প্লাজা-রবিন। ফাইল চিত্র
ফেডারেশন কাপের ডার্বিকে কেন্দ্রে করে কটকের ঘুম না ভাঙলেও উত্তাপ বাড়িয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা!
কী ভাবে সনি নর্দে-কে আটকাতে হবে, শনিবার বিকেলে কটকের পুলিশ মাঠে ডিফেন্ডারদের শেখাচ্ছিলেন প্রধান ফুটবল পরামর্শদাতা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। সবুজ-মেরুন তারকার ভূমিকায় অবিনাশ রুইদাস। তাঁকে আটকাবেন দুই সাইডব্যাক রাহুল ভেকে ও নারায়ণ দাস। কারণ, উইং দিয়েই আক্রমণে ওঠেন সনি। বেশ কয়েকবার অবিনাশ বল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে বিরক্ত মনোরঞ্জন সাইডব্যাককে বলছিলেন— সনিকে বল নিয়ে কাট করে ভিতরে ঢুকতে দিলেই বিপদ। তাতেও কাজ না হওয়ায় নিজেই নেমে পড়লেন মাঠে। দেখালেন, কী ভাবে ট্যাকল হবে।
ডার্বিতে সনি-কে নিয়েই আতঙ্কে ইস্টবেঙ্গলের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে সমর্থকরা। ব্যতিক্রম ফুটবলাররা। প্র্যাকটিসের পরে ডিফেন্ডার গুরবিন্দর সিংহ রীতিমতো হুঙ্কার দিলেন, ‘‘কে সনি নর্দে? ও বল নিয়ে বেরিয়ে যাবে, সেটা নিশ্চয়ই আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব না।’’
লাল-হলুদ শিবিরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র রবিন সিংহ। ড্রেসিংরুম থেকে টিম বাস— সর্বক্ষণ তাঁর মিউজিক সিস্টেমে জোরে গান বাজছে। দলের বাকি ফুটবলাররা বলেন, ‘‘রবিন তো আমাদের ডিজে।’’ শনিবার কটকে ডার্বি ও সনি-র প্রসঙ্গ উঠতে সেই রবিনও বদলে গেলেন। চোয়াল শক্ত করে বললেন, ‘‘গোল যে একা সনি করে না, কাল বুঝিয়ে দেব। যাঁরা আমাদের পিছিয়ে রাখছেন, আশা করছি তাঁরাও ম্যাচের পরে জবাবটা পেয়ে যাবেন।’’
সাত বছর আগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কটকেই প্রথমবার ফেডারেশন কাপ জিতেছিলেন রবিন। এ বারও তার পুনরাবৃত্তি চান। বলছিলেন, ‘‘কটকে ২০১০ সালে বাবা-মায়ের সামনেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। আশা করছি, বাবা-মা এ বারও গ্যালারি থেকে ফাইনাল দেখবেন।’’
গুরবিন্দর বা রবিন শুধু নন, ইস্টবেঙ্গলের পুরো দলটাই ডার্বির চব্বিশ ঘণ্টা আগে হঠাৎ করেই অসম্ভব তেতে উঠেছে। অথচ দু’দিন আগে ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে ওঠার পরেও ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। কারণ, সব দলেই চার জন বিদেশি। একমাত্র ইস্টবেঙ্গলই খেলছে তিন বিদেশি নিয়ে। তার মধ্যে রক্ষণের প্রধান ভরসা ইভান বুকেনিয়া চোটের কারণে আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটা খেলতেই পারেননি। ডার্বিতেও তাঁর খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। কিন্তু সেমিফাইনালে সামনে মোহনবাগান পড়তেই বদলে গিয়েছে আবহ। জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির ডার্বিতে অদৃশ্য স্টেনগান থেকে গুলি চালিয়ে গোলের উৎসব করেছিলেন। সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়াতেই নাকি তেতে উঠেছেন রবিন-রা। ফুটবলারদের এই আগুনে মেজাজ দেখে শনিবার বিকেল থেকে অনেকটাই চাপমুক্ত টিম ম্যানেজমেন্ট। সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরীর কথায়, ‘‘প্রতিপক্ষ মোহনবাগান হওয়ায় ফুটবলাররা বাড়তি উদ্বুদ্ধ থাকবে। আমাদের কাজটা সহজ হয়ে যাবে।’’
রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় ডার্বি ছাড়াও আরও একটা আকর্ষণ হচ্ছে সনি বনাম ওয়েডসন দ্বৈরথ। লাল-হলুদ তারকা অবশ্য বলছেন, ‘‘সনির সঙ্গে আমার কোনও লড়াই নেই। তবে আগের ডার্বিতে গোল করে সনি এগিয়ে রয়েছে। কাল আমি তার বদলা নিতে চাই।’’
ফেডারেশন কাপে দর্শক টানতে টিকিটের দাম তিরিশ টাকা রেখেছিল আয়োজক ওড়িশা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু ৫৫ হাজারের বরাবাটির এক শতাংশও এত দিন ভর্তি হয়নি। গত চব্বিশ ঘণ্টায় বদলাচ্ছে ছবিটা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে খেলা দেখতে আসছেন দুই প্রধানের সমর্থকেরা। আয়োজকদের এক শীর্ষ কর্তা অভিজিৎ পালের দাবি, ‘‘ডার্বির টিকিটের চাহিদা বাড়ছে। আশা করছি হাজার দর্শক হবে মাঠে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy