Advertisement
E-Paper

দিল্লির গরমও কমল, ধোনিদের ব্যর্থতার আগুন নিভছে না

নাহ্, গ্রিনস্টোন লোবো এতটুকু বিস্ময়কর কিছু দেখছেন না।‘‘বিশ্বকাপের সময় কি এবিপি খেলার পাতায় আমার লেখাটা মিস করে গিয়েছিলেন নাকি?’’ নভি মুম্বইয়ে তাঁর ভাসির বাড়ি থেকে ফোনে বললেন লোবো।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:৪৯

নাহ্, গ্রিনস্টোন লোবো এতটুকু বিস্ময়কর কিছু দেখছেন না।

‘‘বিশ্বকাপের সময় কি এবিপি খেলার পাতায় আমার লেখাটা মিস করে গিয়েছিলেন নাকি?’’ নভি মুম্বইয়ে তাঁর ভাসির বাড়ি থেকে ফোনে বললেন লোবো। ক্রিকেট-জ্যোতিষী হিসেবে সার্কিটে গত পাঁচ-সাত বছর যাঁর এমনই নামডাক হয়েছে যে, আধুনিক ইন্ডিয়ান টিমের সিনিয়ররাও পরামর্শ চান।

এবং লোবোর বচন হল, আইপিএলে পুণের কোনও আশা নেই। কারণ তার ক্যাপ্টেনের গ্রহ-নক্ষত্র এখন দ্বাদশ ঘরে ঢুকেছে। এই ঘর একান্তই ব্যর্থতার সেল। তাই এই দুর্দশা এখন চলতেই থাকবে মহাপরাক্রান্ত এমএসডি-র। লোবোর বিচারে আর সেই অমর মুহূর্ত তিনি নাকি ফেরত পাবেন না যেখানে ধোনি হাত ছোঁয়ালেই ছিল সোনা।

কলকাতার ক্রীড়াসাংবাদিকেরা বড় ম্যাচের ভাগ্য বা টিম ইন্ডিয়ায় সৌরভের সম্ভাবনা আঁচ করার জন্য যাঁকে ফোন করতেন সেই মিহির গঙ্গোপাধ্যায়ও দেখা যাচ্ছে আশাবাদী নন। তাঁর বিশ্লেষণ বলছে ধোনির মতো সিংহরাশি জাতকের এখন রাহু আর বৃহস্পতির অবস্থান। বৃশ্চিকের উপর রয়েছে শনি-মঙ্গল। এটা নাকি একেবারেই ভাল নয় কারণ, মনের স্থৈর্য নষ্ট করে দেবে।

লোবো যেমন অধিনায়ক ধোনির বাকি ক্রিকেটজীবনে আর আশাই দেখছেন না। মিহির তা নন। বললেন, ধোনির অবস্থান নাকি মে মাসেই ঘুরবে। তারিখটা হল ২৮। কিন্তু কে না জানে সেটা হল আইপিএল ফাইনালের আগের দিন। তার অনেক আগে যে শেষ চারে ওঠার খেলা শেষ হয়ে যাচ্ছে!

এমনিতে টিম ইন্ডিয়া বছরে যত ম্যাচ খেলুক না কেন, জ্যোতিষী আর নানা রকম কুসংস্কারের আইপিএলে যে পরিমাণ আবির্ভাব হয় তার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় ক্রিকেটে নেই। কোনও কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি অমোঘ বিশ্বাসে গুরুদেবের সঙ্গে টিমকে মিট করায়। কেউ নিয়ম করে তিলক কাটে। কেউ ড্রেসিংরুমে বাস্তু মেনে পজিটিভ ও নেগেটিভ দু’ধরনের আয়না ফিট করে রাখে। কোনও টিম কুসংস্কারে আবার সেই আয়না খুলে দেয়। কেউ কেউ টিম বাসে ওঠার সময়টাও জ্যোতিষীকে দিয়ে ঠিক করে রাখে। প্লেয়ার যত বড়ই হোক, তার বলার সাহস নেই যে, খেলা তো হবে বাইশ গজে। এ সব কী!

পল দ্য অক্টোপাসের মতো ক্রিকেট সংখ্যাতত্ত্ববিদ বা জ্যোতিষীরা তাই আইপিএল বাজারে জাঁকিয়ে বসেছেন সেই প্রথম বছর থেকে। জার্সির রং থেকে শুরু করে কার পিঠে কী নম্বর থাকবে। কোনটা ভাল, কোনটা শুভ— বারবার তাঁদের কথা শোনা হয়। রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা এ সবে বিশ্বাস করেন কি না জানি না। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠরা কেউ কেউ বলছিলেন, পুণে শহরটা আমাদের টিমের পক্ষে মোটেও শুভ নয়। আইএসএলে এটিকে এখানেই চেন্নাইয়ের কাছে সেমিফাইনাল হেরেছিল। মাঠটা এমনই অপয়া যে এখানে কি না আমরা চারটে পরপর হারলাম।

বিষ্যুদবার কোটলায় পুণে সুপারজায়ান্টসের দুই বদলি বিদেশি উসমান খোয়াজা আর জর্জ বেইলি যতই প্র্যাকটিসে নেমে পড়ুন, তাঁদের সঙ্গে দিল্লির যুদ্ধ নিয়ে দেশের নিরপেক্ষ ক্রিকেট জনমানসে বিশেষ সাড়া থাকার কথা নয়। আইপিএল নিয়ে এমনিতেই উত্তেজনা তাপপ্রবাহ অনেক কম। তার ওপর এটা কি না টেবলের দু’নম্বরের সঙ্গে ছয় নম্বরে থাকা টিমের ম্যাচ।

একটা টিম জাহির খানের নেতৃত্বে টগবগ করে যৌবনের সরণিতে দৃপ্ত কুচকাওয়াজ করছে। দূর থেকে সেটা নিরীক্ষণ করছেন মেন্টর রাহুল দ্রাবিড়। আর এরা কি না প্রৌঢ়ত্বের সরু গলিতে অসংলগ্ন ফিসফাসে জীর্ণ। রাতে পুণে টিমের কথাবার্তা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। দু’জন সিনিয়র ক্রিকেটার বললেন গুজরাত লায়ন্স এখন যা-ই খেলুক, কাপ ফেভারিট দিল্লি।

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, দিল্লি টিম যত ঝলমলে হচ্ছে , পুণেকে তত ম্যাচ টেনশনের চাপে আগুনে পোড়া দেখাচ্ছে। গত ক’দিন ধরে চলা ৪২ ডিগ্রি গরমের অসহ্য দিল্লি আজ কোথায়! নেমে ৩৬ ডিগ্রিতে চলে এসেছে। আর্দ্রতার হারও অনেক কম! অথচ ধোনিদের হারের উনুন জ্বলেই চলেছে। গোটা টিমে কেউ জানে না কাল কম্বিনেশন কী হবে। ধোনি টস জিতলে ব্যাট করবেন, না ফিল্ড।

সকালে টিম হোটেলে ঢোকার সময় স্টিভন ফ্লেমিংয়ের মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলাম। কোচের এত সুন্দর চেহারাটা যেন দুর্ভাবনায় কুঁকড়ে থাকা। ফ্র্যা়ঞ্চাইজি ক্রিকেটে হার খুব খারাপ। নিয়মিত হার তো আরও অসহনীয়। দক্ষিণ ভারতের এক ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের কথা শোনা যায়, যিনি টিম টানা দু’ম্যাচ হারলে টয়লেটের বাইরে থেকে চিৎকার করে গালাগাল করতেন।

সঞ্জীব গোয়েন্কা সেই তুলনায় শিশু সাহিত্য। হস্তক্ষেপ করেন না। খুব প্রয়োজন না হলে ধোনির ওপরেই এখানে পুরোটা ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু টিম যদি ক্রমশ এতগুলো ম্যাচ হারতে থাকে, যে কোনও মালিকই তার সংগঠনের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়বে।

ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ধোনির এ বারের পুণে যেন তাঁকে কোথাও পাঁচ বছর আগের পুণের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। দু’টো মুখের জোড় আচমকা পুণেতে মিশে গিয়েছে। ধোনি আর সৌরভ! সে বার সৌরভের পুণেও টানা ম্যাচ হারতে হারতে এমন হয়েছিল যে, লন্ডনে বসে থাকা কর্তারা ইডেন ম্যাচের ব্যাটিং অর্ডার বাছতে থাকেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং তারও আগে প্রগাঢ় ধোনি-ভক্ত বাবুল সুপ্রিয় বুধবার রাতে বলছিলেন, ‘‘আইপিএলে ধোনি কী উইকেটকিপিং করছে দেখছেন? জাস্ট ফাটিয়ে দিচ্ছে।’’

সমস্যা হল, কথাটা সত্যি হয়েও ধোনি রান পাচ্ছেন না। তাঁর মার্কশিটে প্রথম সাবজেক্ট অধিনায়কত্ব। সেকেন্ড পেপার ব্যাটিং। আর অপশনাল সাবজেক্ট হল কিপিং। একে তো ম্যাচ জিতছেন না। তা-ও আবার ৮ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ১৪৬। গড় ৩৬। এটা সিএসকের হয়ে হলে এত চোখে পড়ত না। কিন্তু এদের তো ব্যাটিং ভরসাও তিনি। টিমের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে এত কম বল খেলছেন কেন ধোনি?

তাঁর বোলিং পরিবর্তন নিয়েও সমালোচনা এবং তারও আগে সন্দেহের ঝড় উঠছে। মুম্বইয়ে সিসিআইয়ের কাউন্টারে থাকা ছেলেটি থেকে বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি সবাই এক কথা বলছেন, অশ্বিনের সঙ্গে কি ধোনির কিছু হয়েছে? ৮ ম্যাচে যেখানে টিমের এক নম্বর বোলারের ৩২ ওভার পাওয়ার কথা সেখানে তাঁকে করানো হয়েছে ২৫ ওভার। গ্রিনস্টোন লোবো বলছিলেন, ‘‘ধোনির খারাপ ভাগ্যে অশ্বিনও ঢেকে যাচ্ছে। এখুনি আরসিবির হয়ে খেললে দেখবেন ও বেস্ট বোলার হবে।’’ অশ্বিন সমর্থকেরা জ্যোতিষ-ট্যোতিষ শুনছেন না। তাঁদের অভিযোগ আরও বড়। বুধবার রাতে সঞ্জীব গোয়েন্কার দেওয়া নৈশভোজে এক ধোনি-ঘনিষ্ঠের দেখা পেলাম। তিনি বললেন, ‘‘গোটা বিতর্কটা অহেতুক। অশ্বিন ভাল বল করছে না তাই কম সুযোগ পাচ্ছে। মাহির বরাবরের স্টাইলই তাই। ও ইতিহাসের অ্যালবামে বিশ্বাস করে না। এখনকার ফর্মে বিশ্বাস করে। ও অশ্বিনকে দেখাতে চায়, ভাল বল করে আবার আমার সুনজরে ফেরত এসো। তার আগে ইতিহাসের জন্য আমি কোনও রেয়াত করব না।’’

ছ’ম্যাচে অন্তত পাঁচটা জিততে হবে এমন দলের পক্ষে এই জাতীয় স্পিরিট মোটেই ভাল নয়। কেউ কেউ বলছিলেন, আটটা ম্যাচ হয়ে গেল। আমাদের প্রথম এগারোই তো ঠিক হল না। আঙুল উঠছে সেই ধোনির দিকে। মেঘে আপাত ঢেকে যাওয়া ধোনি অবশ্য অপ্রত্যাশিত এক সমব্যথীকে পাশে পাচ্ছেন। তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ বলছেন, ‘‘টিমে এত চোট আঘাত। শুধু কয়েকটা ম্যাচ হারা দিয়ে ধোনিকে কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া উচিত নয়। বোলিং এত খারাপ হলে, এত নিয়মিত বিদেশি প্লেয়ারগুলো চোট পেয়ে গেলে ক্যাপ্টেন কী করবে?’’

জিজ্ঞেস করলাম ইন্টারভিউটা কার নিচ্ছি বলে লিখব? চির নির্বিরোধী ভিভিএস লক্ষ্মণের?

সৌরভ হাসেন, ‘‘হ্যাঁ, লক্ষ্মণ লিখতে পারেন!’’

আজ আইপিএলে

দিল্লি ডেয়ারডেভিলস বনাম রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস, কোটলা, রাত ৮-০০

MS Dhoni IPL 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy