ছবি: পিটিআই।
কুলদীপ যাদবকে খেলার স্ট্র্যাটেজিটাই ঠিক করে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। পিচে বল পড়ার পর ওরা কুলদীপকে বোঝার চেষ্টা করছে। এ ভাবে ওকে খেলতেই পারবে না কারণ, ও অনেক দ্রুতগতির।
‘রিস্ট স্পিনার’ অর্থাৎ কব্জি ব্যবহার করে যারা স্পিন করে, তাদের খেলার দাওয়াই একটাই। হাত দেখে খেলো, শূন্যে ‘রিড’ করো। কিন্তু অস্ট্রেলীয়দের ব্যাটিং দেখে পরিষ্কার, ওরা কুলদীপ বা যুজবেন্দ্র চহালকে হাত দেখে বা শূন্যে বিচার করে খেলছে না। সেই কারণেই ওরা দাঁড়াতে পারছে না ভারতের দুই তরুণ স্পিনারের সামনে।
সম্ভবত এই প্রথম ভারতের হয়ে ডানহাতি আর বাঁহাতি লেগস্পিনার একসঙ্গে জুটি বেঁধে খেলছে। কম্বিনেশনটাই ধাঁধা ধরিয়ে দেওয়ার মতো। এর মধ্যে কুলদীপকে বোঝা অনেক বেশি কঠিন কারণ ও বাঁ হাতে লেগস্পিন ও গুগলি বল করে। যেটাকে ক্রিকেটে চায়নাম্যান বলে। যা কার্যত দেখাই যায় না।
আমি যখন ক্রিকেট খেলেছি, ভারতে তখন স্পিনের স্বর্ণযুগ। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তখন প্রত্যেক রাজ্যে বিশ্বমানের সব স্পিনাররা খেলছে। প্রত্যেক দলে ‘রিস্ট স্পিনার’ ছিল। লোকে যে বলে আমি স্পিন ভাল খেলতাম, তার পিছনে কোনও রকেট সায়েন্স ছিল না। ছিল খুব সরল ব্যাকরণ। রিস্ট স্পিনারকে হাত দেখে শূন্যে তার বলটা থাকতে থাকতেই ধরে ফেলতে হবে। তবু স্পিনের স্বর্ণযুগ চলার মধ্যেও কুড়ি বছর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সময়েও আমি কখনও কোনও চায়নাম্যান বোলারকে সামনে পাইনি।
আমি চন্দ্রশেখরকে একটাই ম্যাচে খেলেছি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেটা ছিল চন্দ্রের শেষ ম্যাচ। কিন্তু বিদায়ী ম্যাচেও কাঁদিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন আমাদের। অত ফাস্ট স্পিনার আমি কখনও দেখিনি। স্পিনার নয়, উনি ছিলেন প্রকৃত মিডিয়াম পেসার। চন্দ্রশেখর এমন বোলার ছিলেন যে, একটা স্পেলে অতর্কিতে পুরো খেলার রংটাই বদলে দিতে পারতেন। ওই ম্যাচটাতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে আমরা বেশ ভাল জায়গায় ছিলাম। উনি বোলিং করতে এসে মুহূর্তে আমাদের ইনিংস শেষ করে দিলেন। একাই নিয়ে গেলেন পাঁচ উইকেট।
এই অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং দু’জনের উপর নির্ভরশীল। ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভ স্মিথ। দু’জনকেই স্পিনের বিরুদ্ধে শুধু নড়বড়েই নয়, আতঙ্কিত দেখাচ্ছে। ওয়ার্নারকে দেখে তো মনে হচ্ছে, ওর কোনও আইডিয়াই নেই কী ঘটছে। আমার মনে হয়, ধর্মশালার টেস্টে কুলদীপ যেভাবে ওয়ার্নারকে বোকা বানিয়েছিল, তার পর আর সেই আতঙ্ক থেকে ও বেরোতে পারেনি।
ওয়ার্নারদের উচিত ছিল ম্যাথু হেডেনের ভারত সফরের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখা। ২০০১-এর সেই ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজে মুম্বইয়ের প্রথম টেস্টে আমরা টার্নার বানিয়েছিলাম। হরভজন ছিল, রাহুল সঙ্গভি ছিল। হেডেন আর গিলক্রিস্ট আক্রমণাত্মক সেঞ্চুরি করে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম টেস্টে জিতিয়ে দিয়েছিল। আমার মনে হয়, ভারতে এসে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল স্পিন খেলে গিয়েছে হেডেন। জানি না, ভারতে আসার আগে স্মিথরা ওর সঙ্গে কেন কথা বলে এল না। কথা বললে নিশ্চয়ই হেডেন ওদের বলত, স্পিনকে মাথায় চড়তে দিও না। সুইপ মেরে পাল্টা স্পিনারকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করো। এই অস্ট্রেলিয়া দলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ছাড়া কাউকে সুইপ মারার চেষ্টা করতে দেখছি না। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল হচ্ছে ‘হিট অ্যান্ড মিস’ গোছের ব্যাটসম্যান। লাগলে তুক, না লাগলে তাক।
উল্টো দিকে ভারতীয় দলটাকে দেখুন। শিখর ধবন নেই। কে এল রাহুলের মতো ভাল ব্যাটসম্যান রিজার্ভ বেঞ্চে বসে আছে। আমার তো মনে হয় ভারতীয় ক্রিকেটের এখন যা গভীরতা এবং শক্তি, আন্তর্জাতিক মানের দু’টো দল নামিয়ে দেওয়া যায়। যেটা আগের দশকে অস্ট্রেলিয়া করতে পারত। অশ্বিন-জাডেজাকে বসিয়ে দুই রিস্ট স্পিনারকে নামানোর স্ট্র্যাটেজিটাও একদম ঠিক নিয়েছে কোহালি-রা। গত এক বছরে ওরা দু’জনে টেস্টে দারুণ সফল, প্রচুর ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু ওয়ান ডে-তে মোটেও ভাল করতে পারেনি।
আমি চমৎকৃত ভুবনেশ্বরের উন্নতি দেখেও। গতি বাড়িয়ে ও এখন অন্য বোলার। বৃহস্পতিবার রাতে ভুবির স্পেলটা ইডেনের ইতিহাসে অন্যতম সেরা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। কতটা শক্তিশালী এখন ভারতীয় ক্রিকেট? একটা নমুনা— শামি, উমেশ যাদবের মতো পেসারকে বাইরে রেখে ভারত জিতছে।
তবে ইডেনের এই গতিসম্পন্ন, বাড়তি বাউন্সের পিচের গল্পটা একদম আষাঢ়ে। এটা সেই পুরনো ইডেনের স্লো টার্নারের মতোই। প্রথম দিকে কয়েকটা বল বেশ গতিতে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটা শুধুই হাতে গোণা কয়েকটা বল। না হলে বল মন্থর গতিতে আসছে, টার্নও করছে। কোহালি-শাস্ত্রীরা ঠিক ধরেছে একদম উইকেটের চরিত্রকে। সেই কারণেই টস জিতে ওরা প্রথম ব্যাট করে নিয়েছে। ওরা জানত, যত খেলা গড়াবে তত বল পড়ে মন্থর গতিতে ব্যাটে আসবে আর ফ্লাডলাইটে স্ট্রোক নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। স্মিথকে টসের সময় বলতে শুনলাম, জিতলে ও-ও ব্যাটই করত।
কেউ কি স্মিথকে মনে করিয়ে দেবে, ভাগ্য সাহসীদের দিকে থাকে? আর সাহসী দলটা এখন ভারতই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy