Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Vihaan Reddy

উইম্বলডনে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগের সেমিফাইনালে হার, তবু প্রাপ্তির ঝুলি ভরেই বাড়ি ফিরল বিহান

খেতাবে চোখ থাকলেও উইম্বলডনের আসরে বিহানের প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখা। বিশ্বের প্রথম সারির খেলোয়াড়দের অনুশীলন দেখে শেখার চেষ্টা করেছে ১৩ বছরের কিশোর।

picture of Vihaan Reddy

বিহান রেড্ডি। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ ১৮:৪০
Share: Save:

উইম্বলডনে অনূর্ধ্ব ১৪ বালকদের প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছে ভারতের দ্বিতীয় বাছাই বিহান রেড্ডি। প্রথম কোনও বড় মাপের প্রতিযোগিতায় নেমে সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে ট্রফি জিততে না পারার আক্ষেপ। নোভাক জোকোভিচ-কার্লোস আলকারাজের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে না পারার আক্ষেপও রয়েছে ১৩ বছরের কিশোরের। নিজের প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে বিহান।

কেন দেখলে না পুরুষ সিঙ্গলসের ফাইনাল? বিহান বলেছে, ‘‘আমার কাছে টিকিট ছিল না। ব্যবস্থা করতে পারিনি। টিকিট থাকলে অবশ্যই ফাইনালটা দেখতাম। উইম্বলডনে খেলেছি বলে কেউ আমাকে নিজে থেকে টিকিট দিয়ে যাবে, তা হয় না। নিজেকেই ব্যবস্থা করতে হত।’’

বিহান চেয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হোন নোভাক জোকোভিচ। সেই আশাও পূর্ণ হয়নি তার। ফাইনালের ৪ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের লড়াইয়ে জিতেছেন আলকারাজ। নিজে ফাইনালে উঠতে পারেনি। জোকোভিচ জিততে পারেননি। গ্যালারিতে বসে ফাইনালও দেখতে পায়নি বিহান। উইম্বলডনে এসে প্রাপ্তির ভাঁড়ার তা হলে শূন্য? এই যুক্তি মানতে নারাজ বিহান। ১৩ বছরের কিশোরের বক্তব্য, ‘‘বিরাট কোনও প্রত্যাশা নিয়ে লন্ডনে আসিনি। চেয়েছিলাম অনূর্ধ্ব ১৪ পর্যায়ের খেতাব জিততে। মূল লক্ষ্য ছিল শেখা। অনেক কিছু শিখেছি। সেটা কম প্রাপ্তি নয়। কারণ যেগুলো শিখেছি সেগুলো অন্য কোথাও শিখতে পারব না।’’

কী শিখলে এমন, যা অন্য কোথাও শেখা যাবে না! বিহানের বক্তব্য, ‘‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের অনুশীলন সামনে দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাঁরা কী ভাবে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হন, কী ভাবে অনুশীলন করেন, কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেন— সে সব দেখেছি। প্রস্তুতিটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বড় খেলোয়াড়দের অনুশীলন দেখেও অনেক শেখা যায়।’’ কার কার অনুশীলন দেখেছ? বিহান বলল, ‘‘আলকারাজ, জোকোভিচের অনুশীলন দেখেছি। এ ছাড়া দানিল মেদভেদেভ, ইয়ানিক সিনার, হোলগার রুনের অনুশীলন দেখেছি। এই সব খেলোয়াড়দের পাশের কোর্টে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছি।’’

প্রথম সারির খেলোয়াড়দের অনুশীলন দেখে কী কী শিখলে? বিহান বলেছেন, ‘‘ওঁরা কী ভাবে বল মারেন, কী করে কোর্টে জায়গা নেন দেখেছি। প্রতিটা শট র‌্যাকেটের মাঝখান দিয়ে মারার চেষ্টা করেন সবাই। যাতে শটটা ঠিক মতো হয়। অনুশীলনের পর শরীর ঠিক রাখার জন্য বেশ কিছু ক্ষণ কুলডাউন করেন সবাই। ফিজ়িয়ো, ম্যাসিয়োরের সাহায্য নেন। আমি অনুশীলনের পর মিনিট ১৫ কুলডাউন করি। বুঝলাম টেনিসের মতো খেলায় সেটা যথেষ্ট নয়। জিম, সুইমিং পুলেও সময় বাড়াতে হবে। টেনিসের জন্য শরীরের কাঠামো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারে আমাকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’’

গত বছরের শেষ দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক টেনিস খেলতে শুরু করেছে বিহান। কিছু দিন আগে ভারতে এসে চারটি আইটিএফ প্রতিযোগিতা খেলে চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শেষ দু’টি প্রতিযোগিতায় বয়সে দু-তিন বছরের বড় ছেলেদের সঙ্গেও খেলেছে। মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে ঘুরতে এসে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছিল খুদে টেনিস খেলোয়াড়। বাড়িয়ে নিয়েছিল আইটিএফ র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট। বিহান তার সুফল পেয়েছে উইম্বলডনের অনূর্ধ্ব ১৪ বালকদের প্রতিযোগিতায়। দ্বিতীয় বাছাইয়ের মর্যাদা পেয়েছিল সে। তবু বিদায় নিতে হয়েছে সেমিফাইনালে। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বিহানের বক্তব্য, ‘‘এত বড় মঞ্চে প্রথম বার খেললাম। আমরা যারা খেলেছি, সবাই এখন শিখছি। বয়স অনুযায়ী সকলেই ভাল বেশ ভাল। র‌্যাঙ্কিংটা তাই বিষয় নয়। আরও ভাল খেলা উচিত ছিল আমার। কিন্তু হয়নি। কিছু ভুল করেছি। সেগুলো শোধরাতে হবে। তবে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। এই পর্যায়ে প্রথম সারির প্রতিপক্ষদের সঙ্গে খেলতে পারার সুযোগও কম নয়। অবশ্যই ট্রফি জিততে পারলে বেশি খুশি হতাম।’’

কার মতো খেলোয়াড় হতে চাও তুমি? বিহান বলেছে, ‘‘আগে রজার ফেডেরারের খেলা ভাল লাগত। এখন আমার প্রিয় খেলোয়াড় সিনার। এখানে এসে সিনারের অনুশীলন দেখেছি। সিনারের খেলার ধরনটা আমার খুব ভাল লাগে। খুব পরিষ্কার বল মারেন।’’

বাবা বসন্ত রেড্ডি এবং মা রূপবতী রেড্ডি দু’জনেই কর্মসূত্রে থাকেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। চার বছর বয়সে বেঙ্গালুরুর বাড়ি ছেড়ে বিহানও বাবা-মায়ের সঙ্গে আমেরিকা চলে যায়। সেখানে পাঁচ বছর বয়স থেকে টেনিস শেখা শুরু। বিহানের অন্যতম প্রিয় খেলা বাস্কেটবল। এনবিএর ভক্ত। অবসর সময়ে অনলাইন দাবা খেলে খুদে টেনিস খেলোয়াড়। টেনিসকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার জন্য অনলাইন স্কুলে পড়াশোনা করছে। অঙ্ক করতে ভালবাসে বিহান। আপাতত এক দিন পড়া, এক দিন টেনিস। এই ভাবেই বেড়ে উঠছে সে। পাঁচ ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চির বিহান পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হতে চায়। আমেরিকায় থাকলেও ভারত ছাড়া অন্য দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ভাবেনি বিহান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vihaan Reddy Wimbledon 2023 Tennis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE