ডার্বির পর এ বার মিনি ডার্বি করা নিয়েও ঝামেলায় পড়েছে আইএফএ। কবে ম্যাচের জন্য পুলিশ পাওয়া যাবে তা নিয়েই ডামাডোল। সব মিলিয়ে কলকাতা লিগ শেষ করতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা রাজ্য ফুটবল সংস্থার। পুলিশ আর বড় ক্লাবেদের নানা বাহানা সরিয়ে কবে লিগ শেষ হবে কেউ জানে না।
রবিবার কল্যাণীতে ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচ রয়েছে। ইদের কারণ দেখিয়ে পুলিশ এই ম্যাচটি করার অনুমতি দিতে চাইছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে আইএফএ-কে। রাজ্য ফুটবল সংস্থার সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য ম্যাচটি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ম্যাচটি করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ফের পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন। উৎপলবাবু বললেন, ‘‘ইদ ১৩ সেপ্টেম্বর। তার জন্য ১১ তারিখ পুলিশ ম্যাচ করাতে রাজি হচ্ছে না। অনুরোধ জানিয়ে আমি আরও একটি চিঠি পাঠিয়েছি। বলেছি, এই ম্যাচটা না হলে লিগের সূচি এলোমেলো হয়ে যাবে। শুক্রবারের মধ্যে আশা করছি পজিটিভ কিছু জানতে পারব।’’ এ দিকে পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে মোহনবাগান। আইএফএ বুধবারের ডার্বি পিছোতে রাজি না হওয়ায় ডাফি-বিদেমিরা মাঠে নামেননি। ওয়াকওভার পেয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এখন মিনি ডার্বির তারিখ বদলালে সবুজ-মেরুন কর্তারা ফের আক্রমণ করতে শুরু করবেন রাজ্য সংস্থার কর্তাদের। চক্রান্তের তত্ত্ব সামনে এনে। প্রশ্ন তুলবেন, এ বার কী ভাবে ম্যাচের তারিখ বদলানো হল?
ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচ নিয়ে সমস্যা থাকলেও, ১০ সেপ্টেম্বরের মোহনবাগান-আর্মি একাদশ ম্যাচকে ঘিরে কোনও জটিলতা নেই। বাগান সেই ম্যাচ খেলবে। এমনকী একদিন ছুটির পর, বৃহস্পতিবার সকালে সেই ম্যাচের প্রস্তুতিতে নেমে পড়লেন ডাফি-বিদেমিরা। তবে সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা মুখে কিছু না বললেও ডার্বি খেলতে না পারার একটা হতাশা তাঁদের রয়েছেই। আসলে কলকাতা লিগের প্রথম একাদশের বেশির ভাগ ফুটবলারই আই লিগের ডার্বি খেলার সুযোগ পাবেন না।
এ দিন সকালে বাগান প্র্যাকটিসে হাজির হন সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু এবং অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত। অনুশীলনের পর তারা ফুটবলারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সূত্রের খবর, সেই সভায় ফুটবলারদের তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, কেন ডার্বি খেলতে বাগান রাজি হয়নি! সেখানে দুই কর্তা ফুটবলারদের সামনে আইএফএ-কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কর্তাদের যুক্তি কতটা ফুটবলাররা বুঝলেন সেটা অবশ্য বোঝা যায়নি। তবে সভা থেকে বেরিয়ে ডাফি হতাশা লুকিয়ে বলে যান, ‘‘ডার্বি খেলতে পারলে ভাল লাগত। তবে আমার মনে হয়, কর্তারা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা একেবারে সঠিক।’’
মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী, যাঁর ‘কল্যাণীতে অনুশীলন করতে পারিনি’-র যুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, কর্তারা ডার্বি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনিও বললেন, ‘‘যে সমস্ত প্রাক্তন ফুটবলার আমাদের না খেলার সমালোচনা করছেন, তারাও জানেন একেবারে নতুন মাঠে খেলতে গেলে কী সমস্যায় পড়তে হয়। কর্তারা যে প্রতিবাদ করেছেন, সেটা একেবারে সঠিক কাজ করেছেন।’’
ডার্বি না খেলায় মোহনবাগান লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই থেকে এক ধাক্কায় অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। বলা যায়, বাগান কর্তাদের অনড় মনোভাবই ইস্টবেঙ্গলের টানা সাত বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। বিশেষত বৃহস্পতিবার মহমেডান-ইউনাইটেড ম্যাচ ড্র হয়ে যাওয়ায় লাল-হলুদের লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা। আইএফএ-র নিয়মানুযায়ী, লিগ সাব কমিটির সভায় ডার্বি না খেলার জন্য যদি বাগানের অতিরিক্ত দু’ পয়েন্ট কাটা যায়, তবে লাল-হলুদ বাকি দুই ম্যাচ থেকে কোনও পয়েন্ট না পেলেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। শনি বা সোমবার লিগ সাব কমিটির সভা হতে পারে। রেফারি ও ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট এ দিন এসে গিয়েছে আইএফএ-তে। ইস্টবেঙ্গল যখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে, ঠিক এই পরিস্থিতিতে শনিবার আর্মির বিরুদ্ধে কী লক্ষ্য নিয়ে ডাফিরা ম্যাচ খেলতে নামবেন? শঙ্কর বললেন, ‘‘জেতার লক্ষ্যে আমরা খেলি। সেই লক্ষ্য নিয়েই নামব। আইএফএ কী করল সেটা দেখা আমাদের কাজ নয়।’’ এ ছাড়া কী-ই বা তাঁরা বলতে পারেন।