Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাইয়ে নিশ্ছিদ্র পাহারায় বিশেষ মহড়া জবিদের

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আই লিগের ফিরতি ডার্বির আগে রণনীতি ফাঁস হওয়ার ভয়ে যুবভারতীর বদলে সাইয়ের মাঠে অনুশীলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া।

প্রস্তুতি: ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে কোলাদো এবং এনরিকে।—ছবি টুইটার।

প্রস্তুতি: ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে কোলাদো এবং এনরিকে।—ছবি টুইটার।

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

সল্টলেকের সাই কমপ্লেক্স না ওয়াঘা সীমান্ত!

আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গেট পাহারা দিচ্ছেন সিআইএসএফের জওয়ানেরা। ভিতরে ঢোকার অনুমতি তখনই মিলবে, যদি আপনার প্রশ্নের উত্তরে সন্তুষ্ট হন নিরাপত্তা কর্মীরা। অথবা আপনি যদি আগে থেকে অনুমতি নিয়ে থাকেন। বৃহস্পতিবার সকালে কড়াকড়ি যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল।

কেন? মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আই লিগের ফিরতি ডার্বির আগে রণনীতি ফাঁস হওয়ার ভয়ে যুবভারতীর বদলে সাইয়ের মাঠে অনুশীলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া। মাঠ চূড়ান্ত করার সময়েই লাল-হলুদ শিবিরের তরফে সাই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোচ রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করাবেন। তিনি চান না এনরিকে এসকুয়েদা, জবি জাস্টিনেরা ডার্বির তিন দিন আগে কী ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তা সবাই জেনে যাক। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি থেকে সাধারণ সমর্থক— বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকালে কাউকে যেন সাই কমপ্লেক্সে ঢুকতে না দেওয়া হয়। ডার্বির আগের দিন অবশ্য যুবভারতী সংলগ্ন মাঠেই অনুশীলন করাবেন আলেসান্দ্রো।

তা হলে এই দু’দিন কেন এত গোপনীয়তা? আই লিগে প্রথম পর্বের ডার্বিতে চোটের কারণে খেলতে পারেননি সবুজ-মেরুন শিবিরের প্রধান ভরসা সনি নর্দে। হাইতি তারকা এখন সম্পূর্ণ ফিট। নতুন কোচ খালিদ জামিল রবিবারের ফিরতি ডার্বিতে পূর্ণশক্তির দলই নামাচ্ছেন। এই কারণেই কি উদ্বেগ বাড়ছে রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ দলের প্রাক্তন কোচের?

খোঁজ নিয়ে জানা গেল অন্য তথ্য। জোসে মোরিনহো থেকে জ়িনেদিন জ়িদান— অধিকাংশ কোচই ম্যাচের আগের দিন হাল্কা অনুশীলন করান। আসল প্রস্তুতি তাঁরা সেরে ফেলেন দু’দিন আগে। যেখানে ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়া থেকে প্রতিপক্ষের রণকৌশল ব্যর্থ করার মহড়া, এই দু’দিনেই করে ফেলতে চান তাঁরা। যাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে ম্যাচের দিন তরতাজা হয়ে মাঠে নামতে পারেন ফুটবলারেরা।

২০০৯-’১১ রিয়াল মাদ্রিদের রিজার্ভ দলের কোচ ছিলেন আলেসান্দ্রো। ২০১০ সালে রিয়ালের প্রথম দলের দায়িত্ব নেন মোরিনহো। দু’জনে একসঙ্গে অনেকটা সময়ই কাটিয়েছেন। আলেসান্দ্রোর মধ্যে দ্য স্পেশ্যাল ওয়ানের প্রভাব তো থাকবেই!

ডার্বির বাহাত্তর ঘণ্টা আগে গোপনে কী বিশেষ অনুশীলন করালেন লাল-হলুদ কোচ? জানা গিয়েছে, এ দিন সাইয়ের মাঠে তিনি বিভিন্ন ধরনের অনুশীলন করিয়েছেন। প্রথম পর্বে ছিল এসএকিউ ট্রেনিং। অর্থাৎ গতি ও ক্ষিপ্রতা বাড়ানোর অনুশীলন। ওয়ার্ম আপের পরে ফিজিক্যাল ট্রেনার কার্লোস নোদার ফুটবলারদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে এই অনুশীলন করান। কারণ ম্যাচে বিপক্ষের ফুটবলারেরা ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য গতি বাড়িয়ে বারবার জায়গা পরিবর্তন করেন। ডার্বিতে মোহনবাগানের সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কারা যাতে তা করতে না পারেন তার জন্য শুধু সতর্ক থাকলেই হবে না, ক্ষিপ্রতাও বাড়াতে হবে লাল-হলুদ ডিফেন্ডারদের। এসএকিউ ট্রেনিং সেই কারণেই।

দ্বিতীয় পর্বে ছিল গ্রিড ট্রেনিং। পাঁচের বিরুদ্ধে এক। অর্থাৎ, পাঁচ জন ফুটবলার নিজেদের মধ্যে পাস খেলবে। তাঁদের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার জন্য থাকবেন মাত্র এক জন। পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এক জন কী ভাবে লড়াই করবেন? কোচেদের যুক্তি, ম্যাচের মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে, যখন কেউ একা রয়েছেন রক্ষণে। বাকিরা কেউ তাঁকে সাহায্য করার অবস্থায় নেই। এই পরিস্থিতিতে হয়তো প্রতিপক্ষের চার-পাঁচ জন ফুটবলার নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে খেলতে উঠে আসছেন। তখন এই এক জনের উপরেই নির্ভর করবে দলের ভাগ্য।

তৃতীয় পর্বে ম্যাচ অনুশীলন। কিন্তু মাঠের আয়তন কমিয়ে! কেন? ছোট মাঠে ফাঁকা জায়গা কম পাওয়া যায়। ম্যাচেও এই ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে পারেন খাইমে সান্তোস কোলাদোরা। ভিড়ের মধ্যে থেকেও যাতে নিজের দলের ফুটবলারকে খুঁজে নিয়ে তাঁরা নিখুঁত পাস দিতে পারেন, তার মহড়াও চলল।

চতুর্থ পর্বে স্ট্রাইকারদের নিয়ে আলাদা করে ডার্বির প্রস্তুতি সারলেন আলেসান্দ্রো। মোহনবাগান যে ছকে রক্ষণ সাজায়, সে ভাবে ম্যানিকুইন (পুতুল) রেখে জবি-এনরিকেদের অনুশীলন করালেন তিনি।

রবিবাসরীয় অগ্নিপরীক্ষার প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে রাজি নন ইস্টবেঙ্গলের চাণক্য!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE