Advertisement
E-Paper

আজ ভাগ্য পরীক্ষা দুই কোচের

দুই কোচের সামনেই আজ রবিবার ইতিহাসে নাম তোলার সুযোগ। ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচ যদি কাপ জিততে পারেন, তা হলে নিজের দেশের ফুটবল ইতিহাসে সোনায় লেখা থাকবে তাঁর নাম। প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর জন্য।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৫:২০
ভবিষ্যদ্বাণী: সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ভালুক বাছল ক্রোয়েশিয়াকে। রয়টার্স

ভবিষ্যদ্বাণী: সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ভালুক বাছল ক্রোয়েশিয়াকে। রয়টার্স

লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ঢুকে তিনি চলে গেলেন মাঠের ভিতর। সামান্য সময় ঘাস পর্যবেক্ষণ, তার পরে রিজার্ভ বেঞ্চের কোণের একটি চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লেন। ফটোগ্রাফারদের পোয়াবারো। ছবি তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সবাই। তাঁর কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। দুটো মোবাইলে কী যেন দেখেই চলেছেন। প্রায় পনেরো মিনিট পরে তাঁর সম্বিত ফিরল ফিফার এক কর্তা তাঁকে প্রেস রুমে যেতে বলায়। খোঁচা খোঁচা দু’তিন দিনের না কামানো দাড়ি। চিন্তায় যে রাতের ঘুম গিয়েছে সেটা চোখের তলার কালি দেখলেই বোঝা যায়। মুখাবয়বের ছবির সঙ্গে অবশ্য তাঁর কথার মিল নেই। ‘‘ছেলেদের বলেছি। মনের আনন্দে খেলো। আমাদের হারানোর কিছু নেই। যা পাবে সবই বোনাস। বেশি অনুশীলনের দরকার নেই, বিশ্রাম নাও।’’ তিনি, ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো দালিচ।

আর একজন মাঠে ঢুকে সোজা মিডিয়া রুমে। কপালে চিন্তার বলিরেখা। মুখে হাসি নেই। কোচকানো চামড়ার মুখের ভূগোলটাই যেন বদলে গিয়েছে তাঁর। প্রতিপক্ষ কোচের চেয়ে দু’বছরের ছোট হয়েও কেমন যেন বুড়োটে হয়ে গিয়েছেন! তিনি বলছেন, ‘‘দু’বছর আগের ইউরো কাপের রানার্স দলটার সঙ্গে এই ফ্রান্সের তুলনা করবেন না। এই দলে ১৪ জন নতুন ছেলে এসেছে। তাদের অভিজ্ঞতা কম ঠিক। কিন্তু প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। সেটা ওরা প্রতিদিন দেখাচ্ছে।’’ এই ব্যক্তি, দিদিয়েঁ দেশ। ফ্রান্সের কোচ।

দুই কোচের সামনেই আজ রবিবার ইতিহাসে নাম তোলার সুযোগ। ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচ যদি কাপ জিততে পারেন, তা হলে নিজের দেশের ফুটবল ইতিহাসে সোনায় লেখা থাকবে তাঁর নাম। প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর জন্য।

আর দেঁশ যদি ফ্রান্সকে দ্বিতীয়বার কাপ জেতাতে পারেন তা হলে তিনিই হবেন ফ্রানৎস বেকেনবাউয়ার এবং মারিয়ো জাগালোর পর তিন নম্বর ফুটবল ব্যক্তিত্ব যিনি ফুটবলার ও কোচ হিসাবে কাপ জিতবেন।

এ দিন ফ্রান্স নিয়ে কথা বলার চেয়েও বেকেনবাউয়ার, জাগালো নামক দুই মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রসঙ্গ নিয়েই বেশি প্রশ্ন এল দেশঁর জন্য! অধিনায়ক হিসাবে কাপ জেতা এবং কোচ হিসাবে দল পরিচালনার মধ্যে ফারাক কী? দেঁশ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘দুটো দু’রকম কাজ। অধিনায়ক যখন ছিলাম, নিজের খেলা নিয়ে বেশি ভাবতাম। কোচের নির্দেশে খেলতে হত। আর কোচ হয়ে আমার মাঠে নেমে খেলার সুযোগ নেই।’’

দেশঁর মতো মোনাকো, জুভেন্তাস, মার্সেইকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নেই দালিচের। ফুটবলার হিসাবেও দেঁশর মতো সাফল্য নেই ক্রোয়েশিয়া কোচের। কিন্তু ম্যান ম্যানেজমেন্টের অদ্ভুত একটা দক্ষতা আছে তাঁর। না হলে প্রকাশ্যেই কোনও কোচ বলে দিতে পারেন ‘‘আমি কোনও সিদ্ধান্ত ফুটবলারদের সঙ্গে কথা না বলে নিই না। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে মাত্র ছয় সপ্তাহের মতো এই দলটাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। তাতেই আমাদের দল একটা পরিবার হয়ে উঠেছে।’’ এখানেই অবশ্য থেমে থাকেননি তিনি। সব ফুটবলারকে ভরিয়ে দিয়েছেন প্রশংসায়। ‘‘আরে সবাই আমাদের দলের ক্লান্তির কথা বলছে। আপনারাও টানা তিনটে ম্যাচে ৩৬০ মিনিট খেলার কথা বলছেন। কই আমার কাছে একজন খেলোয়াড়ও এসে তো বলেনি, আমার শরীর দিচ্ছে না, আমি খেলব না। ওদের পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।’’ সেমিফাইনালে জয়ের গোলের গোলদাতা মাঞ্জুকিচ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দরাজ হলেন দালিচ। ‘‘ও যে কোনও কোচের কাছে সম্পদ হতে পারে। গোল করতে পারে, গোলের বল বাড়াতে পারে। দেখবেন কাল আবার জ্বলে উঠবে।’’ তাঁর পাশে বসে অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ বলছিলেন, ‘‘আমরা স্বপ্নের ম্যাচ খেলতে নামছি। চাপ মুক্ত হয়ে খেলব।’’ মদ্রিচের কথা শেষ না হতেই দালিচ বলে দিলেন, ‘‘হারি বা জিতি তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা ম্যাচটা উপভোগ করতে নামব। তবে, আমার ছেলেরা যে হারতে জানে না।’’

কথা শুনলেই বোঝা যায় দলকে চাপমুক্ত করার সব কৌশলই প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন তিনি। সারা বিশ্ব অপেক্ষায় ফুটবল-আকাশে নতুন চ্যাম্পিয়নের উদয় হয় কী না, তা দেখার জন্য, আর ক্রোয়েশিয়া কোচ বলছেন, ‘উপভোগ করো।’ বেশ মজা লাগছিল তাঁর কথা শুনে।

মদ্রিচদের কোচকে প্রশ্ন করা হল, ফ্রান্সের সঙ্গে পাঁচ বার মুখোমুখি হয়েছে আপনার দল, একবারও জিততে পারেনি। দু’বার ওরা জিতেছে, বাকি ড্র। এ বার চাকা উল্টোদিকে ঘুরবে? ‘‘পরিসংখ্যান নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাই না। মাঠের বাইরেও চোখ নেই আমাদের।’’ বলে দিলেন ক্রোয়েশিয়া কোচ।

দালিচের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যম আবেগ, মাটির কাছাকাছি থাকা। আর দেঁশর ব্যক্তিত্বে ফুটে বেরোয় তাঁর ফুটবলার জীবনে গৌরবের ঔদ্ধত্য। যিনি গম্ভীর মুখ করে সপাট বলে দেন, ‘‘আমার টিমের আফ্রিকাজাত ফুটবলারদের জন্মস্থান নিয়ে এত কথা হচ্ছে। ওঁরা তো সবাই ফ্রান্সের জার্সি পরে খেলছে। তা এত যখন কথা হচ্ছে, আফ্রিকার কোনও দল কেন ফাইনালে উঠতে পারল না?’’

এমবাপের মতো তরুণ ধ্রুবতারাকে রক্ষার জন্য কী আলাদা কোনও সতর্কতা নিচ্ছেন কাল? প্রশ্নটা শুনে ভ্রু কোঁচকালেন দেঁশ। বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন ‘‘এমবাপে অত্যন্ত বুদ্ধিমান। ও জানে কী ভাবে নিজেকে বাঁচাতে হয়।’’ নিজেদের ফুটবলার সম্পর্কে সতর্ক কথাবার্তা বললেও লুকা মদ্রিচকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ‘‘ও মেসি বা অ্যাজারের মতো স্ট্রাইকারে খেলে না। মাঝমাঠটা ও আর রাকিতিচ নিয়ন্ত্রণ করে। লুকা গোল করে, করায়। কমপ্লিট ফুটবলার।’’ ফ্রান্স কোচের কথা শুনলেই বোঝা যায়, তাঁর চিন্তার বা চাপে থাকার কারণ কী!

সমাপ্তি অনুষ্ঠানের গানের মহড়ার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় দুই কোচের সাংবাদিক বৈঠক। তারপর দুই দ্রোণাচার্য নেমে পড়েন মাঠে। এক ঘণ্টার ব্যবধানে।

মস্কোতে সূর্য ডোবে না রাত দশটাতেও। লুঝনিকিতে বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতটা অবশ্য অন্য রকম হবে। পূর্ণিমা আর অমাবস্যায় দু’ভাগ হয়ে যাবে আকাশ। দু দেশের কোচই অবশ্য আলোর নিচে থাকতে মরিয়া।

Football Fate Fifa World cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy