Advertisement
E-Paper

ফাঁদে পা দিয়েও শেষরক্ষা হল কাশিমের গোলে

রিয়াল কাশ্মীরের সঙ্গে পয়েন্টে একই বিন্দুতে (৩২ পয়েন্ট) অবস্থান করলেও গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় দু’নম্বরে চলে এল ইস্টবেঙ্গল।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৮
রুদ্ধশ্বাস: গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ম্যাচে ফেরানোর মুহূর্তে কাশিম আইদারা।রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রুদ্ধশ্বাস: গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ম্যাচে ফেরানোর মুহূর্তে কাশিম আইদারা।রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইস্টবেঙ্গল ১ • চার্চিল ১

খেতাবের লড়াইয়ে ইস্টবেঙ্গলকে ভাসিয়ে রাখলেন কে?

যুবভারতীতে রবিবার রাতে মশালবাহিনীর হার বাঁচালেন আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলের কোন সৈনিক?

লালরিন্দিকা রালতে, না কাশিম আইদারা?

ম্যাচের পর এই প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে গেল। ম্যাচ কমিশনার রবিশঙ্কর জয়রামন সরকারি ভাবে ডিকার নাম গোলদাতা হিসাবে লেখায় ছড়াল চূড়ান্ত বিভ্রান্তি। তাঁর দুরন্ত ফ্রি কিক সরাসরি গোলে ঢুকেছে কী না, নিজেও তা বলতে পারেননি লাল-হলুদ মিডিয়ো। তবে পরিবার নিয়ে কাশিম গাড়িতে ওঠার সময় বলে যান, ‘‘গোলটা আমার। হেড করে গোলটা করেছি।’’ টেলিভিশনেও দেখা যায় কাশিমের হেড গোলে ঢুকেছে।

বেশি রাতে ম্যাচ কমিশনার বদলে দেন গোলদাতার নাম। ভুল শুধরে ফেডারেশনকে জানিয়ে দেন, কাশিমই গোল করেছেন।

কিন্তু এই গোল নিয়ে ম্যাচের পরে আবার বিতর্ক শুরু করে দিলেন চার্চিল ব্রাদার্সের কোচ পেত্রে গিগুই। বলে দেন, ‘‘ডিকার ফ্রি কিকটা রেফারির উপহার। ফুটবলাররা ড্রেসিংরুমে এসে আমাকে বলেছে, কাশিম হেড করার সময় আমাদের গোলকিপারকে ধাক্কা মেরেছে।’’ গোয়ার পারিবারিক ক্লাবের রোমানিয়ান কোচের দাবি কতটা ঠিক, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু এটা ঠিক যে, আটাত্তর মিনিট পর্যন্ত ০-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ইস্টবেঙ্গল গোল করে সমতায় না ফিরলে আজই ট্রফি জয়ের স্বপ্নে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়ে যেত। লিগ টেবলে দু’নম্বরেও উঠে আসতে পারতেন না জবি জাস্টিনরা। রিয়াল কাশ্মীরের সঙ্গে পয়েন্টে একই বিন্দুতে (৩২ পয়েন্ট) অবস্থান করলেও গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় দু’নম্বরে চলে এল ইস্টবেঙ্গল। এ দিন চার্চিলের কাছে দু’পয়েন্ট নষ্ট হওয়ায় খেতাবের লড়াইয়ে কতটা ক্ষতি হল আপনাদের? ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ বলে দিলেন, ‘‘সেটা বোঝা যাবে প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর। হাতে এখনও চারটে ম্যাচ আছে। সেগুলো আমাদের জিততেই হবে। অন্যরাও পয়েন্ট নষ্ট করবে। তার পরে দেখা যাবে কে চ্যাম্পিয়ন হল।’’ চোখে-মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়েও পেশাদারের মতোই তাঁর মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘আমরা ম্যাচটা জিততে পারতাম। টোনি দোভালে ও এনরিকে দু’টো সহজ সুযোগ নষ্ট করল।’’

ম্যাচের মাঝখানে এ ভাবেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন দুই দলের ফুটবলারেরা।

ঘরের মাঠে আইজলের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরে টানা তিনটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে বেরিয়ে পড়তে হবে জনি আকোস্তাদের। সেই ম্যাচের তালিকায় আছে রিয়াল কাশ্মীরও।

কিন্তু চার্চিলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে যেভাবে এ দিন নিজেদের খেলাটাই ভুলে গেলেন টোনি দোভালেরা, পরের ম্যাচগুলিতেও সে রকম হলে হলে কিন্তু পনেরো বছর পরে আই লিগ জেতার রাস্তা ফের কঠিন হয়ে যেতে পারে। বহু বছর পরে আই লিগের সাধারণ একটি ম্যাচ দেখতে যুবভারতীতে হাজির হয়েছিলেন প্রায় চুয়াল্লিশ হাজার সমর্থক। অঙ্কের বিচারে লিগের শেষ ডার্বির চেয়েও যে সংখ্যাটা ছিল বেশি। সেই কবে লাল-হলুদের কোচ থাকার সময় ট্রেভর জেমস মর্গ্যন পরপর দু’বছর এবং তারপর আমার্ন্দো কোলাসো খেতাবের খুব কাছে পৌঁছে দিয়েও শেষ মুহূর্তে ছিটকে গিয়েছিলেন। তখনও কিন্তু সল্টলেকে ম্যাচ দেখতে এত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক আসেননি। এ বার আসছেন। তার কারণ দুটো। এক) খেতাব জেতা যে সম্ভব, এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন তাঁরা। দুই) ইস্টবেঙ্গলের পাসিং ফুটবলের সুগন্ধীতে মাতোয়ারা সমর্থকেরা। কিন্তু এ দিন চার্চিলের বিরুদ্ধে অন্তত তাদের এই দু’টো বিশ্বাসেই ধাক্কা লেগেছে।

কথা দিয়েছিলেন এই ম্যাচে গোল করবেন, কথা রাখলেন উইলিস প্লাজ়া।

লাজংয়ের বিরুদ্ধে জবি, এনরিকেরা যে পাসের ফুলঝুরি ছুটিয়েছিলেন, তার কণামাত্রও এ দিন দেখাতে পারেননি আলেসান্দ্রোর ছাত্ররা। ডিকার গোল বাদ দিলে, কর্নার বা ফ্রি কিকে সেই ধারও যে উধাও। স্প্যানিস কোচের দলের তো এগুলোই ইউএসপি। আলেসান্দ্রো রেগে গিয়ে বললেন, ‘‘চার্চিল ধংসাত্মক ফুটবল খেলেছে। আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতেই দেয়নি।’’ জবিদের কোচের কথাটা আংশিক সত্যি। ইস্টবেঙ্গলকে বিপদে ফেলতে নিখুঁত অঙ্কের ফুটবল খেললেন খালিদ আউচো, উইলিস প্লাজ়ারা। ইস্টবেঙ্গলের বাতিল এই দুই ফুটবলারই উদ্বেগে রেখে দিলেন গ্যালারিকে। প্লাজ়া গোল করে এগিয়ে দেন চার্চিলকে। ১৮টি গোল হয়ে গেল তাঁর। ইস্টবেঙ্গলের স্টপার বোরখা গোমেজের শ্লথ গতির সুযোগ নেন প্লাজ়া। আর আউচো নড়তেই দেননি জবি, এনরিকে, টোনি দোভালেদের। লাল-হলুদ ফুটবলাররা বল ধরলেই কাশিম, নিকোলাস ফার্নান্ডেজ, অ্যান্টনি উলফরা তা কেড়ে নেওয়ার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন। ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ আর স্ট্রাইকারদের মাঝে চার্চিল দেওয়াল তুলে দিয়েছিল। এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে ‘প্ল্যান বি’ প্রয়োগ করলেন না আলেসান্দ্রো, সেটাই আশ্চর্যের। উইং প্লে-র অস্ত্র বেরলোই না স্প্যানিশ কোচের আস্তিন থেকে। টোনি দোভালে পারছেন না দেখেও তাঁকে কেন খেলিয়ে যাওয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।

সৌন্দর্যের ফুটবল কালিমালিপ্ত হল চোরাগোপ্তা মারামারি এবং গা জোয়ারি ফুটবলে। ত্রিপুরার রেফারি রক্তিম সাহার বাঁশিতে বারবার থমকে গেল ম্যাচ। প্রচুর হলুদ কার্ড হল। রেফারির দিকে তেড়েও গেলেন দু’দলের ফুটবলাররা।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, লালরাম চুলোভা, জনি আকোস্তা, বোরখা গোমেস, মনোজ মহম্মদ (সামাদ আলি মল্লিক), লালরিনডিকা রালতে, কাশিম আইদারা, টোনি দোভালে (হাইমে কোলাদো), লালদানমাউইয়া রালতে (ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ), এনরিকে এসকুইদে, জবি জাস্টিন।

চার্চিল ব্রাদার্স: ভিগ্নেশ ভাস্করণ, ওয়েন ভাজ, রোয়িলসন রদরিগেস (সুরজ), নেনাদ নোভাকোভিজ, জোভেল মার্টিনস, চেষ্টারপল লিংডো, খালিদ আউচো, অ্যান্টনি উলফ (কেভিন লোবো), নিকোলাস ফার্নান্ডেজ, উইলিস প্লাজ়া, ক্রাইস্ট রেমি (উত্তম রাই)।

Football I League 2018-19 East Bengal Churchill Brothers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy