দোহায় অনুশীলনে বেঙ্গালুরু এফসি। ছবি: সংগৃহিত।
অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার! তার পরেই একশো তিরিশ কোটির ভারত জেনে যাবে তার সুপ্রাচীন ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসের সেরা অধ্যায়টা রচনা করতে পারলেন কি না সুনীল ছেত্রীরা!
দোহায় শনিবার ভারতের প্রথম ফুটবল ক্লাব হিসেবে এশিয়া সেরা হওয়ার সুযোগ বেঙ্গালুরু এফসি-র।
পারবে?
ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্রশ্নটা শুনে প্রথমে হেসে ফেললেন চুনী গোস্বামী— চুয়ান্ন বছর আগে এশিয়ান গেমস চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। তার পরেই বলে উঠলেন, ‘‘মনেপ্রাণে সুনীলদের জয় চাই। ওদের এই একটা জয় বদলে দিতে পারে গোটা ভারতীয় ফুটবলকে।’’
অতীতে সুনীলদের এক ধাপ আগে এই টুর্নামেন্টে থেমে গিয়েছে বাংলা ও গোয়ার দুই ক্লাব। ২০০৮-এ আর্মান্দো কোলাসোর ডেম্পো। ২০১৩-এ মার্কোস ফালোপার ইস্টবেঙ্গল। দু’বারই এএফসি কাপ সেমিফাইনালে। সেই দু’টিমেই যিনি গোলকিপার ছিলেন, সেই অভিজিৎ মণ্ডলের আবার সাফ কথা, ‘‘ইরাকের টিমটা কিন্তু বেশ শক্তিশালী। তার পরেও সুনীলরা জিতলে যে কাজটা আমরা পারিনি সেটা হয়ে যাবে।’’
আর যাঁর দিকে আজ গোটা ভারতীয় ফুটবলসমাজ তাকিয়ে সেই সুনীল ছেত্রী নিজে কী বলছেন?
দোহায় এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বেঙ্গালুরু ক্যাপ্টেন বলে দিয়েছেন, ‘‘ক্লাবের হয়ে জীবনের সেরা ম্যাচটা খেলতে নামছি। গোটা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে। ভারতীয় ফুটবলের সম্মান জড়িয়ে এই ম্যাচটার সঙ্গে। পিছন ফিরতে চাই না। নিজেদের উজাড় করে দেব।’’
দেশের জার্সি গায়ে ৯১ ম্যাচে রেকর্ড ৫১ গোল করা ভারতীয় স্ট্রাইকার সঙ্গে এটাও বলতে ভোলেননি, ‘‘জীবনের ম্যাচ খেলে জিততে পারলে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে রেকর্ড হবে। সেটাই সতীর্থদেরও বারবার বলছি।’’
ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের মহাম্যাচের আগে যেন ফুটছেন বেঙ্গালুরু কোচ অ্যালবার্ট রোকা-ও। ফাইনালের প্রতিপক্ষ এয়ারফোর্স ক্লাবে ইরাক জাতীয় টিমের কমপক্ষে চার-পাঁচ জন ফুটবলার আছেন। সেই তথ্যেও যেন আতঙ্কে নেই। ‘‘কীসের চাপ? ইরাকি ক্লাবকে থামানোর সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা।’’
কিন্তু সুনীল-রোকা যতই ভোকাল টনিক চালু রাখুন তাঁদের টিম এবং সমর্থকদের জন্য, বেঙ্গালুরুর আকাশে ফাইনালের আগের দিন অশনি সঙ্কেত। দলের এক নম্বর গোলকিপার অমরিন্দর সিংহ কার্ড সমস্যায় ফাইনালে নেই। অথচ শনিবার উল্টো শিবিরে থাকছেন এ বারের এএফসি কাপের হায়েস্ট স্কোরার। ১৫ গোল করা হামাদি আহমেদ। হামাদির দুই সতীর্থ আমজাদ রাধি এবং হামাম তারিকও গোলের মধ্যে আছেন। যার সুবাদে ইরাকের ক্লাব ১১ ম্যাচে ২৬ গোল করেছে।
সেখানে আবার গ্রুপ লিগ থেকেই বেঙ্গালুরু কোচের চিন্তা তাঁর ডিফেন্স। যে ডিফেন্স ফাইনালে উঠতে গিয়ে ১০ গোল খেয়ে বসে আছে। তবে ফাইনালের আগে বেঙ্গালুরু শিবিরের জন্য সুখবরও আছে— এয়ারফোর্সও কার্ড সমস্যায় পাচ্ছে না তাদের মাঝমাঠের ভরসা বাশার রাসান এবং অভিজ্ঞ স্টপার সামাল সইদকে। ইরাকে ক্লাবটির কোচ বাসিম কাশিম ছিয়াশির বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে খেলেছেন এনজো শিফো, হুগো স্যাঞ্চেজের মতো বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তিদের বিরুদ্ধে। এএফসি কাপে এ যাবত মূলত গতি আর শক্তি দিয়ে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতে এসেছে কাশিমের টিম। শনিবার বিপক্ষের গতি থামিয়ে পাল্টা জয় ছিনিয়ে আনাই তাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ফুটবলার জীবনে ডিফেন্ডারের ভূমিকা পালন করা বেঙ্গালুরু কোচের।
ফাইনালে ইরাকিদের দাপাদাপি বন্ধ করতে রোকার ডিফেন্সে ভরসা ইংরেজ জন জনসন ও স্প্যানিশ জুয়ানান। সঙ্গে দুই ডিফেন্সিভ মিডিও আলভারো রুবিও এবং ক্যামেরন ওয়াটসন। আর আক্রমণে ঝড় তুলতে টুর্নামেন্টে পাঁচ গোল করা সুনীল তো আছেনই। সঙ্গে দুই সাইড রিনো অ্যান্টো ও নিশু কুমারও দক্ষ কাউন্টার অ্যাটাকে। ইউজেনসিন লিংডো ও অলউইন জর্জের হার না মানা মনোভাবও বেঙ্গালুরুর সম্পদ হয়ে উঠতে পারে ফাইনালে। হয়তো এ সবের জোরেই রোকা বলছেন, ‘‘কে বলল আমরা ডিফেন্সিভ খেলব? ডিফেন্সের সঙ্গে অ্যাটাকের মিশেলেই ফাইনালের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছি।’’
কাতার স্পোর্টস ক্লাব স্টেডিয়ামে এএফসি কাপ ফাইনাল ঘিরে প্রত্যাশার পারদ চড়েছে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে দেশের বাইরে অতীতে বড় সাফল্য বলতে ২০০৩-এ জাকার্তায় সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গলের আসিয়ান কাপ জেতা। কিন্তু সর্বোচ্চ এশীয় স্তরের কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে (জয়ী টিম পাবে ১৯ লাখ ডলার) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ এই প্রথম। যে মহাসুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতিহাস গড়তে মরিয়া এ দেশের মাত্র সাড়ে তিন বছরের শিশু ক্লাব!
শনিবার
এফসি কাপ ফাইনাল বেঙ্গালুরু এফসি: এয়ারফোর্স ক্লাব ইরাক (স্টার স্পোর্টস ১, রাত ৯-৩০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy