Advertisement
E-Paper

নাদাল ছাড়াই ভারতের ‘ডেলি বেলি’

ভারতের ডেভিস কাপ ম্যাচ শুরু হতে তখন ঘণ্টাখানেক বাকি। অনিল খন্নাকে দেখা গেল ডিএলটিএ-র বাইরে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৭
কোর্টের বাইরের ডেভিস কাপ। নাদাল বনাম লিয়েন্ডার টিম তাতানোর ম্যাচ কিন্তু ড্র। ছবি: উৎপল সরকার।

কোর্টের বাইরের ডেভিস কাপ। নাদাল বনাম লিয়েন্ডার টিম তাতানোর ম্যাচ কিন্তু ড্র। ছবি: উৎপল সরকার।

ভারতের ডেভিস কাপ ম্যাচ শুরু হতে তখন ঘণ্টাখানেক বাকি। অনিল খন্নাকে দেখা গেল ডিএলটিএ-র বাইরে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।

এ যেন ইডেনে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে আর জগমোহন ডালমিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছেন ময়দানের বটতলায়!

ডালমিয়া না হোন, ভারতীয় টেনিস প্রশাসনে তাঁর প্রায় কাছাকাছি অনিল খন্না। এআইটিএ-র আজীবন প্রেসিডেন্ট, এশিয়ান টেনিস ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট, আইটিএফের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট। যে স্টেডিয়ামে রাফায়েল নাদালের স্পেনের বিরুদ্ধে আজ তিন দিনের লড়াইয়ে ভারত নামল সেটা অনিলের বাবার তৈরি। নামও আর কে খন্না স্টেডিয়াম।

কিন্তু টাইয়ের আগে যত গোল তো নাদাল নিয়েই! অনিল পরিচিত সাংবাদিক দেখে বলে ফেললেন, ‘‘দেখছি নাদাল খেলছে না জেনে ক’জন আসে। গেট কিন্তু খোলা।’’

• রামকুমার রামনাথনকে ৬-৪, ৬-৪, ৩-৬, ৬-১ হারালেন ফেলিসিয়ানো লোপেজ।

• সাকেত মিনেনিকে ৬-১, ৬-২, ৬-১ উড়িয়ে দিলেন দাভিদ ফেরার।

নাদাল এআইটিএর মুখ না রাখলেও নাদাল-ভক্তরা রাখলেন। কোর্টের ভেতরে র‌্যাকেট হাতে দেখার জায়গায় নাদালের কোর্টের ধারে বসে থাকা দেখতেও খন্না স্টেডিয়াম বিকেল পাঁচটায় প্রায় ভর্তি। মাঝ সেপ্টেম্বরের দিল্লির রোদের তেজে ওই সময়ও গা পুড়ে যাওয়ার জোগাড়, তাও! বরং রাত আটটার নরম আবহাওয়ায় বিশ্বের তেরো নম্বর দাভিদ ফেরার বনাম ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস প্লেয়ার সাকেত মিনেনির দ্বিতীয় রাবারের সময় স্টেডিয়াম অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গেল।

নাদালকে বিশ্রাম দিয়েও স্পেনের প্রথম দিনে ২-০ এগিয়ে যেতে অসুবিধে হওয়ার কথা ছিল না। অসুবিধে হয়ওনি। বরং অভাবিত ভাবে নাদালের পাশাপাশি এ দিন বারবার নাম উঠে এল বি‌শ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০৩ নম্বর রামকুমার রামনাথনের! চেন্নাই যুবকের নামের শেষ অংশটা স্টেডিয়ামে হাজির প্রাক্তন ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের আক্ষেপ যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। আহা! চেন্নাইয়ের আর এক রামনাথন যদি আজ কোর্টে থাকত। নাদালের অনুপস্থিতির সুযোগ কি ভারত ছেড়ে দিত? প্রথম সিঙ্গলসে স্পেনের প্রতিনিধি ফেলিসিয়ানো লোপেজ যতই নাদালের আগে থেকে ডেভিস কাপ খেলুন, যতই এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্লেয়ার হোন, যতই নাদালেরও আগে উইম্বলডনের শেষ আটে উঠুন, তিনি তো আর রাফায়েল নাদাল নন!

সেই লোপেজের বিরুদ্ধে যথেষ্ট লড়াই দিয়ে রামকুমার রামনাথন ৪-৬, ৪-৬, ৬-৩, ১-৬ হারার পরে ফোনে ভারতীয় টেনিসের সর্বকালের সেরা সিঙ্গলস প্লেয়ার রামনাথন কৃষ্ণনকে ফোনে ধরতে অসুস্থ রামনাথন বললেন, টিভিতে খেলা দেখেননি। বেশি টিভি দেখলে চোখ ব্যথা করে এখন। রামকুমারের ম্যাচের স্কোরলাইন জেনে বললেন, ‘‘ছেলেটা তৃতীয়র জায়গায় দ্বিতীয় গেমটা জিতে ১-১ করতে পারলে বোধহয় ভাল হত। দিল্লির গরমে বড় ম্যাচ পাঁচ সেট খেলার মতো স্ট্যামিনা এখনও ওর হয়তো আসেনি। বিদেশে আরও ভাল ভাল টুর্নামেন্ট খেললে, অভিজ্ঞতা বা়ড়লে নিশ্চয়ই পারবে। আর আমার নামের সঙ্গে মিল আছে বলেই ওকে তুলনায় আনাটা ভাল নয়। অল্প বয়স। আরও চাপে পড়ে যাবে। যথেষ্ট লড়েছে।’’

কিন্তু সাধারণ টেনিসপ্রেমী সে সব শুনলে তো! প্রথমে তো এ দিন বেলাতেও প্র্যাকটিস করার পর নাদাল অসুস্থতার জন্য সিঙ্গলস থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর অনেকে গুজব ভাবছিলেন। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় সস্ত্রীক ডিএলটিএর গেস্ট হাউসে থেকেও বললেন, ‘‘সে কী, নাদালই খেলছে না?’’ ভারতীয় দলের কোচ জিশান আলির বাবা আখতারও অবাক, ‘‘হঠাৎ কী হল নাদালের?’’ ছেলে লিয়েন্ডারের সঙ্গে টিম হোটেলে উঠেও ডাক্তার ভেস পেজ বললেন, ‘‘অসুস্থতাটা ঠিক কী জানেন?’’

লোপেজ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে দায়সারা ভাবে বলে গেলেন, ‘‘রাফার পুরনো কব্জির ব্যাথা পুরো সারেনি। আন্দাজ করেছিলাম, আজ সিঙ্গলসে নামতে হতে পারে আমাকে।’’ কিন্তু এআইটিএ আবার এটাকে ‘আন্দাজ’-এর বেশি ধরছে না। তাদের কাছে খবর, নাদালের অসুস্থতার নাম ‘ডেলি বেলি’! মানে গরমে হঠাৎ যে পেটের গোলমাল বাধে দিল্লিবাসীর, সেটাই। নাদালের দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন কনচিতা মার্টিনেজ আবার বললেন, ‘‘কব্জি-পেট, দু’টো সমস্যাই।’’ সব মিলিয়ে ঘাঁটা পরিস্থিতি নাদালকে নিয়ে!

অন্য সময় হলে এ সবের পরেও নাদাল হয়তো খেলে দিতেন। কিন্তু সামনে এটিপি ট্যুরে অনেক টুর্নামেন্ট। যেখানে ভাল পারফর্ম করে বছরশেষের এটিপি ট্যুর ফাইনালসে বিশ্বের প্রথম আট প্লেয়ার হিসেবে খেলাকে পাখির চোখ করেছেন নাদাল। হয়তো কাল ডাবলস খেলে দেবেন। বিশেষ করে আজ চার সেটের সিঙ্গলস ম্যাচ খেলেই গরমে যে রকম কাহিল হয়ে পড়লেন ফেলিসিয়ানো লোপেজ। কিন্তু আজ কিছুতেই নয়!

এবং সেই সুযোগ নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট কাজে লাগিয়েছেন রামকুমার। প্রথম দু’টো সেটে একটা করে মাত্র সার্ভিস নষ্ট করেন। তৃতীয় সেট তো কেড়েই নিলেন। তার মধ্যেই একবার ‘টয়লেট ব্রেক’, আর একবার ‘মেডিক্যাল টা‌ইম আউট’ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল রামকুমারের। বয়স কম হলেও এই এক সমস্যা রামকুমার বা সাকেতের। শারীরিক ক্ষমতা, পায়ের জোরের অভাব। চণ্ডীগড়ে আগের কোরিয়া টাইয়ে দু’জনই পাঁচ সেটে জিততে এমন ক্র্যাম্প ধরিয়ে বসেন যে, রিভার্স সিঙ্গলসে নামতে পারেননি। আজও যখন ম্যাচ একটু গড়ানোর পর থেকেই লোপেজর গরমে ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা, নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন প্রতি সার্ভিস-কোর্ট ব্রেকে তাঁর চোখমুখ বরফ জলে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুছে দিচ্ছেন, এনার্জি বিস্কুটের টুকরো মুখে ভরে দিচ্ছেন, তখন বিপক্ষ রামকুমার আর একটু বেশি তাগড়াই আর স্ট্যামিনা-বান হলে ম্যাচ হয়তো পাঁচ সেট টেনে নিয়ে গিয়ে শেষমেশ জিতেও যেতে পারতেন। কিন্তু উল্টে নিজেই খানিকটা বেদম হয়ে পড়ে চতুর্থ সেটে ১-৬ হারতেই সব আশা-দুরাশা শেষ ‘জিতেগা ভাই জিতেগা’ কোরাসে ভরপুর গ্যালারির।

তার পর দ্বিতীয় সিঙ্গলসে তো এক দিকের প্রায় ফাঁকা গ্যালারিতে ‘ভামোস টেনিস’ লেখা স্পেনের জাতীয় পতাকাই যেন প্রতীকী। সাকেতকে গোটা ম্যাচে মাত্র চারটে গেম দিয়ে ঘণ্টাদেড়েকে উড়িয়ে দিলেন ফেরার। ১-৬, ২-৬, ১-৬। যার পর কোর্টের ধারে পাশাপাশি বসা লিয়েন্ডার-জিশানকে ফিসফিস করতে দেখা গেল কয়েক মুহূর্ত।

সাকেতের হাল দেখে জিশানকে কি বাইশ বছর আগে এখানেই সেই জিম কুরিয়ার ম্যাচের কথা মনে করাচ্ছিলেন লিয়েন্ডার? যতই এই টিমে দু’জনের পরিচয় কোচ আর প্লেয়ারের হোক, কলকাতার বহু পুরনো বন্ধু তো দু’জনে!

nadal leander paes davis cup
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy