নায়ক ডং। শনিবার বারাসতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ধাক্কার উত্তরে মিষ্টি হাসি।
স্বার্থপর ফুটবলার থেকে প্রকৃত টিমম্যান।
বিরক্তির অন্ধকার মুছে ফের আলোর স্নিগ্ধতায়।
ডু ডং-কে যেন কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না! পুরনো সেই নিষ্পাপ মুখ। শরীরী ভাষাতেও সেই শান্ত স্বভাবের ছায়া। চার ম্যাচ পরে প্রথম দলে সুযোগ পেয়ে কী করে এত আমূল পরিবর্তন?
বছর চারেক আগে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তৃতা দেওয়ার সময় শাহরুখ খান বলেছিলেন যে, ‘‘যখন দেখি আমি খুব অহংকারী হয়ে উঠছি, তখন আমি সপরিবার চলে যাই যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটাতে। ওখানকার বিমানবন্দরে অভিবাসন অফিসাররা আমার মধ্যে থেকে তারকা সত্ত্বাটা টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বার করে দেন।’’ না, শাহরুখ খানের মতো অহংকারের ভূত তাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে হয়নি ডু ডংকে। ট্রেভর জেমস মর্গ্যান নামক ইস্টবেঙ্গলের চলমান ‘অভিবাসন অফিসার’ আছেন যে।
একটা সময় যে ভাবে কড়া হাতে টোলগে ওজবেকে সামলেছিলেন, ঠিক একই দক্ষতায় এ বার লাল-হলুদের কোরিয়ান মিডিওকেও নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে দিলেন ব্রিটিশ কোচ। শনিবার বারাসতে সাদার্ন সমিতি ম্যাচ দেখার ফাঁকে মনে হল, ডংয়ের মাথা থেকে শুধু অহংকারের ভূত তাড়িয়েছেন সেটাই নয়। আই লিগ শুরুর আগে লাল-হলুদের বর্ষসেরা ফুটবলারের মধ্যে এক প্রকৃত টিমম্যান তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছেন মর্গ্যান। ফেভিকলের আঠার মতো বল নিয়ে দৌড়নো তো আছেই, বিপক্ষ বক্সের সামনে ফাঁকা গোলের সুযোগ পেলেও টিমের দ্বিতীয় কাউকে খুঁজছেন তিনি। যদি বল পাস করা যায়।
এই ডং ইস্টবেঙ্গলের নতুন প্রাপ্তি। কিন্তু ট্রেভর মর্গ্যানের ডং-দাওয়াইটা কী? বাড়ির ‘বাউন্ডুলে’ ছেলেকে সঠিক দিশা দেখাতে লাল-হলুদ কোচের দাওয়াই, ‘‘প্রত্যেক ফুটবলারের একটা বর্ডারলাইন আছে। আমি ডংকে ওর সীমাটা বুঝিয়েছি। এও বলেছি, সেই সীমা অতিক্রম করলে টিমে জায়গা পেতে সমস্যা হবে।’’
সাদার্ন ম্যাচে ডং যদি প্রাপ্তি হয়, তা হলে ইস্টবেঙ্গলে নতুন চিন্তার নাম ডিফেন্স। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ক্যালাম অ্যাঙ্গাস ভাল। তবে তিনি উগা ওপারা নন। বড় চেহারাটাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না। অর্ণব মণ্ডলের পাশে একেবারে বেমানান মনে হচ্ছে। তাঁর ভুলেই ম্যাচের শুরুতে ০-১ পিছিয়ে পড়েন মেহতাবরা। যদিও বিরতির আগেই ২-১ করে ম্যাচের স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে নেয় মর্গ্যান-ব্রিগেড। সৌজন্যে জিতেন মূর্মূ ও ডং। তবে খুব তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জিতেনের গোলেও কোরিয়ান মিডিওর অবদানই বেশি। এখনই হয়তো মন্তব্য করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে! তবু মর্গ্যান যদি ঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারেন, তা হলে ডংয়ের মধ্যে আরও একটা অ্যালভিটো ডি’কুনহার সন্ধান পেয়ে যেতে পারে ইস্টবেঙ্গল।
তবে এ দিন তাঁর দল জিতলেও, ম্যাচ শেষে লাল-হলুদ কোচকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হল গ্যালারি থেকে। কারণ একটাই— দ্বিতীয়ার্ধের বিশ্রী ফুটবল। সাদার্নের মতো তথাকথিত ছোট টিমের বিরুদ্ধে ২-১ এগিয়েও ব্যবধান বাড়ানোর কোনও তাগিদ না থাকলে, গ্যালারির আর কী দোষ! মর্গ্যান নিজেও বলছিলেন, ‘‘বিরতির পরে টিমটা পুরো দাঁড়িয়ে পড়ল। গোল করার ইচ্ছেটাই যেন হারিয়ে ফেলেছিল ফুটবলাররা।’’ গ্যালারির তাঁকে নিয়ে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি নিয়েও প্রশ্ন করা হল। মর্গ্যান তির্যক ভাবে বললেন, ‘‘যখন ছেড়ে দেওয়ার, ঠিক ছেড়ে চলে যাব।’’
আসলে ইস্টবেঙ্গলের এখন রোগ তো একটা নয়, অনেক। কলকাতা লিগে টানা ছ’টা ম্যাচ জিতলেও, চার বছর আগের সেই ভরসা এখনও দিতে পারেননি মর্গ্যান। টিমটাও তৈরি নয়। বিদেশিদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো চলছেই। স্বদেশিদের মধ্যেও নতুন কোনও মুখ উঠে আসেনি। অবিনাশ রুইদাস, জিতেনরা আছেন ঠিকই। কিন্তু ধারাবাহিক নন। কোথাও যেন একটা ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ মার্কা মনোভাব নিরুদ্দেশ। যেটা ব্রিটিশ কোচের প্রথম ইনিংসে ছিল। মর্গ্যান অবশ্য স্বীকার করলেন, ‘‘ওপারা, পেন কিংবা চিডির সঙ্গে তো আর তুলনা করা যাবে না। তবে যারা এখন আছে তারা সবাই যথেষ্ট যোগ্য। ট্রফি আসবেই।’’
মুখে বলা সহজ, কাজে খুব কঠিন মর্গ্যানস্যার! সামনে ডার্বি। তার পরেই আই লিগ। টিম তৈরি হোক বা না হোক, গ্যালারি সেটা বুঝবে তো? সমর্থকরা কিন্তু তেতে আছেন। ম্যাচ জিতেও যে স্লোগানের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না! অবস্থা আরও খারাপ হলে স্লোগানের ডেসিবেল চড়চড় করে বেড়ে যেতে পারে— ‘গো ব্যাক মর্গ্যান’!
ইস্টবেঙ্গল: ব্যারেটো, রাহুল, ক্যালাম, রবার্ট (দীপক), মেহতাব, লালরিন্দিকা, বিকাশ (অবিনাশ), রফিক, ডং (আদিলেজা), জিতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy