Advertisement
E-Paper

সুহেইরের হ্যাটট্রিকে ময়দানে ইয়াকুবুর ছায়া

সুহেইর ভিপি হ্যাটট্রিক করার যে এমন মঞ্চ পেয়ে যাবেন সম্ভবত নিজেও ভাবেননি। ম্যাচের আধ ঘণ্টা পর যখন তাঁকে ধরা গেল তখনও মনে হল অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫১
প্রথম গোলের পরে সুহেইরের লাফ। ছবি:সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রথম গোলের পরে সুহেইরের লাফ। ছবি:সুদীপ্ত ভৌমিক

লাল-হলুদ পতাকায় ঢেকে যাওয়া গ্যালারি দাঁড়িয়ে পড়ল তাঁর মাঠ ছেড়ে বেরোনোর সময়। আকাশে উড়ল আবির। জ্বলছিল মশাল।

তিনি যখন তাঁবু ছেড়ে বেরোচ্ছেন তখন লাল-হলুদ আলোর রোশনাই মাঠ জুড়ে। একদিন পর ইস্টবেঙ্গলের ‘স্পোর্টস ডে’। শনিবাসরীয় বিকেলে করা তাঁর হ্যাটট্রিকটা যেন সেই উৎসব আরও রঙিন করল।

সুহেইর ভিপি হ্যাটট্রিক করার যে এমন মঞ্চ পেয়ে যাবেন সম্ভবত নিজেও ভাবেননি। ম্যাচের আধ ঘণ্টা পর যখন তাঁকে ধরা গেল তখনও মনে হল অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে। দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বলে দিলেন, ‘‘ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’’ আই এম বিজয়নকে আইডল করে বড় হওয়া কেররেল ফুটবলারটির ময়দানে এটা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। গতবার ইউনাইটেডের জার্সিতে জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে তিন গোল করেছিলেন। তারপর আবার। এ দিনের গোলগুলির মধ্যে প্রথম গোলটাকেই এগিয়ে রাখছেন এ দিনের নায়ক। দাদা ফুটবল খেলতেন। এখন কোচিং করান। বাড়িতে ফুটবল পরিবেশ। তারকা হওয়ার জেদ এতটাই যে, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ত্রিবাঙ্কুরের চাকরি পেয়েও ছেড়ে দিয়েছেন। গত বছর আই লিগে ট্রেভর মর্গ্যান তাঁকে টিমে না রাখলেও সুহেইর ভেঙে পড়েননি। প্রমান করলেন, সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন।

মাঠে কী সাবলীল চলাফেরা! কী আগুন পায়ে! চোরা একটা গতি আছে। বল পায়ে পড়লেই তার বিস্ফোরণ ঘটে। অনেকটা ইউসুফ ইয়াকুবু ঘরানার স্ট্রাইকার সুহেইরের। গোলটা চেনেন। ড্রেসিংরুমেও না কি ইয়াকুবুর ফটোকপি। তিন বেলা নমাজ পড়েন। সব অর্থেই টিম ম্যান। খেলার মধ্যেও সেই শৃঙ্খলার বহিঃপ্রকাশ। বৃষ্টির ভারি মাঠে সুহেইরের তিন গোল দেখলে দীপা কর্মকারের কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী নিশ্চয়ই চেঁচিয়ে বলতেন, ‘‘পারফেক্ট টেন।’’

সাত বছর আগে এ রকম এক বিকেলে শিলিগুড়ির মাটিগড়ার ছেলে বিকাশ নার্জারিন লাল-হলুদ জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। অভিযেক ম্যাচেই। সেটাও ছিল মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ। বিকাশ হারিয়ে গিয়েছেন পরিচর্যার অভাবে। তারকা হতে পারেননি। সুহেইরের সুবিধা তিনি খালিদ জামিলের মতো একজন কোচের হাতে পড়েছেন। মননে এবং ভাবনায় যাঁর সঙ্গে তাঁর মিল হতে বাধ্য। কলকাতা লিগ বহু তারকার ধাত্রীগৃহ। সুহেইর তার আর একটা সংস্করণ হতে চলেছেন হয়তো।

কিন্তু ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর উইলস প্লাজাকে নিয়ে কী আর স্বপ্ন দেখা উচিত? অভিজ্ঞতায় হাঁটুর বয়সী সুহেইরের পাশে এ দিন তাঁকে বিবর্ণ দেখাল। গোলে বল মারবেন কী, নড়তেই তো পারছিলেন না প্লাজা। কোচ খালিদ তাঁকে আড়াল করলেন এই বলে, ‘‘ও জায়গা করে দিয়েছিল বলেই সুহেইরের গোল করা সহজ হয়েছে।’’

লাল-হলুদে এটাই ছিল খালিদ জামিলের অভিষেক ম্যাচ। বিরতির পর এক মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ ৩-০। খেলার শেষে ফল ৪-১। কোনও কোচই এরকম সুখের দিনে বিতর্কিত কথা বলে নিজের অস্ত্রাগারে আগুন লাগাতে চাইবেন না। খালিদের টিমের খেলা দেখে অবশ্য মনে হল, আইজল মডেল আনতে চাইছেন ইস্টবেঙ্গলেও। তারকা প্রথা নয়, টিম গেমেই আস্থা রাখছেন তিনি। ফলে প্লাজা বা তাঁর স্বদেশীয় কার্লাইল মিচেলকে ফ্যাকাশে দেখালেও টিমে তার প্রভাব নেই। সুহেইর, রালতে, সামাদ, ব্র্যান্ডন, লালরামচুলোভারা ঢেকে দিচ্ছেন সবকিছু। ব্র্যান্ডনের গোলটা সেই মডেলের সুফল।

জেলার টিম রেনবো অনুশীলন ম্যাচে যতটা সুন্দর, লিগে ততটাই কুৎসিত। ৪-৫-১ এ টিম নামিয়ে নিউ ব্যারাকপুরের টিমটা শুরুতেই সুবিধা করে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। এ রকম বৃষ্টির আবহে মাঝমাঠ জমাট রেখে বিপক্ষকে রোখার স্ট্র্যাটেজি কাজে লাগে না। লাগেওনি। খালিদ তাঁর টিমের উইংকে সচল করে রেনবোকে বোকা বানিয়ে ছাড়লেন। রেনবো কিপার অঙ্কুর দাশ গোটা তিনেক নিশ্চিত গোল সেভ না করলে হাফ ডজন গোল খেতেই পারত তড়িৎ ঘোষের টিম।

কলকাতা লিগে আটে আট করার রাস্তায় নেমে প্রথম ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ঝুঁকি নেননি। ফেডারেশন কর্তাদের অনুরোধ করে জাতীয় শিবিরে যেতে চাওয়া দুই ফুটবলার অর্ণব মণ্ডল, মহম্মদ রফিককে এই ম্যাচে খেলার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই দু’জন পরের অনেকগুলো ম্যাচে থাকবেন না। তখন কী ইস্টবেঙ্গল এত মসৃণ গতিতে ম্যাচ জিতবে?

চার গোলে জেতা অবস্থায় রেনবোর ছোট্টু মণ্ডলের গোলটা সেই প্রশ্ন কিন্তু তুলে দিয়ে গেল।

ইস্টবেঙ্গল: লুই ব্যারেটো, সামাদ মল্লিক, অর্ণব মন্ডল, কার্লি মিচেল, লালরামচুলোভা, আল আমনা, মহম্মদ রফিক, ব্র্যান্ডন (ইয়ামি), রালতে (সুরাবুদ্দিন), উইলিস প্লাজা, সুহেইর ভিপি (কেভিন লোবো)।

Suhair Calcutta Football League East Bengal Rainbow AC রেনবো এসি ইস্টবেঙ্গল Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy