উৎসব: ডেনমার্কের জয়ের পরে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। গেটি ইমেজেস
সকালে ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মাঠে সইফ স্পোর্টিংয়ের অনুশীলন ছিল। ভারতে গত আই লিগে কলকাতার মহমেডান স্পোটিংয়ে খেলে আসার পরে বাংলাদেশে এই ক্লাবেই এখন খেলছি। অনুশীলনের জন্য রোজই রাত ন’টার মধ্যে ঘুমোতে যাই। কিন্তু শনিবার (বাংলাদেশের সময়) রাত ১২টা পর্যন্ত জেগেছি।
কারণটা, অবশ্যই ইউরোপে আমার প্রিয় দল ডেনমার্কের দুরন্ত জয়-সহ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া। গ্যারেথ বেলদের ওয়েলসকে ৪-০ হারিয়ে ক্যাসপার ডোলবার্গ, মিকেল ড্যামসগার্ডরা মাঠেই যখন উৎসবে মেতেছিল, তখন আমি যেন ঢাকার বাড়ি থেকেই মনে মনে ওদের সঙ্গে আমস্টারডামের মাঠে পৌঁছে গিয়েছিলাম। দলটায় যে আমার স্কুল ও কিশোর বয়সে ফুটবল খেলা দুই বন্ধুও রয়েছে। ড্যানিয়েল ওয়াস এবং থোমাস ডিলানি। মাস দু’য়েক আগেও যাদের হোয়াটসঅ্যাপে শুভেচ্ছা জানিয়েছি, ইউরোয় ভাল পারফরম্যান্স করার জন্য। ওরা কথা দিয়েছিল, অনেক দূর যাবে। কথা রাখার দিকেই এগোচ্ছে বন্ধুরা।
টিভিতে দেখছিলাম ২৯ বছর পরে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গোটা দলটাই আনন্দে আত্মহারা। উৎসবে মেতেছে সবাই। আনন্দে আমারও চোখ জল চলে এসেছিল। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা, তার পরে গ্রুপে দুই হারের পরে এ রকম পারফরম্যান্স দেখলে চোখের জল বাঁধ মানতে চায় না।
ঘুমোতে যাওয়ার আগে কোপেনহাগেনে আমার বাড়িতে ভিডিও কল করে দেখলাম, আমার মা (রাজিয়া)-ও আনন্দে মেতেছেন। পাড়ায় ওঁর বন্ধুদের সঙ্গে ডেনমার্কের পতাকা নিয়ে বিজয় উৎসবে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন গাড়ি নিয়ে। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটা ‘স্যাটারডে নাইট’ পালন করছে গোটা কোপেনহাগেন। মা ফোনেই বলে দিলেন, ‘‘এত দিন পরে ইউরোর শেষ আটে ডেনমার্ক। আনন্দ করতে দে।’’ মায়ের পরেই ফোন করেছিলাম আমার স্ত্রীকে। সে জার্মান সমর্থক। বলে দিল, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে এ রকম খেললে কিন্তু দুঃখ রয়েছে।’’ সবই মজার ছলে। রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে আর দেরি করিনি। রবিবার সকালে ডেনমার্কে ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম শনিবার রাতে সবাই কী রকম লাগামছাড়া আনন্দ করেছে। প্রহর গুনছে সেমিফাইনালে উঠে নজির গড়ার। আমি মনেপ্রাণে একজন বাংলাদেশী। হৃদয়ের নব্বই ভাগ সোনার বাংলার জন্য। বাকি ১০ শতাংশ ডেনমার্কের জন্য। আমাদের আদি বাড়ি কিশোরগঞ্জে। আমার জন্মের আগেই বাবা-মা বাংলাদেশ থেকে কর্মসূত্রে ডেনমার্কে চলে গিয়েছিলেন। কোপেনহাগেনেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। সে কারণেই আমি বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করলেও ডেনমার্কের সমর্থক। কারণ দেশের বাইরে ওটাও আমার আর একটা দেশ। ছিয়াশির বিশ্বকাপে ডেনমার্কের হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন মাইকেল লাউড্রপেরা। সেই মাইকেলের ছেলে ম্যাডস স্কুল দলে আমার সঙ্গেই খেলত। আমার ভাল বন্ধুও। কয়েক বার ওদের বাড়িতে গিয়ে সেই বিশ্বকাপের অনেক ছবি দেখেছি। ডেনমার্ক ১৯৯২ সালে যখন ইউরো কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়, তখন আমার বয়স এক বছর। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ডেনমার্ককে কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেনি আমার প্রজন্ম। এ বার ভাল ফলের প্রত্যাশা করছে সে দেশের সবাই। কারণটা অবশ্যই কোচ ক্যাসপার হিউলমান্ডের দুর্দান্ত দল পরিচালনা ও ফুটবলারদের কিছু করে দেখানোর তাগিদ। গত এক বছরে তার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
(লেখক বাংলাদেশের ফুটবল অধিনায়ক। ডেনমার্কে জন্ম, অনেকদিন সেখানে খেলেছেন। সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন: দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy