Advertisement
E-Paper

কটকে জয়ের সঙ্গে ফিরল মাহি-ম্যাজিক

আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনা হল। চার নম্বরেই যে তাঁকে নামানোর ভাবনা চলছে, সেটা বুধবারের আনন্দবাজারেই লেখা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটা রবি শাস্ত্রীর টিম ম্যানেজমেন্টের মাস্টারস্ট্রোক হয়ে থাকল।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৪
বিধ্বংসী: বুধবার কটকে সেই চেনা মেজাজে দেখা গেল ধোনিকে। ভারত সিরিজে এগোল ১-০। ছবি: পিটিআই

বিধ্বংসী: বুধবার কটকে সেই চেনা মেজাজে দেখা গেল ধোনিকে। ভারত সিরিজে এগোল ১-০। ছবি: পিটিআই

চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২২ বলে ৩৯ অপরাজিত। চারটি চার, শেষ বলে স্কোয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা। তার পরেও বিন্দুমাত্র ক্লান্ত না হয়ে যখন বরাবাটির গর্জনের মধ্যে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের দিকে ছুটছিলেন তিনি, মনে হচ্ছিল, পূবের আকাশে ফের কি তাহলে উদিত হল এমএসডি?

পুরনো সেই সূর্যকিরণ ফিরল কি না, তা বলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কয়েকটি প্রশ্ন সাময়িক ভাবে অন্তত উড়ে গেল। যেমন, সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলার মতো ফিটনেস এবং শক্তি কোনওটাই যে ছত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হারাননি, সেটা বোঝা গেল। বিশাখাপত্তনমে ওয়ান ডে ম্যাচের আগে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে তিনি ১২ বছরের ছোট, তরুণ তুর্কি হার্দিক পাণ্ড্য-কে হারিয়েছিলেন।

এ দিন ইনিংসের শেষ বলে থিসারা পেরেরার ইয়র্কারকে ফুলটস বানিয়ে চামচের মতো স্কোয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারা দেখে মণীশ পাণ্ডে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। হার্দিক ১২ বছরের ছোট, শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটার মণীশের সঙ্গে ধোনির বয়সের ব্যবধান ৮ বছরের। অনুজদের বিস্মিত হওয়ার পালা যেন চলছেই। রাঁচীর সেই ডানপিটে ছেলেটাকে নিয়ে তৈরি স্লোগানটাও ফিরে এসেছিল বরাবাটিতে— মাহি মার রহা হ্যায়!

আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনা হল। চার নম্বরেই যে তাঁকে নামানোর ভাবনা চলছে, সেটা বুধবারের আনন্দবাজারেই লেখা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটা রবি শাস্ত্রীর টিম ম্যানেজমেন্টের মাস্টারস্ট্রোক হয়ে থাকল। ধোনির সাম্প্রতিক আলো-আঁধারি ফর্ম দেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ম্যানেজমেন্ট। দেখা যাচ্ছে, ধোনি রান করতে অনেক বেশি বল নিয়ে ফেলছেন। ডট বল বেশি খেলছেন। তাই উপরে তুলে এনে আরও বেশি সময় দেওয়া হল তাঁকে।

আরও পড়ুন: কিংবদন্তিদের তালিকায় সেরা পাঁচের মধ্যে কোহালি, ধোনি

প্রথম পরীক্ষায় অন্তত সসম্মানে পাশ করে গিয়েছেন ধোনি। তিনি যখন নামলেন, ভারত ১০১-২। রোহিত শর্মাকে ফের আউট করলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। এই নিয়ে দশ বার রোহিতের উইকেট নিলেন ম্যাথিউজ। ওয়ান ডে-তে তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি করা লোকের উইকেট দুষ্প্রাপ্য। ম্যাথিউজের মতো অনিয়মিত বোলারের সেটা পাওয়া প্রমাণ করে ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। সচিন তেন্ডুলকরের কাছে যেমন গ্লেন ম্যাকগ্রা নয়, সবচেয়ে আতঙ্কের বোলার ছিলেন হ্যান্সি ক্রোনিয়ে!

শ্রেয়স আইয়ার আউট হয়ে গেলেন। ওভার সংখ্যা ১২.৪। ধোনিকে এর আগে এক বার প্যাড পরা অবস্থায় জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখিয়েছে। কে এল রাহুল তখন এলবিডব্লিউ হয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। মাঠের আম্পায়ার আউট দিয়ে দিয়েছিলেন। ডিআরএস নিতে দেখা গেল বল লেগস্টাম্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন উঠে দাঁড়িয়ে তৈরি হয়ে ছিলেন ধোনি। সেটা দেখেই গ্যালারি এমন চিৎকার করে উঠল যে, মনে হচ্ছিল, আইপিএলের সেই বিখ্যাত ধ্বনি আর ধুকপুকানির পরে রাহুলকে যদি আউট দিয়েও দেওয়া হয়, কেউ দুঃখ পাবে না।

শ্রেয়স আউট হওয়ার পরে ধোনি নামলেন এবং শেষ দিকটায় ব্যাটিংকে তিনিই নেতৃত্ব দিলেন। ভারত শেষ করল ২০ ওভারে ১৮০-৩ নিয়ে। বরাবাটির বাইশ গজে স্পঞ্জি বাউন্স ছিল, ম্যাচের পরে বলে গেলেন কে এল রাহুল। যিনি একদিনের দল থেকে বাদ পড়ে এখানে ৪৮ বলে ৬১ করে নিজের দাবি জোরাল করে রাখলেন। পিচ নিয়ে যে আশঙ্কা ছিল, সেটা একেবারে অমূলক নয় বোঝাই গেল। রোহিত শর্মা টস হেরে বলে গেলেন, উইকেটের চরিত্র নিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত নন। এ সব মাথায় রাখলে ধোনির ১৭৭ স্ট্রাইক রেট বেশ ভাল। বিশেষ করে যখন সাম্প্রতিককালে স্ট্রাইক রেট নিয়েই বারবার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। আট বছরের ছোট মণীশেরও স্ট্রাইক রেট ১৭৭। তাঁর অবদান ১৮ বলে ৩২ অপরাজিত।

শুধু ব্যাট হাতেই নয়, এর পর শ্রীলঙ্কা রান তাড়া করতে নামল। তখনও আকর্ষণের কেন্দ্রে ধোনি। লেগসাইডে দুরন্ত রিফ্লেক্সে ক্যাচ নিলেন। উপুল তরঙ্গা তখন বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাট করছিলেন। তিনি ১৬ বলে ২৩ করে ধোনির দুরন্ত ক্যাচে ফিরতেই যেন ধস নামল শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে। ধোনি অবশ্য সেখানেই থামলেন না। দু’টি স্টাম্পিং শিকারও করে ফেললেন।

ক’দিন আগেই ভি ভি এস লক্ষ্মণ-রা তাঁকে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। লক্ষ্মণ এ দিন কমেন্ট্রিতে ছিলেন। কী বলবেন তিনি এখন? নাহ্‌, বড্ড তাড়াতাড়ি রায় দিয়ে দিয়েছিলাম। আরও অপেক্ষা করা উচিত ছিল?

লক্ষ্মণ তা স্বীকার না করুন, ধোনি সতীর্থ রাহুল খুল্লমখুল্লা বলে গেলেন। ‘‘জানি না কোন ফর্মের কথা বলা হচ্ছে। আমি তো যখনই মাঠে বসে দেখি বা টিভি খুলি, মাহি ভাইকে পারফর্ম করে যেতে দেখি। আর আজ তো আমাকে প্রায় মেরেই ফেলছিল,’’ বললেন রাহুল। সজোরে মারা মাহির স্ট্রেট ড্রাইভ থেকে বাঁচতে গিয়ে পড়েই গিয়েছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯৩ রানে জিতল ভারত। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে, সনৎ জয়সূর্যদের ক্রিকেটের এখন কী অবস্থা! পুরো ২০ ওভারও ব্যাট করতে পারলেন না ম্যাথিউজ-রা। ১৬ ওভারে অলআউট ৮৭। ভরা শিশিরের মধ্যেও সফল যুজ-কুল জুটির জয়জয়কার। এ দিনও ভারতের তরুণ স্পিন জুটি নিয়ে গেল ছ’টি উইকেট। যুজবেন্দ্র চহাল চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা। শিশিরে একেবারে ভিজে ওঠা মাঠে বল করে চার উইকেট পাওয়াটা বাড়তি তাৎপর্যের। শিশিরের মোকাবিলা করার জন্য ভিজে বলে স্পিনারদের অনুশীলন করানোর টোটকাও দারুণ সফল।

একটা সময় ছিল যখন জয়সূর্য-রা ভারতকে পেলেই রানের পাহাড় গড়ে লজ্জায় মুড়ে দিতেন। ভারতের এখন সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা!

MS Dhoni Cricket cricketer India vs Sri Lanka T20 Series মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy