Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
CAB

বঙ্গ ক্রিকেটে এখন ব্রাত্য বাংলাই

বাংলার ক্রিকেট প্রশাসক, কর্তারা অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের দিয়ে স্থানীয় ক্রিকেট ভরিয়ে তুলছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৫
Share: Save:

আসছেন, খেলছেন, নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলার সঙ্গে না আছে তাঁদের ভূমির যোগ, না ভাষার। স্থানীয় ক্রিকেটে খেলতে খেলতে বাংলার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে ঢুকে পড়ছেন। সিনিয়র দলেও এ রকম ভাড়াটে সৈনিকদের ভিড়। বঙ্গ ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিভাই হারিয়ে যেতে বসেছে। সম্প্রতি আইপিএলের নিলামে বাংলার কোনও ক্রিকেটারের নামও উঠতে শোনা যায়নি। এই মুহূর্তে জাতীয় দলে একমাত্র বাংলার ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহা।


বাংলার ক্রিকেট প্রশাসক, কর্তারা অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারদের দিয়ে স্থানীয় ক্রিকেট ভরিয়ে তুলছেন। কয়েক বছর স্থানীয় ক্রিকেটে ভাল খেলতে পারলে তাঁদের সামনেই খুলে যাচ্ছে রাজ্য দলের দরজা। ততই পিছিয়ে পড়ছে বাংলার নিজেদের প্রতিভারা। সিএবি-র নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ডিভিশনের প্রত্যেকটি দল চার জন ভিন-রাজ্যের ক্রিকেটারের রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবে। প্রথম দলে খেলবে তিনজন। দ্বিতীয় ডিভিশনে একজনও ভিন-রাজ্যের ক্রিকেটার খেলতে পারবেন না। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, দু’টো ডিভিশনেই বাইরের ছেলেদের ভিড় উপচে পড়ছে। কী ভাবে? অভিযোগ, স্থানীয় ঠিকানা জোগাড় করে অনেকে অন্য রাজ্য থেকে এসে খেলে যাচ্ছেন। স্থানীয় পরিচয়পত্র হাতে থাকায় তাঁদের বাইরের রাজ্যের বলাও যাচ্ছে না। অনেক ক্লাব কর্তা এই কাজে মদত দিচ্ছেন। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবি এ নিয়ে খুব কড়া মনোভাব তো দেখাচ্ছেই না, উল্টে নিজেদের ঘরের প্রতিভাদের উপেক্ষা করে এঁদের জন্য রাজ্য দলের দরজা খুলে দিচ্ছে। কলকাতার স্থানীয় ক্রিকেটে দু’টি ডিভিশন মিলিয়ে এখন এই পরিযায়ী পাখিদের ভিড়। বেশির ভাগ সময়েই যে রাজ্য থেকে ক্রিকেটাররা বাংলায় আসছেন সেখানে কল্কে পাচ্ছেন না। আর বাংলা তাঁদের লাল চাদর বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। মুম্বইয়ে কি কখনও অন্য রাজ্যের ক্রিকেটারেরা এ ভাবে ভিড় জমাতে পারবেন, বা তামিলনাড়ুতে? অনেকে মনে করছেন, প্রধান পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ডের পরিবর্তে স্থানীয় ক্রিকেটে ভোটার কার্ড চালু করা হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, কোন ক্রিকেটার কোথাকার বাসিন্দা।


অতীতে বাংলায় অনেক সময় বাইরের ক্রিকেটারেরা খেলে গিয়েছেন। অরুণ লাল বা অশোক মলহোত্রকে নিয়ে কখনও কথা ওঠেনি কারণ তাঁরা পরিবার নিয়ে এখানেই থেকে গিয়েছেন। আবার চেতন শর্মাদের নিয়ে জোর কাজিয়া হয়েছে কারণ, তাঁরা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য বাংলার মঞ্চকে ব্যবহার করতে এসেছিলেন। এখনকার সিনিয়র বাংলা দলেও অভিমন্যু ঈশ্বরন, অভিষেক রামন, আকাশদীপ, শাহবাজ আহমেদ, মুকেশ কুমার— এক ঝাঁক তথাকথিত বাইরের ক্রিকেটার রয়েছে। কেউ থাকেন দেহরাদুনে, কেউ এসেছেন বিহার থেকে, আবার কারও বাড়ি ফরিদাবাদে। সরকারি ভাবে এঁদের বাইরের রাজ্যের বলা যাবে না যে-হেতু প্রত্যেকের কাছে স্থানীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। কলকাতায় স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটেও নাম নথিভূক্ত রয়েছে।


ঈশ্বরন বা রামনেরা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে বাংলায় খেলছেন। তাই তাঁদের বাংলার বলে ধরা যেতে পারে। লক্ষ্মীরতন শুক্ল বা মনোজ তিওয়ারিরা যেমন পুরোপুরি বাংলার ভূমিপূত্র। ওয়াকিবহাল মহলের কথায়, ‘‘বিষয়টি বাঙালি-অবাঙালি বিভাজনের একদমই নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের রাজ্যের প্রতিভা তৈরি না করে অন্য রাজ্য থেকে তুলে এনে কেন শর্টকার্ট সাফল্যের দিকে যাব?’’ সিএবি কর্তারা শুনতে পাচ্ছেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cricket CAB Bengal Cricket team
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE