Advertisement
E-Paper

এবি-র ধ্বংস দেখেও বলব, বিরাট এগিয়ে

চিন্নাস্বামীতে আরসিবি বনাম গুজরাত লায়ন্স ম্যাচটা দেখলাম। আর দেখেটেখে বুঝে উঠতে পারছি না ঠিক কী ভাবে ম্যাচ রিপোর্টটা করা উচিত।

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
বিরাট কোহালি ৫৫ বলে ১০৯, বাউন্ডারি ৫, ছক্কা ৮, স্ট্রাইক রেট ১৯৮.১৮/ এবি ডে’ভিলিয়ার্স ৫২ বলে ১২৯ ন.আ, বাউন্ডারি ১০, ছক্কা ১২,  স্ট্রাইক রেট ২৪৮.০৭

বিরাট কোহালি ৫৫ বলে ১০৯, বাউন্ডারি ৫, ছক্কা ৮, স্ট্রাইক রেট ১৯৮.১৮/ এবি ডে’ভিলিয়ার্স ৫২ বলে ১২৯ ন.আ, বাউন্ডারি ১০, ছক্কা ১২, স্ট্রাইক রেট ২৪৮.০৭

চিন্নাস্বামীতে আরসিবি বনাম গুজরাত লায়ন্স ম্যাচটা দেখলাম। আর দেখেটেখে বুঝে উঠতে পারছি না ঠিক কী ভাবে ম্যাচ রিপোর্টটা করা উচিত।

এবি ডে’ভিলিয়ার্স নিয়ে লিখব? বিরাট কোহালি নিয়ে লিখব? নাকি লিখব টুর্নামেন্টে আরসিবির অসামান্য কামব্যাক নিয়ে? এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে একটা টিমকে সত্যিই টি-টোয়েন্টিতে প্রায় আড়াইশো তুলে ফেলতে দেখেছি।

মনে আছে, কয়েক দিন আগে বিরাট একটা সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেছিল যে দিন গেইল-এবি-ওয়াটসন আর ও নিজে একসঙ্গে চলবে, সে দিন কী হবে? কোন ম্যাচের পর বলেছিল, আর মনে নেই। কিন্তু এটা দেখলাম, ওদের চার জন নয়। দু’জন ঠিকঠাক চললেই বিপক্ষের উন্মাদ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হবে।

ভাবা যায়, একই আইপিএল ম্যাচে এবি-বিরাট কি না দু’জনে সেঞ্চুরি করে গেল! শেষ দিকে একটা সময় মনে হচ্ছিল, প্রত্যেক বলে বোধহয় ছয় হবে। সিঙ্গলস বা শর্ট রান দেখলে মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছি! এতটাই অবিশ্বাস্য দু’জনের ইনিংস। আসলে ডে’ভিলিয়ার্স আর বিরাট যখন একসঙ্গে খেলে আমি তো কোন ছার, গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ হয়ে দেখতে হয়।

অথচ দু’জন দু’রকমের ব্যাটসম্যান। এবি পুরোপুরি আনঅর্থোডক্স। বেশির ভাগ সময় চেষ্টা করে ক্রিকেট ম্যানুয়ালের বাইরে বেরোতে। এমন সব শট খেলতে যা বোলার দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। শনিবার প্রবীণ কুমারকে একটা ছক্কা মারতে দেখলাম যেখানে ও প্রায় অফস্টাম্পের বাইরে চলে গিয়ে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে দিল! বিশ্বে ওই শট আর কেউ খেলতে পারবে না। একমাত্র এবি-র ডিকশনারিতে। কিন্তু বিরাট একদম উল্টো। কেউ কেউ বলবেন, বিরাটকেও তো এখন স্কুপ বা রিভার্স সুইপ জাতীয় শট খেলতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কপিবুক শটের পাশে যদি তার পার্সেন্টেজ দেখেন, খুব সামান্য মনে হবে। বড়জোর পাঁচ বা দশ শতাংশ। বিরাটের ক্রিকেটটা হল, ডিফেন্স। ডিফেন্স থেকে ড্রাইভ। ড্রাইভ থেকে হাওয়ায় ড্রাইভ। পুরো ম্যানুয়াল মেনে ব্যাপারটা হবে। কিন্তু দু’জন অন্য রকম ঘরানার ব্যাটসম্যান হলেও দেখবেন, সমান বিধ্বংসী।

আর তাই দু’জনের মধ্যে আমার কাছে কোহালি এগিয়ে।

আসলে এবি যে সব শট খেলে তাতে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। যদি লাগতে থাকে, বোলারকে ধ্বংস করে ছেড়ে দেবে। ডান হাতে মারবে, বাঁ হাতে মারবে। লোকে বলে ৩৬০ ডিগ্রি প্লেয়ার। আমি বলব, ৭২০ ডিগ্রি। যতটা ভাল সুইপ মারবে, ঠিক ততটাই দুর্দান্ত রিভার্স সুইপ মারবে। কিন্তু যে সব উইকেটে বল তেমন আসবে না, দেখেছি এবি সেখানে একটু সমস্যায় পড়ে। আসলে ও সাধারণত বোলারের পেসকে নানা ভাবে ব্যবহার করে। কিন্তু যেখানে বোলার পেস অফ করে দেয়, বল পড়ে আস্তে আসতে থাকে তা হলে সেখানে এবি কিন্তু তেমন ম্যানেজ করতে পারে না। বিরাট তা নয়। যে কোনও উইকেটে, যে কোনও বোলিং খেলে দেবে। ওর টেকনিক এতটাই ভাল। স্লো উইকেটে সেটা আরও বেশি বোঝা যায়। কিন্তু তার পরেও এবি-র মতো স্ট্রাইক রেট রেখে যায় বিরাট। যেটা করা অনেক বেশি কঠিন। এ দিনই দেখুন না। ডে’ভিলিয়ার্স প্রায় আড়াইশো স্ট্রাইক রেট রেখে পুরোটা ব্যাট করে গেল। কোহালি সেখানে প্রথম দিকে একশোর একটু বেশি রাখল। পরে সেটাকেই দু’শো পার করিয়ে দিল। কোনটা তা হলে বেশি কঠিন? তা ছাড়া পরের প্রজন্ম যদি বলেন, সেখানেও বিরাটই রোলমডেল হিসেবে থাকবে। এবি নয়। আমার ছেলে যদি বলে যে, এবি-র মতো কী ভাবে ব্যাট করতে হয়, বলতে পারব না। কিন্তু বিরাট বললে বোঝাতে পারব। যে পুল, সুইপ, কাট, ড্রাইভ সব মারবে কিন্তু ম্যানুয়ালের বাইরে গিয়ে নয়।

ম্যাচ শেষে একটা টুইট দেখছিলাম, যা এক কথায় অসাধারণ। বিরাট-এবি্কে তুলনা করা হয়েছে মেসি-রোনাল্ডোর সঙ্গে। যারা একই টিমে, একই সঙ্গে খেলছে। ঠিকই। ক্রিকেটের তো ওরা মেসি-রোনাল্ডোই। বিরাট মেসি হলে, এবি রোনাল্ডো। একজন পুরোটাই শিল্প। অন্য জনের শিল্পের সঙ্গে নানা ইম্প্রোভাইজেশন। ফুটবলে কোনও দিন মেসি-রোনাল্ডোকে একসঙ্গে খেলতে দেখার সৌভাগ্য হবে কি না জানি না। কিন্তু ক্রিকেটে হচ্ছে। আমরা ভাগ্যবান যে, ক্রিকেটের মেসি-রোনাল্ডোকে একসঙ্গে খেলতে দেখছি।

ম্যাচ রিপোর্টের শেষটা করি আরসিবির টুর্নামেন্ট সম্ভাবনা দিয়ে। বিরাট সমর্থকদের শুনতে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু এটা ঘটনা যে ওদের আজকের পারফরম্যান্স দেখার পরেও প্লে অফ যাওয়া নিয়ে খুব নিশ্চিত নই আমি। এটা ঠিক যে ওরা কেকেআর ম্যাচ থেকে আরও ভয়ঙ্কর হবে। কিন্তু সব ম্যাচ জিতে প্লে অফ চলে যাবে বলতে পারছি না। আসলে ওদের যে ক’জন ম্যাচ উইনার আছে সবাই ব্যাটসম্যান। বোলার নয়। আর কোনও টুর্নামেন্টে ব্যাটসম্যান একটা-দু’টো ম্যাচ জেতাতে পারে। টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন কিন্তু করে বোলাররা। বিরাটদের সেই বোলিং কোথায়?

সংক্ষিপ্ত স্কোর: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ২০ ওভারে ২৪৮-৩ (ডে’ভিলিয়ার্স ১২৯ ন.আ, কোহালি ১০৯), গুজরাত লায়ন্স ১৮.৪ ওভারে ১০৪ (জর্ডন ৪-১১, চাহাল ৩-১৯)।

virat kohli IPL 2016 ab de villiers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy