Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দু’বছর ‘নকল’ চেকই পাচ্ছেন লিগের সেরারা

রহস্যের চেক-ই বটে! আই লিগে প্রতি ম্যাচের শেষে প্লাস্টিকের ল্যামিনেট করা চেকের বিশাল প্রতিলিপি উপহার দেওয়া হয় ফুটবলারদের। তুলে দেন কোনও নামী প্রাক্তন ফুটবলার বা ক্লাব কর্তা।

এমন দৃশ্যই দেখা যায় ম্যাচের পর।

এমন দৃশ্যই দেখা যায় ম্যাচের পর।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

যুবভারতীতে শনিবার বিকেলে মোহনবাগানের অনুশীলন শেষ। পোশাক বদলে হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছেন দিপান্দা ডিকা। ক্লাব কর্তারা হাত ধরে টানাটানি করছেন, ক্যামেরুন স্ট্রাইকার কিছুতেই টিভি ক্যামেরার সামনে বসতে রাজি নন।

এ দিকে আই লিগের স্পনসর যে টি ভি চ্যানেল তাদের সংবাদিকরা ক্যামেরা আর প্রশ্ন তৈরি করে চেয়ার সাজিয়ে বসে আছেন। সোমবারের মোহনবাগান-গোকুলম ম্যাচের আগে নির্ধারিত প্রাক-সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। কিন্তু ডিকা নাছোড়। শুধু বলছেন, ‘‘ফেডারেশন আমার প্রাপ্য টাকা দেয়নি। ওদের সঙ্গে কথা বলব না।’’ শেষ পর্যন্ত ডিকা রাজি হলেন বটে, কিন্তু এরপরই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলে দিলেন, ‘‘গতবার শিলং লাজংয়ের হয়ে খেলে আই লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পঞ্চাশ হাজার টাকা এখনও পাইনি। আমার এজেন্টের হাতে শুধু ট্রফি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। চেক দেওয়া হয়নি। এরপর একজন ফুটবলার খেলার মোটিভেশন পাবে কী করে?’’ উল্লেখ্য, এ বারের লিগে এখনও সর্বোচ্চ গোলদাতা রয়েছেন ডিকা-ই।

কিন্তু তখন কে জানত কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে পড়বে ফেডারেশনের নকল বা প্রতিলিপি চেকের রহস্য।

রহস্যের চেক-ই বটে! আই লিগে প্রতি ম্যাচের শেষে প্লাস্টিকের ল্যামিনেট করা চেকের বিশাল প্রতিলিপি উপহার দেওয়া হয় ফুটবলারদের। তুলে দেন কোনও নামী প্রাক্তন ফুটবলার বা ক্লাব কর্তা। এবং সেটা মাঠ থেকে সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারিত হয়। কিন্তু সেই দেখানোই সার, গত দু’বছর ধরে আসল টাকাটাই পাননি দুই প্রধানের কোনও ফুটবলার।

এখানেই অবশ্য শেষ নয়। অস্ত্রোপচার করতে সনি নর্দে আর্জেন্তিনা যাওয়ার আগে মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে পুরস্কারের টাকা নিয়ে রীতিমতো দড়ি টানাটানি হয়েছিল বলে খবর। দু’বছর আগে গুয়াহাটি ফেডারেশন কাপে টুনার্মেন্টের সেরার ট্রফি দেওয়া হয়েছিল সনির হাতে। দেওয়া হয়েছিল আড়াই লাখ টাকার চেকের প্রতিলিপি। কিন্তু দু’বছরে আসল টাকাটাই পাননি হাইতি মিডিও। সনি নাকি বিশ্বাসই করছিলেন না, সেই টাকা ক্লাবে আসেনি। তাঁকে ফেডারেশনের স্পনসরের কাছে পাঠানো বিভিন্ন মেলের কপি দেখিয়ে শান্ত করা হয়। ডিকার আগে ২০১৫-১৬ সালে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন আর এক বিদেশি কর্নেল গ্লেন। তিনিও ট্রফি আর প্লাস্টিকের চেক নিয়ে দেশে ফিরে গিয়েছেন। প্রাপ্য টাকা পাননি।

মোহনবাগান থেকে যা হিসাব দেওয়া হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গত দু’বছরে সতেরো জন ফুটবলার ম্যাচ সেরার পুরস্কারের টাকা পাননি। ইস্টবেঙ্গলেও একই অবস্থা। শীর্ষ কর্তারা যা হিসাব দিচ্ছেন তাতে লাল-হলুদে খেলা পনেরো জন ফুটবলারের ম্যাচ সেরার টাকা বকেয়া। এতো গেল, গত দু’বছরের হিসাব। তখন ম্যাচ সেরা পেতেন দশ হাজার। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার। এ বারও আসেনি কোনও আসল চেক। মোহনবাগানের এক অফিস কর্মী দেখালেন, মোট আটটি মেল করেছেন ফুটবলারদের টাকার জন্য দরবার করে। প্রতিবারই উত্তর এসেছে, ‘‘দেখছি।’’ কেন ম্যাচ সেরা ফুটবলাররা প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না? ফেডারেশন সচিব কুশল দাশ দিল্লি থেকে বললেন, ‘‘আমি জানি না। ওটা আই লিগের সিইও-কে জিজ্ঞাসা করুন।’’ আই লিগের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুনন্দ ধরকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। এসএমএসেরও জবাব দেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE