Advertisement
E-Paper

একে অন্যের সাফল্য চাইলেন সঞ্জয় আর বিশ্বজিৎ

দুই প্রধানের কোচ হয়ে পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে অমল দত্তের প্রশংসার মানপত্র পড়ছেন এটা কেউ কখনও কল্পনায় এনেছেন? দুই প্রধানের কোচ হয়ে সুভাষ ভৌমিক বলছেন, ‘‘সুব্রত সফল হোক এটা দেখতে চাই।’’ বা সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সুভাষ আরও উপরে উঠুক। আরও ট্রফি জিতুক, এটাই চাই।’’ এটা কেউ ভাবতে পেরেছেন কখনও? শনিবাসারীয় সন্ধ্যায় দু’টি ঘটনাই ঘটে গেল। তবে অন্য মোড়কে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:২৬
দুই প্রধানের দুই কোচ। শনিবার আই লিগ জয়ী বাগান কোচ সঞ্জয় সেনকে সংবর্ধ্বনা লাল-হলুদ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের। সাদার্ন স্পোর্টস ক্লাবের অনুষ্ঠানে। ছবি: উৎপল সরকার

দুই প্রধানের দুই কোচ। শনিবার আই লিগ জয়ী বাগান কোচ সঞ্জয় সেনকে সংবর্ধ্বনা লাল-হলুদ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের। সাদার্ন স্পোর্টস ক্লাবের অনুষ্ঠানে। ছবি: উৎপল সরকার

দুই প্রধানের কোচ হয়ে পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে অমল দত্তের প্রশংসার মানপত্র পড়ছেন এটা কেউ কখনও কল্পনায় এনেছেন?
দুই প্রধানের কোচ হয়ে সুভাষ ভৌমিক বলছেন, ‘‘সুব্রত সফল হোক এটা দেখতে চাই।’’ বা সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সুভাষ আরও উপরে উঠুক। আরও ট্রফি জিতুক, এটাই চাই।’’ এটা কেউ ভাবতে পেরেছেন কখনও?
শনিবাসারীয় সন্ধ্যায় দু’টি ঘটনাই ঘটে গেল। তবে অন্য মোড়কে। অন্য মেজাজের মঞ্চে। দুই প্রধানের চিরকালীন যুদ্ধের আগুন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে বন্ধুত্বকে সামনে এনে দিলেন সঞ্জয় সেন আর বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। মাস দু’য়েক পর যাঁরা একে অন্যেকে হারানোর জন্য প্রাণপাত করবেন। মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল রিজার্ভ বেঞ্চে বসে। তারাই একে অন্যকে ভরিয়ে দিলন প্রশংসায়। চাইলেন সাফল্য।
তেরো বছর পর বাগানকে আই লিগ দেওয়া কোচ সঞ্জয়ের জন্য লিখে আনা প্রশংসাপত্র পড়লেন লাল-হলুদের এ বারের কোচ বিশ্বজিৎ। তার পর হাসতে হাসতে তুলে দিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কোচের হাতে।
আর সঞ্জয় পাল্টা কী করলেন? যার সঙ্গে ছোটবেলায় চাউমিন আর মিষ্টি খেয়ে অনুশীলন শেষে প্রতিদিন চেতলার বাড়ি ফিরতেন, আবেগে সেই বিশুদার সাফল্য কামনা করে বসলেন। সবাইকে কিছুটা চমকে দিয়ে সঞ্জয় বলে দিলেন ‘‘আমি চাই, আমি আর বিশুদা দু’জনেই এ বার সাফল্য পাই। বিশুদা তো যথেষ্ট ভাল কোচ। এটা নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই।’’ আর বিশ্বজিতের মন্তব্য, ‘‘আমি চাই ও আরও ট্রফি জিতুক। আরও ওপরে উঠুক।’’

কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব? ডার্বিতে কি কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন? দু’জনেই তো বাঙালির দু’ভাগ হয়ে যাওয়া আবেগের ম্যাচে একে অন্যকে শেষ করে দেওয়ার ছক কষবেন! জিততে চাইবেন আই লিগ, কলকাতা লিগ-সহ সব ট্রফি।

না, এ সব ভাবার মতো অবস্থা মনে হয় এ দিন ছিল না সাদার্ন স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সংবর্ধনা মঞ্চে। বরং ক্লাবের দুই প্রাক্তন খোলোয়াড়ের আবেগে বলে যাওয়া নানা কথা চেটেপুটে নিলেন সবাই। সবাই মানে— একঝাঁক প্রাক্তন তারকা ফুটবলার, ক্লাবের কয়েকশো শিক্ষার্থী-সহ শ’খানেক দর্শক।

বাগান কোচের হাতে যখন সবুজ-মেরুন ফুলের স্তবক তুলে দিচ্ছেন লাল-হলুদের বিশ্বজিৎ, তখন উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসল রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন হলঘর। নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলেন নিমাই গোস্বামী, কম্পটন দত্ত, জামশিদ নাসিরি, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ মিত্র, অমিত বাগচি, সুমিত বাগচি, বাসুদেব মণ্ডলরা। দুই প্রধানে যাঁরা এক সময় ছিলেন ট্রফি বা ডার্বি জেতানো নায়ক।

উঠে এল নানা অজানা কথা। বিশ্বজিৎ এবং সঞ্জয় যাঁর হাতে তৈরি সেই প্রয়াত খোকন বসু মল্লিক নাকি বর্তমান বাগান কোচকে এক বার একটি টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার খেলিয়েছিলেন। সে বার তিন ম্যাচে পাঁচটি গোলও করেছিলেন সঞ্জয়। ‘‘কিন্তু পরে আমি স্ট্রাইকার ছেড়ে রক্ষণে খেলতে চেয়েছিলাম। তখন খোকনদা আমাকে বলছিলেন, ‘স্ট্রাইকারে না খেললে জাতীয় দলে সুযোগ পাবে না কোনও দিন।’ আমি জাতীয় দলে কখনও খেলিনি। তবে একটা জেদ ছিল। ফুটবলার হিসাবে পারিনি। কোচ হিসেবে ভারতসেরা হওয়াটা তাই আমার জীবনের সবথেকে বড় ঘটনা।’’ নিজের ক্লাবে এসে স্মৃতির পাতা উল্টোতে থাকেন দেশের সেরা কোচের সম্মান পাওয়া সঞ্জয়। ‘‘বিশুদা-কম্পটনদারা যখন মাঠে খেলত তখন ভাবতাম কবে টিমে সুযোগ পাব। আই লিগ জেতার পর প্রচুর সংবর্ধনা পাচ্ছি। কিন্তু আমার নিজের ক্লাবের সংবর্ধনা একটা স্পেশ্যাল ঘটনা। প্রচণ্ড লজ্জা লাগছে। অস্বস্তিও।’’ কিন্তু আপনি যে ইস্টবেঙ্গল কোচের সাফল্য চেয়ে বসলেন! সেটা কী ভাবে সম্ভব? বাগান কোচ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘কেন হবে না? আমি হয়তো আই লিগ জিতলাম। ও হয়তো কলকাতা লিগ জিতল। এটা তো হতেই পারে।’’

সঞ্জয় নিজের টিম নিয়ে মাঠে নামছেন জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে। বিশ্বজিৎ নেমে পড়ছেন তার আগে। ৬ জুলাই। এখন তো মানপত্র দিলেন। ডার্বির আগে কি এ রকম ভাবেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন সঞ্জয়ের? শুনে হেসে ফেলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ। ‘‘জানি না, তখন কী পরিস্থিতি হবে। তবে আমরা তো একই ক্লাবের ছেলে। এমন কিছু হবে না, যা দু’জনের মধ্যে তিক্ততা তৈরি করবে। দূরত্ব বাড়াবে। তবে জিততে তো দু’জনেই চাইব। তাতে যা হয় সেটা হবে।’’

বোঝাই যায়, আঁতুরঘরে বসে যা-ই বলুন ইস্ট-মোহনের এ বারের দুই কোচ, সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডার্বির মঞ্চ কিন্তু উত্তেজনায় টইটম্বুরই থাকবে।

east bengal mohun bagan p k banerjee Sanjoy Sen biswajit bhattacharya Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy