Advertisement
E-Paper

সিন্ধু হারল ওর থেকে ভাল প্রতিপক্ষের কাছে

প্রথমেই বলে রাখি সিন্ধু আর সমীরের হারে আমি কিন্তু হতাশ নই। ম্যাচটার পর সিন্ধুর ফ্লাইটের তাড়া থাকায় ওর সঙ্গে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি।

মধুমিতা বিস্ত

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৭
সিন্ধুর সান্ত্বনা রানার্স মেডেল । হংকংয়ে চ্যাম্পিয়ন তাই জু-র সঙ্গে। রবিবার। ছবি টুইটার।

সিন্ধুর সান্ত্বনা রানার্স মেডেল । হংকংয়ে চ্যাম্পিয়ন তাই জু-র সঙ্গে। রবিবার। ছবি টুইটার।

প্রথমেই বলে রাখি সিন্ধু আর সমীরের হারে আমি কিন্তু হতাশ নই।

ম্যাচটার পর সিন্ধুর ফ্লাইটের তাড়া থাকায় ওর সঙ্গে খুব বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। ডোপ টেস্টের ব্যাপারও ছিল। সেটা সেরেই সিন্ধুকে দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরতে হত। তাড়াতাড়ি তাই ব্যাগপত্র গুছিয়ে ওকে রওনা করে দিতে হল। তবে যতটুকু বুঝেছি, সিন্ধু নিজের পারফরম্যান্সে খুশি।

ব্যাডমিন্টনের বাইরেও আমার আর সিন্ধুর আড্ডা হয়। হংকংয়েই তো এক দিন আমরা বেড়িয়ে পড়েছিলাম ‘নেল আর্ট’ করাতে। আমার আবার একটা অভ্যাস হল বাইরে যেখানেই যাই সঙ্গে দেশের চা-কফির সরঞ্জাম নিয়ে যাই। সিন্ধু ব্যাপারটা জানে। তাই কখনও কখনও হোটেলে আমার ঘরে এসে আব্দার করে, ম্যাম কফি খাব।

আমরা যে হোটেলে উঠেছি সেটা স্টেডিয়ামের খুব কাছে। আজ ম্যাচের আগেও ওর সঙ্গে হোটেলে কথা হচ্ছিল। কী ভাবে তাই জু-কে সামলাতে হবে, তার একটা ছক কষছিলাম আমরা। আমাদের দু’টো স্ট্র্যাটেজি ছিল। এক, যত বেশি সম্ভব র‌্যালি করাতে হবে। দুই, দেখতে হবে ম্যাচের গতিটা কোনও ভাবেই যেন তাইজু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।

অলিম্পিক্সে এই মেয়েটাকেই সিন্ধু হারিয়েছিল। তাই জু-র দুর্বলতাগুলো আমাদের মোটামুটি জানা। কিন্তু তাতে লাভ হল না। সিন্ধু নিজের প্ল্যানগুলো কোর্টে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেও পারল না। তার পিছনে হয়তো ক্লান্তিও একটা কারণ। সেই চিন ওপেন থেকে চলছে। টানা দু’সপ্তাহ ম্যাচ খেলে যাওয়ার পর ক্লান্তি চেপে ধরাটা স্বাভাবিক। সেটাই হয়তো একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

অনেকে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, ফাইনালের চাপটা কি সিন্ধু নিতে পারছে না? দেখুন, আমি সেটা বলব না। গত চার মাসে ফাইনাল বলতে তো অলিম্পিক্স, চিন আর এখানে। তার মধ্যে চিনে সিন্ধু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আসলে কী জানেন, এ রকম টপ লেভেলের ফাইনাল জিততে গেলে দিনের দিন দু’টো জিনিস ক্লিক করতে হয়। এক, মেন্টাল কন্ডিশন। দুই, ফিজিক্যাল কন্ডিশন। এই দু’টোতেই একেবারে পিক-এ থাকলে তখনই চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। সেটাই সিন্ধুর ক্ষেত্রে হয়নি।

আসলে, এমন এমন কয়েক জন প্লেয়ার থাকে, যাদের নিয়ে আগাম কিছু বলা যায় না। প্রচণ্ড আনপ্রেডিক্টেবল। যে দিন ফর্মে থাকবে বিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দেবে। সে দিন সেই বিশ্বসেরা। ঠিক সে রকমই ক্লাসের খেলোয়াড় চিনা তাইপের মেয়েটা। সার্কিটে তাই জু-র মতো শটের ভেরিয়েশন আর কারও নেই। অপোনেন্টকে বুঝতে দেয় না এর পরে ঠিক কোন শটটা মারতে যাচ্ছে। ডিসেপশনটাই ওর প্রধান অস্ত্র। তার উপর চিন আর হংকং দুটো টুর্নামেন্টেই ও বিশ্বের এক নম্বর ক্যারোলিনা মারিনকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ফুটছিল।

সিন্ধু আজ তাই জু-কে কোণঠাসা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে। কখনও স্ট্রোক প্লে দিয়ে, কখনও র‌্যালিতে। কিন্তু তাইজুর পেস, স্ম্যাশ, ড্রপ শট, র‌্যালি, নেট প্লে সব নিখুঁত ছিল। ১৫-২১, ১৭-২১ স্কোরলাইন সেটাই বোঝাচ্ছে।

এই হারটা সিন্ধুর জন্য শাপে বর হয়ে উঠতে পারে। কেন না সপ্তাহ দু’য়েক পরেই তো দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড সুপারসিরিজ ফাইনালস শুরু হচ্ছে। সিন্ধু যেখানে এ বার প্রথম বার নামবে। সুপারসিরিজ ফাইনালসে খেলবে বিশ্বের সেরা আট। মরসুমের সবচেয়ে কঠিন টুর্নামেন্ট। আমি জানি, হংকংয়ের হারটা ওকে আরও তাতিয়ে দেবে। তাই জুকে দুবাইয়ে আবারও পাবে সিন্ধু। অলিম্পিক্সের পর সিন্ধু এখন অনেক পরিণত হয়েছে। ও অনেককে দেখে শিখেছে, একটা টুর্নামেন্টে হারের পরও কী ভাবে ফিরে আসা যায়। কী ভাবে সেরাটা দিতে হয়। তা ছাড়া ওখানে খেলার আগে সিন্ধু বেশ খানিকটা বিশ্রামও পাচ্ছে।

সুপার সিরিজ ফাইনালসের প্রস্তুতি নিতেই সিন্ধু ম্যাকাও ওপেন না খেলে দেশে ফিরে গেল। দু’সপ্তাহ যাতে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পায়। মঙ্গলবার থেকে শুরু ম্যাকাও ওপেনে নামলে সেই সময়টা ও পেত না। তাই যে টুর্নামেন্টে সিন্ধু গত তিন বারের চ্যাম্পিয়ন, সেখানে এ বার নামছে না। গোপীচন্দের সে রকমই নির্দেশ। আমি মজা করে ওকে গত কাল বলছিলাম, ম্যাকাওয়ের মানুষরা এ বার তোকে না দেখে তো কাঁদবে রে! শুনে সিন্ধু হাসছিল।

সিন্ধুর মতো সমীরও রবিবার ফাইনালে প্রচুর লড়াই করে হংকংয়ের ছেলেটার কাছে হারল। ১৪-২১, ২১-১০, ১১-২১। তবে গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেছে। একটা ব্যাপারই সমীরের সুবিধে হয়েছিল, কয়েকজন প্লেয়ার নাম তুলে নেওয়ায় কোয়ালিফায়ার থেকে ও সরাসরি প্রোমোট হয়েছিল মূলপর্বে। সেই সুযোগটা সমীর দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছে। সেমিফাইনালে বিশ্বের তিন নম্বর ইয়ান ইয়র্গেনসেনকে হারিয়েছে। যে কি না ওর চেয়ে বিশ্বর‌্যাঙ্কিংয়ে চল্লিশ ধাপ এগিয়ে। হয়তো প্রথম সুপার সিরিজ ফাইনাল বলে আজ কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল।

সিন্ধুর মতোই গোপীচন্দের অ্যাকাডেমির আর এক ফসল সমীর। ইদানীং আমাকে একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়। গোপীচন্দের অ্যাকাডেমি থেকে এ ভাবে পরপর প্লেয়ার উঠে আসার কারণ কী। কারণটা বলছি। গোপীর অ্যাকাডেমির মতো দেশে এত ভাল সুযোগ-সুবিধা অন্য কোথাও নেই। প্রচুর টাকা খরচ করেছে গোপী অ্যাকাডেমিটাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের করার জন্য। তা ছাড়া জাতীয় ক্যাম্পগুলোর প্রায় সব ক’টাই গোপীর অ্যাকাডেমিতেই হয়। তাই কোচ, ম্যাসিওর, অন্য সাপোর্ট স্টাফ, মানে যা যা একটা প্লেয়ারকে টপ লেভেলে তুলে আনতে প্রয়োজন, সেটা গোপী অ্যাকাডেমিতেই পেয়ে যায়। এই সব ক্যাম্প চালানোর খরচ সরকারই দেয়। জাতীয় দলের চিফ কোচ হিসেবে ঠিক যে ভাবে ও প্লেয়ারদের তৈরি করতে চায়, সেটা করতে পারে।

সিন্ধু-সমীরদের মতো প্লেয়ারদের গোপীর অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসার আরও একটা কারণও আছে। সেটা কোচ গোপীচন্দ নিজে। এই অ্যাডভান্টেজটা আর কেউ পাবে কোথায়!

Sindhu lost Hong kong super series
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy