Advertisement
E-Paper

যন্ত্রণার দিনগুলোতে রোনাল্ডো ছিলেন দীপার বড় অনুপ্রেরণা

তুরস্কে সদ্য নতুন ইভেন্টে সোনা জিতে এসেছেন দীপা কর্মকার। সামনে এশিয়াড। যার প্রস্তুতি তিনি নিচ্ছেন রাজধানীতে। প্রোদুনোভা ভল্ট নয়, ত্রিপুরার সোনার মেয়ের সঙ্গী নতুন ভল্ট। মোটিভেশন হিসেবে থাকছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও।

সৌরাংশু দেবনাথ

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ১৫:১৩
এশিয়ান গেমসেও দীপার মুখে এই হাসি দেখতে চাইছে ক্রীড়ামহল। ছবি: পিটিআই।

এশিয়ান গেমসেও দীপার মুখে এই হাসি দেখতে চাইছে ক্রীড়ামহল। ছবি: পিটিআই।

কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস নয়। দুঃসহ প্রায় দু’বছর। চোট সারিয়ে জিমন্যাস্টিকের ফ্লোরে ফেরার মাঝের জীবনকে কারাগার মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আর সেই কয়েদের অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরতে দীপার জীবনে আশার সলতে হয়ে উঠেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো!

হেঁয়ালি নয়। বরং এটাই ঘোর বাস্তব। বছর দুয়েক আগে ইউরোর ফাইনালে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন পর্তুগালের ফুটবল অধিনায়ক। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। দীপাও দু’বছর আগের রিও অলিম্পিকের পর বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন ‘অ্যান্টিরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট’ বা ‘এসিএল’ চোটের জন্য। গত বছর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। এক বছর লেগেছে রিহ্যাবের জন্য।

সেই কঠিন সময়ে রোনাল্ডোই হয়ে উঠেছিলেন প্রেরণা। নয়াদিল্লি থেকে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী আনন্দবাজারকে মোবাইলে বললেন, “নেটে অনেকের জীবনী পড়ত ও। তার মধ্যে রোনাল্ডোও ছিল। ওঁরও পায়ে চার না পাঁচ বার চোট লেগেছে। তার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইউরো ফাইনালে তো পা ভেঙে গিয়েছিল। দীপা এটা থেকে ইন্সপায়ারড হতো। আমাকে বলত রোনাল্ডোর কথা।”

অর্থ্যাত্, হতাশার গ্রাস থেকে লড়াইয়ের শপথ নিতে দীপা কর্মকারের কাছে মোটিভেশনের ফুলকি হয়ে হাজির হয়েছিলেন রোনাল্ডো। হাঁটুর চোটই হয়ে উঠেছিল সেতু। চোট সারিয়ে সিআর সেভেনের ফেরার লড়াই হয়ে উঠেছিল ত্রিপুরার মেয়ের অনুপ্রেরণা।

গুরু-শিষ্যা। কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর সঙ্গে দীপা। ছবি: পিটিআই।

স্বয়ং দীপা রবিবার দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের ফাঁকে বললেন, “রোনাল্ডোর ভক্ত আমি। অনেকবার চোট পেয়েও ফিরে এসেছে।” দীপা সাহস খুঁজে পেয়েছেন জিমন্যাস্টিক্স মহল থেকেও। বললেন, “শুধু রোনাল্ডো নয়, এই এসিএল চোট পেয়েও জিমন্যাস্টিক্সে অনেকে ফিরে এসেছেন। আমার মনে হয়, রিহ্যাব যদি ঠিকঠাক করা যেতে পারে, তবে ফ্লোরে ফেরা কোনও ব্যাপার নয়।”

জিমন্যাস্টিকে ফিরে আসার লড়াই অবশ্য তার পরও কষ্টসাধ্য ছিল। দুই বছরে প্রতিযোগীরা অনেক এগিয়ে চলেছেন। আর তিনি পড়ছেন পিছিয়ে। উদ্বেগ, আশঙ্কার মেঘ ঘিরে ধরাই স্বাভাবিক। ভেঙে পড়া মনকে সতেজ করে তুলতে বিশ্বেশ্বর নন্দী আর স্রেফ কোচ হয়েই থেমে থাকতেন না। হয়ে উঠতেন বন্ধুও। সেটাই শোনালেন, “মোটিভেট করতে হত প্রায়ই। মন খারাপ করে বসে থাকলে জোকস বলতাম, ইয়ার্কি করতাম। বলতাম, চল, ঘুরে আসি শপিং মল থেকে। কখনও কখনও ছোটখাট খেলনাও কিনে দিতাম। চোটের কথা তুলতাম না। শুধু বলতাম, তুই পারবি। ঘুরে দাঁড়াতে পারবি। এশিয়ান গেমসের আগে একটা কম্পিটিশনে তোকে নামাব। তুই চিন্তা করিস না। রিহ্যাব করে আগে হাঁটুটাকে ভাল কর। এ ভাবেই বোঝাতাম।” সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়াও। একজন মনোবিদ রাখা হয়েছিল। ছিলেন একজন ফিজিয়োও। এখনও রাজধানীর সাই-এ প্রস্তুতি চলছে দীপার।

কথা রেখেছিলেন বিশ্বেশ্বর। এশিয়ান গেমসের আগে ছাত্রীকে নামিয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে। নিজের কাছে কথা রেখেছেন দীপাও। তুরস্কে প্রত্যাবর্তনেই জিতেছেন সোনা। দীপার গলায় তাই আগের তেজ। বললেন, “অনেক দিন পর নেমেছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম সেরাটা দেওয়ার। সোনা পাওয়ায় বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। যা কাজে লাগবে।”

প্রোদুনোভা নয়, তুরস্কের মতোই নতুন ভল্ট দেবেন এশিয়ান গেমসেও। যার নাম 'হ্যান্ডস্প্রিং ফ্রন্ট সামারসল্ট উইথ ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন'। কোচের কথায়, “প্রোদুনোভায় বেশি পয়েন্ট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিফিকাল্টি মার্ক ৬.৪ পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু, এখন যা করছে তাতে ডিফিকাল্টি মার্ক ৬ বা ৫.৬ উঠতে পারে। তার পরও দীপাকে প্রোদুনোভা করাচ্ছি না। ও সবে সাড়ে তিন কি চার মাস হল চোট সারিয়ে পুরো অনুশীলনে ফিরেছে। তাই ঝুঁকি নেব না। পা এখনও পুরো সেরে ওঠেনি। আমি যদিও ওঁকে এটা বলিনি। তবে কোচ তো, আমি জানি।”

এশিয়ান গেমসে পদক নয়, প্রাথমিক ভাবে ফাইনালে ওঠাকেই লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বেশ্বর বললেন, “এশিয়ান গেমস মানে দ্বিতীয় অলিম্পিক। এখানে চিন,জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া ও উজবেকিস্তান, এই পাঁচটা দেশের বিরুদ্ধেই প্রধানত লড়াই। ওদের অলিম্পিকে পদকজয়ী জিমন্যাস্ট রয়েছে। চোট না থাকলে চ্যালেঞ্জ করতাম। বলতাম, পদক আনবই।” কাজটা যে রীতিমতো কঠিন, তা মানছেন কোচ। বললেন, “বাকিরা সবাই দুই বছর ধরে অনুশীলন করে চলেছে। অলিম্পক শেষ হতেই শুরু করেছে এশিয়াডের প্রস্তুতি। প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছে। বারবার রিপিটেশন করছে। আমরা নামছি নতুন ভল্টে। রিপিট করার প্রশ্নই নেই। আর জিমন্যাস্টিক্স ব্যাপারটাই হল অনিশ্চিত। এমনিতেই এটা জটিল। আমার প্রথম লক্ষ্য বাচ্চাটাকে ফাইনালে তোলা। তার পর যা হয় দেখা যাবে। এটা বলতে পারি, আমরা ছাড়ব না। চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখব না।”

বদ্ধপরিকর শোনাল কোচের গলা। কিছু ক্ষণ পর ছাত্রীর গলাতেও মিলল চোয়ালচাপা প্রতিজ্ঞার সুর। দীপা বললেন, “বাইরে থাকার সময় নিজেকে বলতাম, ফিরতেই হবে। চেষ্টা করতেই হবে আগের জায়গায় ফেরার। এশিয়ান গেমসে খুব কঠিন লড়াই। তবে আমি লড়ে যাব।”

যা দাঁড়াল, এশিয়ান গেমসে দীপার সঙ্গী হচ্ছে অদম্য জেদ। আশার প্রদীপ জ্বালিয়েই রাখছেন দীপা।

আরও পড়ুন: ‘সংশয়ের কারণ নেই ঋদ্ধির ফেরা নিয়ে’

আরও পড়ুন: সচিনের ভয়, কুলদীপের রহস্য ভেদ করেছেন রুট

Gymnastics Dipa Karmakar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy