Advertisement
E-Paper

লিলির প্রশংসা জীবনের সঞ্চয় সঞ্জীবের

শুক্রবার টিভিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে দেখতে দু’যুগ আগের একটি দিনে ফিরে গেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে মূক ও বধিরদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে সেরা বোলারের ট্রফি তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁর হাতে।

প্রাণময় ব্রহ্মচারী

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০২:১০
অজয় জাডেজার সঙ্গে (মাঝে)। পাকিস্তানের এক মূক ও বধির ক্রিকেটারের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

অজয় জাডেজার সঙ্গে (মাঝে)। পাকিস্তানের এক মূক ও বধির ক্রিকেটারের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

ক্রিকেট থেকে তাঁর ‘প্রাপ্তি’ অনেক। নামী ক্রিকেটারদের প্রশংসা। দর্শকের ভালবাসা। এমনকি, আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সেরা বোলার হওয়ার সম্মানও তিনি পেয়েছেন। কিন্তু ২২ গজ কাঁপানোর পরেও একটা চাকরি জোটাতে পারেননি মূক ও বধিরদের ক্রিকেটে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা সঞ্জীব পাল। অভিমানে একসময় ক্রিকেট কিট তুলে রেখেছিলেন। কিন্তু বেশিদিন ২২ গজের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারেননি। সম্প্রতি ফের বল হাতে মাঠে নেমে পড়েছেন তিনি।

শুক্রবার টিভিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে দেখতে দু’যুগ আগের একটি দিনে ফিরে গেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে মূক ও বধিরদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে সেরা বোলারের ট্রফি তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁর হাতে। হাসি হাসি মুখে তা নিচ্ছেন সঞ্জীব। সঞ্জীবের দাদা সঞ্জয় পাল জানালেন, ১৯৯৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলবোর্নে মূক ও বধিরদের বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিলেন তাঁর ভাই। ভারতীয় দলে এ রাজ্য থেকে সঞ্জীব ছাড়াও দমদমের বাসিন্দা অনুপ চক্রবর্তী জায়গা পেয়েছিলেন। ছেলে যাতে বিদেশে খেলতে যেতে পারে, সেই জন্য সঞ্জীবের বাড়ির লোক কয়েক হাজার টাকা ধার করে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। সঞ্জীবের মা অঞ্জলি পাল বলছিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া থেকে ছেলে ফেরার পর রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে মন্ত্রী— অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ছেলের চাকরি হবে। কিন্তু কই কিছুই তো হল না। ছেলে আইটিআই থেকে ডিপ্লোমাও করেছে। একটা চাকরি কি ওর পাওয়া উচিত ছিল না?’’

তাঁর জেলা থেকে কয়েকজন প্রাক্তন ক্রীড়াবিদকে সরকারি চাকরি পেতে দেখেছেন সঞ্জীব। ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপে ভাল ফল করার পর তাঁর কপালেও অন্তত একটা সরকারি চাকরি জুটবে। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও চাকরি না পেয়ে হতাশায় ডুবে যান তিনি। বছর চারেক আগে ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিমানে। পৈত্রিক সোনার গয়না তৈরির ব্যবসা দেখাশোনা করতে শুরু করেন। তবে বাড়ির লোক বিস্তর বোঝানোর পর সম্প্রতি ফের বল হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি। সঞ্জীবের স্ত্রী অনুরাধা এদিন বললেন, ‘‘মনের দুঃখে ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন উনি। আমরা অনেক বোঝাই। শেষ পর্যন্ত রাজি হন।’’

ট্রফির মাঝে সঞ্জীব।

ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্ন করতেই চোখমুখ চকচক করে উঠল সঞ্জীবের। হাতের ইশারায় পুরনো অ্যালবাম খুলে অনেক ছবি দেখালেন তিনি। অনুরাধা জানালেন, অস্ট্রেলিয়ায় সঞ্জীবের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন দুই কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ডেনিস লিলি এবং শ্যেন ওয়ার্ন। বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন সদস্য অজয় জাডেজার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সঞ্জীব। কপিল দেবের অন্ধ অনুরাগী এই মিডিয়াম পেসার বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে ৪৫ রানের বিনিময়ে ছ’টি উইকেট নিয়েছিলেন। সেরা বোলারও নির্বাচিত হন। ওই বিশ্বকাপে ভারত সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিল। তবে সঞ্জীবের পারফরম্যান্স সকলের নজর কাড়ে। দেশে ফিরে সংবর্ধনার বন্যা বয়ে গিয়েছিল সঞ্জীবদের। শুধু সরকারি চাকরিই জোটেনি। তবে লড়াইও ছাড়েননি ৪৫ বছরের সঞ্জীব। ২২ গজের প্রতি ভালবাসাকে উপেক্ষা করেনই বা কি করে! তাই ফের মাঠে নেমে পড়েছেন তিনি।

Cricket Dennis Lillee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy