Advertisement
E-Paper

খটকা লাগে আমি আর ফেডেরার কি এক খেলার লোক

প্র: তা হলে ফেডেরার আর আপনাকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করা সম্ভব নয়? লেভার: কিছুতে সম্ভব নয়। আমাদের পৃথিবীটাই তো পৃথক সরঞ্জামের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা। জাস্ট ঘটনাক্রমে আমরা এক খেলার লোক।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৫
সর্বকালের দুই সেরা টেনিস তারকা।

সর্বকালের দুই সেরা টেনিস তারকা।

প্রশ্ন: ব্র্যাডম্যানকে চিনতেন?

লেভার: নাহ, ওঁর সঙ্গে কখনও আলাপ হয়নি।

প্র: সেটা তো বেশ আশ্চর্যের।

লেভার: ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্য অনেকে আমার খুব বন্ধু ছিল। বেনো। লিন্ডওয়াল। মিলার। পিটার বাজ। তখন আমাদের এতটাই বন্ধুত্ব ছিল যে, একই শহরে শেফিল্ড শিল্ডের খেলা পড়লে ওরা নিয়ম করে টেনিস দেখতে আসত। আমি যেতাম ক্রিকেট মাঠে।

প্র: অন্য সময়। যখন মেটশিপ শব্দটা টাকার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

লেভার: ইয়েস মেটশিপ। পৃথিবীতে টাকা-পয়সা, প্রাচুর্য, নিজের জাম্বো জেট নিয়ে ঘোরা এ সব তো আছেই। তার চেয়ে অনেক মধুর হল বন্ধুত্ব। ওটাই চিরন্তন থাকে। আমার তো শুনে আজব লাগে এখনকার প্লেয়ারদের মধ্যে নাদাল-ফেডেরার আর জকোভিচে নাকি বন্ধুত্ব রয়েছে নিজেদের মধ্যে। কিন্তু তার বাইরে কেউ কারও সঙ্গে মেশে না।

প্র: আপনার বয়স এখন আটাত্তর। প্রশ্নটা হয়তো অবান্তর। তবু জিজ্ঞেস না করে পারছি না, এক-আধ বার কার্লসবাডের ক্লাবে টেনিস র‌্যাকেট হাতে তোলেন?

লেভার: প্রশ্নই নেই। আমার কব্জির সব হাড় ক্ষয়ে গ্যাছে। কার্টিলেজ বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। তার ওপর হাতে আর্থারাইটিস। আমার পক্ষে আর র‌্যাকেট গ্রিপ করা সম্ভব নয়।

প্র: শেষ র‌্যাকেট নেড়েচেড়ে দেখেছেন কবে?

লেভার: বছর পাঁচেক হবে।

প্র: আপনার দু’টো ক্যালেন্ডার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার রেকর্ড আজ এত বছর পরেও অনায়ত্ত। ভাবলে কেমন লাগে এত সব বাঘা বাঘা প্লেয়ার এল-গেল। কেউ ভাঙতে না পেরে ওটা মিনারের মতোই থেকে গেল?

লেভার: আমি খুব ভাগ্যবান যে ঠিক সময় ঠিক খেলাটা বার করে আনতে পেরেছি। অনেক তথাকথিত কমজোরি টুর্নামেন্টে হেরে গেছি টনি রোচ, এমার্সন কী ফ্রেজারের কাছে। আবার বড় টুর্নামেন্টে গিয়ে দপ করে ফর্ম ফিরে এসেছে।

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। যখন কোর্টের সম্রাট।

প্র: শুরুর দিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আবার করছি। এই যে দপ করে বড় ম্যাচে জ্বলা। কী ভাবে সম্ভব?

লেভার: আমি জানি না। ওটা জাস্ট হয়ে গিয়েছে। আমি শুধু এই রোখটা নিজের মধ্যে রেখেছি যে, কোর্টে যাও। আগাগোড়া কনসেনট্রেট করো। আর নিজেকে উজাড় করে দাও। বাকিটা জাস্ট ঘটে গিয়েছে।

প্র: স্পটলাইট ছেড়ে এই দূর দেশে থাকাটা সমস্যা নয়? এ তো নিউইয়র্ক বা এল এ-ও নয় যে বড় শহরের সুযোগ পাচ্ছেন।

লেভার: আমার কোনও অশান্তি নেই। প্রতি বার যখন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে যাই দারুণ সম্মান পাই। এত বছর পরেও মানুষ ঘিরে ধরে। আমার নামটা যখন স্টেডিয়ামের ওপর দেখি, গর্বিত লাগে। কী জানেন তো, রেকর্ডটাই টিকে থাকে। অবসর জীবনে ইউ আর ওনলি অ্যাজ গুড অ্যাজ ইয়োর রেকর্ডস।

প্র: আপনি এমন বয়সে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যেখানে মানুষ অন্তের দিকে চিন্তা শুরু করে। আজ থেকে প়ঞ্চাশ বছর পর কী ভাবে চান মানুষ আপনাকে মনে রাখুক?

লেভার: এমন একজন টেনিস প্লেয়ার হিসেবে যে কঠিন টেনিস খেলত। যে বিপক্ষকে শ্রদ্ধা করেছে। যে জেতার জন্য সব সময় নিজেকে জীবনের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।

প্র: টেনিস ভক্তরা মনে করে এই গ্রহের সর্বকালের সেরা টেনিস প্লেয়ার নির্বাচনের জন্য যদি একটা স্বপ্নের ফাইনাল করা যেত, তো বেশ হত। রড লেভার বনাম রজার ফেডেরার।

লেভার: হুমম।

প্র: পাশ কাটানো নয়। সরাসরি উত্তর চাইছি।

লেভার: উত্তর আমি জানি না। তা ছাড়া তুলনাটা তো অসম্ভব। আমি খেলতাম কাঠের র‌্যাকেটে। ফেডেরার খেলে অত্যাধুনিক কম্পোজিট র‌্যাকেটে। দু’টো সম্পূর্ণ পৃথক পৃথিবী। কাঠের র‌্যাকেটে কত কিছু করা যায় না। আবার গ্র্যাফাইট র‌্যাকেটে কত কিছু সহজে করা যায়। কাজেই আমি এ ভাবে দেখতে চাই মনের আনন্দে খেলেছি। খেলে কিছু রেকর্ডও করেছি। এর বাইরে ড্রিম ফাইনাল-টাইনালে আমার কোনও স্পৃহা নেই।

প্র: কাঠের র‌্যাকেটে কী কী করা যায় না?

লেভার: সহজে হেভি টপস্পিন করা যায় না। যথেষ্ট পাওয়ার আনা যায় না। সার্ভিস ততটা জোরালো হয় না। আমি সার্ভ করতাম মোটামুটি ঘণ্টায় একশো মাইল স্পিডে। তখনকার দিনে সেটা যথেষ্ট ছিল। এখন তো যে কে সে-ই ১৩০/১৪০ মাইল স্পিডে সার্ভ করে দিচ্ছে। গ্র্যাফাইটে মারলে বল কতটা উঁচু বাউন্স করে। ফণার মতো দাঁড়িয়ে ওঠে।

প্র: এতটা তফাত?

লেভার: বললাম তো দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবী। আমি কম্পোজিট র‌্যাকেটে কয়েকটা বল মেরে দেখেছি ইট ইজ সো ইজি। কাঠের র‌্যাকেটে আপনাকে ঠিকঠাক মারতে হলে র‌্যাকেটের ঠিক মধ্যিখানটায় বল লাগাতে হবে। অথচ গ্র্যাফাইটে মধ্যিখানের পাওয়ার স্পটগুলো এত চওড়া যে মিডল অব দ্য র‌্যাকেট না হলেও কোনও প্রবলেম নেই।

প্র: আপনি অবসর নেওয়ার পর এত সব বড় বড় প্লেয়ার এসেছেন। বর্গ, ম্যাকেনরো, কোনর্স, সাম্প্রাস, আগাসি, ফেডেরার, নাদাল, জকোভিচ। কাকে দেখে মনে মনে সামান্য হলেও ভয় হয়েছে যে আমার দিনে ছেলেটা থাকলে ঝামেলায় ফেলত?

লেভার: আমার তো মনে হয় ওই র‌্যাকেট হাতে বেশির ভাগই আমায় সমস্যা করত। নাদাল যে হেভি টপস্পিন রিটার্নটা মারে সেটা কী ভাবে সামলাবেন? কাঠের র‌্যাকেটে ওই রিটার্নকে ভলি মারা অসম্ভব। আমি তাই কাঠের র‌্যাকেট দিয়েই নিজেকে সর্বকালীন স্কেলে বিচার করতে চাই। সেটা বলে, বর্গকে আমি ডালাসে যখন খেলি, তখন ওর বয়স আঠারো। আমার সাঁইত্রিশ। ডালাসে হওয়া সেই ম্যাচটা পাঁচ সেট পর্যন্ত গেছিল। জিতি কিন্তু আমিই।

এখন শুধুই দর্শক। কয়েক মাস আগে আমেরিকায় এক টেনিস টুর্নামেন্টে রড লেভার। সঙ্গী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।

প্র: তা হলে ফেডেরার আর আপনাকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করা সম্ভব নয়?

লেভার: কিছুতে সম্ভব নয়। আমাদের পৃথিবীটাই তো পৃথক সরঞ্জামের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা। জাস্ট ঘটনাক্রমে আমরা এক খেলার লোক।

প্র: তা হলে কি কাঠের র‌্যাকেটের পৃথিবীর সর্বকালের সেরা নির্ধারণ হবে পাঞ্চো গ়ঞ্জালেজ ভার্সাস রড লেভার ম্যাচ দিয়ে?

লেভার: পাঞ্চো আমার সিনিয়র। ওঁকে যখন প্রথম খেলি পাঞ্চোর বয়স চল্লিশ। কিন্তু উনি দুর্দান্ত প্লেয়ার ছিলেন। এই ম্যাচটা রিয়্যাল চ্যালেঞ্জ হবে।

প্র: টেনিসপ্রেমীদের মন ভরবে না। তারা ফাইনালে ফেডেরারকেই চাইবে।

লেভার: তাদের বুঝতে হবে আমাদের খেলাটা আর আজকের খেলা—গোড়া থেকে শেষ অবধি আলাদা। তুলনার স্কোপ নেই।

(শেষ)

Rod Laver Roger Federer Tennis Exclusive Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy