Advertisement
০৮ মে ২০২৪

শেষ হুঁশিয়ারি, এখন খাদের ধারে রাশিয়া

গুনে দেখলে আর ৩৭০ দিনও নেই। রাশিয়ার ঘাসে নেমে পড়বেন বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার, আলেক্সিস সাঞ্চেজ, হয়তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও। ২০১৭-র জুনে, কনফেডারেশন কাপে।

আইসল্যান্ড ম্যাচে রোনাল্ডো। খেলা যদিও ১-১ ড্র। মঙ্গলবার। ছবি: এপি

আইসল্যান্ড ম্যাচে রোনাল্ডো। খেলা যদিও ১-১ ড্র। মঙ্গলবার। ছবি: এপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ১১:০৫
Share: Save:

গুনে দেখলে আর ৩৭০ দিনও নেই। রাশিয়ার ঘাসে নেমে পড়বেন বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার, আলেক্সিস সাঞ্চেজ, হয়তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও। ২০১৭-র জুনে, কনফেডারেশন কাপে।

‘বিশ্বযুদ্ধের’ আগের বছর সেটা। ২০১৮-য় সেই রাশিয়াতেই বিশ্বকাপ খেলতে আসার কথা লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র, রোনাল্ডোদের।

সেই আয়োজক দেশের মাথায় কি না ঝুলছে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বহিষ্কারের খাঁড়া!

আর হুঁশিয়ারি নয়। উয়েফা আজ সরকারি ভাবে রাশিয়াকে জানিয়ে দিল, আর এক বার তাদের সমর্থকেরা কোনও রকম হিংসায় জড়ালেই টিমকে ইউরো থেকে বের করে দেওয়া হবে। দেড় লক্ষ ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে রাশিয়াকে।

তাতেও ঝামেলা থামছে কই!

আজই দুপুরে প্যারিস থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে লিলে শহরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সমর্থকদের সঙ্গে মারপিট বেধেছে রুশদের। কিছু ছবি ও ভিডিও আপলোড করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, লিলের মেট্রো স্টেশনের কাছে এক পানশালায় ঝামেলাটা শুরু করেছে রুশ সমর্থকেরাই। চেয়ার ছুড়তেও দেখা গিয়েছে তাদের। এই ঘটনায় দু’জন রুশকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার লিলে শহরে রয়েছে রাশিয়া বনাম স্লোভাকিয়া ম্যাচ। আর বৃহস্পতিবার লিলের কাছেই লেন্স শহরে লড়াই ওয়েলস-ইংল্যান্ডের। লিলেতে তাই সব দলের সমর্থকদেরই জড়ো হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। অশান্তি এড়াতে লেন্সে মোতায়েন হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ। নিষিদ্ধ হয়েছে রাস্তায় মদ্যপান। হিংসা রুখতে চূড়ান্ত অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। এ দিনই লিলেতে রাশিয়ার সমর্থক ভর্তি একটি বাস থামিয়ে ২৯ জনকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বার্তা পরিষ্কার— এখনই স‌ংযত হও, নইলে চরম শাস্তি।

আজ লিলেতে গণ্ডগোলের সময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা স্লোগান দিতে দেখা যায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সমর্থকদের। সমর্থকদের সামলাতে না পারলে শাস্তির হুঁশিয়ারি ইংল্যান্ডকেও কিন্তু দিয়ে রেখেছিল উয়েফা। যদিও সরকারি ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। রাশিয়ার ক্ষেত্রে যে এতটা কড়া অবস্থান নেওয়া হল, তার নেপথ্যে শুধু দর্শক হিংসাই একমাত্র কারণ কি না, তা নিয়ে চর্চার অবকাশ থাকছে।

কেন? কারণ দেখা যাচ্ছে, গত শনিবার মার্সেইয়ের হাঙ্গামার পরেও রাশিয়ার নেতা-কর্তাদের কেউ কেউ উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। রুশ ফুটবল সংস্থার অন্যতম কর্তা ইগর লেবেদেভ বলেছেন, ‘‘দারুণ কাজ করেছ ছেলেরা। চালিয়ে যাও।’’ খোদ রাশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী ভিতালি মুটকোর বিরুদ্ধে মার্সেইয়ের স্টেডিয়ামে হাজির থেকে সমর্থকদের তাতানোর অভিযোগ উঠেছে। অথচ মুটকো অশান্তির পুরো দায় আয়োজকদের উপরেই চাপাতে চেয়েছেন। এই সমস্ত ঘটনাই উয়েফাকে এতটা কড়া হতে বাধ্য করল বলে মনে করা হচ্ছে।

নভেম্বরের জঙ্গি হানার জেরে এমনিতেই ফ্রান্সে ইউরো চলছে চরম সতর্কতা মাথায় নিয়ে। তার ওপর সোমবার জঙ্গিদের হাতে সস্ত্রীক খুন হয়েছেন এক ফরাসি পুলিশ অফিসার। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। এ সবের মধ্যেই পুলিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ফুটবল-দাঙ্গার আশঙ্কা। রুশ কোচ লেনয়েড স্লাটস্কি অবশ্য ‘ফ্যান’দের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। বলেছেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত, সে দিনের মতো কিছু আর ঘটবে না।’’ সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘আমরা রাস্তায় মারামারির কোনও প্রতিযোগিতায় নামিনি। দয়া করে আপনারা ফুটবলে ফোকাস করুন।’’

২০১২ ইউরোতেও ভ্লাদিমির পুতিনের দেশকে শাস্তির মুখে ঠেলে দিয়েছিল সমর্থকদের আচরণ। মঙ্গলবারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবশ্য পাল্টা আবেদন করার সুযোগ আছে রাশিয়ার। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রী মুটকো, যিনি আবার রাশিয়ার ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্টও, সে পথে না হাঁটার ইঙ্গিতই দিয়েছেন। উয়েফার সিদ্ধান্তকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলতেও ছাড়েননি তিনি।

শুধু কি ইউরো? ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে অলিম্পিক— প্রত্যেকটা আসন্ন মহাযুদ্ধ ঘিরেই কালির দাগ লেগেছে রাশিয়ার নামে। ঘুষ দিয়ে ২০১৮-র বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। সঙ্গে জুড়েছে ডোপিং কেলেঙ্কারি। যে অভিযোগে গত নভেম্বর থেকে রাশিয়ার ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিটদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স সংস্থা আইএএএফ। অভিযোগ উঠেছিল, খোদ রুশ সরকারই নাকি অ্যাথলিটদের প্রথমে ডোপিং করতে, তার পর সব ধামাচাপা দিতে সাহায্য করেছে।

গত সপ্তাহে জার্মান মিডিয়ায় নতুন করে অভিযোগ আনা হয়— ডোপিংয়ের তথ্যপ্রমাণ চাপা দেওয়ার ঘটনায় নাকি সরাসরি যুক্ত রাশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী মুটকো। ক্রীড়ামন্ত্রী সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও শুক্রবার ভিয়েনায় এই নিয়ে আইএএএফের বৈঠক বসছে। যেখানে অগস্টের পরেও রুশদের নির্বাসন বজায় রাখা হলে রিও অলিম্পিকে নামা হবে না তাদের অ্যাথলিটদের।

খেলার গ্রহে রাশিয়ার সত্যিই এখন শনির দশা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Euro 2016 England Russia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE