন, “গত চার সপ্তাহ ধরে অনুশীলন করছি আমি। শুধু একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেও আমি তৈরি। কথা দিলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দলের জন্য লড়াই করব।”
আর একসময়ের বন্ধু সম্পর্কে কি বলছেন ত্রেজেগুয়ে? “না আমি ওকে নিয়ে কিছু বলব না। জুভেন্তাসে খেলার সময় ওর পাস থেকে যে কত গোল করেছি!” বলেছিলেন কয়েকদিন আগে। এ দিন পুণেতে সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে বন্ধু নিয়ে কোনও শব্দ উচ্চারণ করেননি পুণে স্ট্রাইকার। বরং বলেছেন, “ভারতীয় ফুটবল বিপ্লবের অংশ হতে পেরে গর্বিত লাগছে। আনেলকা এবং আমার মতো ফরাসি ফুটবলারদের কাছে এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। আশা করছি আমাদের টিম ভালই করবে।”
উল্টো দিকে দেল পিয়েরো আবার নিজের টিমকে ‘গাইড’ করতেও শুরু করে দিয়েছেন। দিল্লিতে হাল্কা অনুশীলনের পর আবার শৌভিক চক্রবর্তী, স্টিভন ডায়াসের মতো ভারতীয় ফুটবলারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলে দিয়েছেন, “আমাদের এই দলে ভারতীয় আর বিদেশিদের বোঝাপড়া খুব ভাল। ওরা পুরোপুরি চেষ্টা করছে আমাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।” আর ইতালীয় মহাতারকার সঙ্গে অনুশীলন করতে পেরে তাঁর এখনকার সতীর্থ শৌভিক অভিভূত। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে শৌভিক লিখেছেন, “অসাধারণ অভিজ্ঞতা। দেল পিয়েরোর সঙ্গে অনুশীলন করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। অনুশীলনে অনেক সময় কথা হয়। ও খুব সাহায্য করছে আমাদের।” তবে দেল পিয়েরো ছাড়াও দিল্লির ফরোয়ার্ড লাইনে আছেন দুই ডেনমার্ক স্ট্রাইকার ম্যাডস জুঙ্কার ও মার্টিন স্কুবো। দেল পিয়েরোর মতো ওঁরাও গোলটা চেনেন।
ঘটনা হল, দেল পিয়েরো-স্কুবোর মতো স্ট্রাইকার যদি দিল্লির হাতে থাকে তা হলে তা সামাল দেওয়ার মতো ভাল রক্ষণও আছে পুণের। ব্রুনো সিরিলোর মতো ইতালীয় ডিফেন্ডার রয়েছেন টিমে। এ ছাড়াও আছেন কোস্তাস কাতসুরানিস। গ্রিসের এই ডিফেন্ডার এ বারের আইএসএলের একমাত্র ফুটবলার যিনি সদ্য ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলেছেন। পুণের ফরোয়ার্ড লাইনও কম শক্তিশালীমনে করার কারণ নেই। ইস্টবেঙ্গলের গোলমেশিন ডুডু ওমাগবেমী আছেন। যিনি হয়তো শুরুও করবেন ত্রেজেগুয়ের সঙ্গে। জোয়াকিম আব্রাঞ্চেস অনিশ্চিত চোটের জন্য।
তবে কে থাকলেন না থাকলেন, সে সব আর ম্যাচের আবহে পাত্তা পাচ্ছে না। যাঁদের থাকা দরকার, যাঁদের জন্য মাঠে ভিড় জমবে, তাঁরা তো আছেন।
দেল পিয়েরো বনাম ত্রেজেগুয়েএর বাইরে আর কোনও ক্যাচলাইন হয় নাকি?
মঙ্গলবারে আইএসএল
দিল্লি ডায়নামোস: এফসি পুণে সিটি (দিল্লি ৭-০০)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy