অভিযুক্ত কুস্তি কর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বাড়িতে মঙ্গলবার হানা দিল দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্ত কুস্তি কর্তার উত্তরপ্রদেশের বাড়িতে ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করল তারা। দীর্ঘ দিন ধরেই ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন কুস্তিগিরেরা। সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ারা এফআইআর করেছিলেন। কিন্তু দিল্লি পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল যে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পায়নি তারা।
পুলিশ যে ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তাঁদের মধ্যে ব্রিজভূষণ রয়েছেন কি না তা জানা যায়নি। ব্রিজভূষণ নিজে বাড়িতে ছিলেন কি না তা-ও জানা যায়নি। যাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে, তাঁদের নাম, ঠিকানা এবং পরিচয়পত্র নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। প্রমাণ হিসাবে এই তথ্য নিয়েছে তারা। ব্রিজভূষণের পাশে দাঁড়ানো বিভিন্ন মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত মোট ১৩৭ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষী, বজরংদের অভিযোগ, মহিলা কুস্তিগিরদের উপর যৌন নির্যাতন করতেন ব্রিজভূষণ। যা অস্বীকার করেছেন কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর নিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। দু’টি এফআইআরে মোট ১০টি নিগ্রহের ঘটনার উল্লেখ করেছেন সাক্ষী, বজরংরা। সেখানে নির্দিষ্ট করে বলা আছে কোথায়, কখন, কাকে নিগ্রহ করেছেন ব্রিজভূষণ। সেখানে নাবালিকাকে নিগ্রহের অভিযোগও রয়েছে। তাঁরা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে বক্তব্যও রেখেছেন। সেগুলিও এফআইআরে উল্লেখ করা রয়েছে।
২৮ এপ্রিল দিল্লি পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্রিজভূষণ মেয়েদের নিগ্রহ করেছেন। বিনিময়ে বাড়তি সুবিধা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। তিনি মেয়েদের শরীর অস্বস্তিকর ভাবে ছুঁয়েছেন বলে এফআইআরে লেখা হয়েছে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ৩৫৪, ৩৫৪এ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একটি এফআইআরে বলা হয়েছে ছ’জন প্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগিরের কথা। দ্বিতীয়টিতে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগিরের বাবা অভিযোগ করেছেন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে।
এক কুস্তিগির জানান, তাঁর কাছে ফোন ছিল না। পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার নাম করে অভিযোগকারী কুস্তিগিরকে ঘরে ডাকেন ব্রিজভূষণ। ফোন দেওয়ার নাম করে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন অভিযুক্ত কর্তা। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই কুস্তিগির। তিনি বলেন, “ওই ঘটনার পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ভুলতে পারছিলাম না। আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরা হয়। নিজের ফোন নম্বর বদলাতে বাধ্য হই।”
সাক্ষীরা দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে ধর্না দিচ্ছিলেন। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিনে সেই দিকে যাচ্ছিলেন কুস্তিগিরেরা। সেই সময় দিল্লি পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। জোর করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কুস্তিগিরদের। ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দল কুস্তিগিরদের সমর্থন করেন। কপিলেরা বলেন, “আমাদের দেশের কুস্তিগিরদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখে আমরা মর্মাহত। বহু কষ্টে অর্জিত পদক গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার যে ভাবনা কুস্তিগিরদের মধ্যে এসেছে সেটা দেখে আমরা চিন্তিত। বহু দিনের পরিশ্রমের পর পদক জিতেছে তারা। অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে এই পদক পেতে। আমরা অনুরোধ করব এমন কোনও বড় পদক্ষেপ যেন তারা না করে। আশা করব খুব তাড়াতাড়ি বিচার পাবে কুস্তিগিরেরা। দেশের আইনের উপর ভরসা রাখুক তারা।” এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন রজার বিন্নী। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বলেন, “কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে আমি কোনও রকম বার্তা দিইনি। বিশ্বাস করি যে আধিকারিকেরা কাজ করছেন এই সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্যে। খেলার সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলা উচিত নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy