Advertisement
E-Paper

গোঁফ-টাক-অন্তর্বাস, বিশ্বকাপে ফুটবলারদের অদ্ভুত সব সংস্কার

বিশ্বকাপে কুসংস্কার অতীতেও ছিল। রাশিয়া বিশ্বকাপে তার দাপট দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ ফুটবলারেরই তা রয়েছে। তবে কুসংস্কার মানেই কিন্তু সাফল্যের নিশ্চয়তা নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৮ ১৪:২৬
বার্থেজের টাকে ব্লঁ-র চুম্বন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে।

বার্থেজের টাকে ব্লঁ-র চুম্বন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে।

ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ফ্রান্সের গোলরক্ষক বার্থেজের দিকে এগিয়ে যেতেন ডিফেন্ডার লরাঁ ব্লঁ। চকচকে ন্যাড়া মাথায় করতেন চুম্বন। দুই দশক আগের বিশ্বকাপের এই ছবি ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে নিশ্চয়ই এখনও টাটকা।

তুকতাক বা কুসংস্কার, যাই বলুন, ফ্রান্স কিন্তু সে বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। প্যারিসে ফাইনালে ব্রাজিলকে তিন গোল দিয়েছিল তারা। দু’গোল দিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। তবে শুধু তো ব্লঁ-র চুম্বনেই ব্যাপারটা থামত না ফরাসি শিবিরে। সতীর্থরা এসে হাতও বুলিয়ে দিতেন বার্থেজের মাথায়।

বিশ্বকাপে এহেন আচার-আচরণ অবশ্য নতুন নয়। যতই সবুজ ঘাসে খেলাটা হোক, যতই স্কিল ও শক্তি তফাত গড়ে দিক, যতই জেতার মরিয়া তাগিদ মানসিক ভাবে উদ্ধুদ্ধ রাখুক, অধিকাংশ ফুটবলারই স্রেফ নিজস্ব দক্ষতায় ভরসা রাখেন না। যে কোনও ম্যাচের আগেই তাঁরা আশ্রয় নেন এ জাতীয় আচরণের। বুদ্ধিতে, যুক্তিতে যার হয়তো ব্যাখ্যাই মেলে না। কিন্তু, কে আর কবে যুক্তিবোধকে সর্বদা জীবনের ধ্রুবতারা হিসেবে আঁকড়ে থাকেন!

আরও পড়ুন: এই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলে অবাকই হব: মর্গ্যান

দুর্বল কোনও মুহূর্তে মনের আনাচে-কানাচে ঢুকে পড়ে, জাঁকিয়ে বসে অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু আচার। প্রদীপ জ্বলার আগে সলতে পাকানোর পর্বের মতো খেলতে নামার আগে তা হয়ে ওঠে রুটিন। মনে আনে প্রশান্তি।

সময়ের সরণী বেয়ে পিছু চললে মারিও কেম্পেসের নাম উঠে আসছে। আর্জেন্টনার তারকা স্ট্রাইকার ১৯৭৮ সালের কাপ-যুদ্ধে গ্রুপ পর্বে গোল পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁর মুখে ছিল সযত্নে রাখা হালফ্যাশনের গোঁফ। কোচ সিজার লুই মেনোত্তি তখন তাঁকে গোঁফ ছেঁটে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে লা লিগায় খেলার সময় পরিষ্কার কামানো মুখ ছিল কেম্পেসের। সেটাতেই ফিরলেন তিনি। এবং ‘ক্লিন শেভেন’ হয়ে শুরু হল তাঁর দাপট। পরের ম্যাচেই পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে করলেন দু’গোল। পরের ম্যাচ পেরুর বিরুদ্ধে। এটাতেও দুই গোল। আর্জেন্টিনা উঠল ফাইনালে। ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধেও করলেন দু’গোল। ছয় গোল করে তিনি পেলেন গোল্ডেন বুট। আর্জেন্টিনা পেল বিশ্বকাপ। নিশ্চয়ই কেম্পেসের গোঁফ ছেঁটে ফেলাই কারণ নয়। কিন্তু, অবুঝ মনকে কি আর বোঝানো যায়!

আরও পড়ুন: ‘ব্রাজিল, যাও নেমে পড়ো! জিতে এসো বিশ্বকাপ’

রাশিয়া বিশ্বকাপেও তাই সংস্কারের রাজত্ব দিব্যি চলছে। ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কেউ একই অন্তর্বাস পরে খেলেন প্রত্যেক ম্যাচ। সেটাকেই মানা হয় সোভাগ্যের সূচক। কেউ টয়েলেটে ঢুকে চলে যান একদম বাঁ-পাশের খুপরিতে। মোদ্দা কথা, শুধু স্কিল, কঠোর অনুশীলন আর খাদ্যাভ্যাসের অনুশাসনকে সফল হওয়ার রেসিপি ধরা হয় না। পুরুষকারের পরেও খোঁজা হয় ভাগ্যকে।

জার্মানির জুলিয়েন ড্রাক্সলার যেমন বড় ম্যাচের আগে লকারে তাঁর ব্যাগের ওপর ছড়িয়ে দেন সুগন্ধি। প্যারিস সাঁ জাঁ-র মিডফিল্ডারের কথায়, “এটা আমাকে আনন্দের অনুভূতি দে়য়। প্রত্যেক ফুটবলারেরই কোনও না কোনও আচার থাকে ম্যাচের আগে। আমার হল সুগন্ধি স্প্রে করা।”

আরও পড়ুন: ‘এই ফ্রান্সে এক জনও জিদান নেই’

ইংল্যান্ডের ডেলে আলি আবার ছোটবেলার ‘সিন গার্ড’ ব্যবহার করেন এখনও। যতই তার অবস্থা বাতিলের জায়গায় যাক না কেন। টটেনহ্যামের মিডফিল্ডার বলেছেন, “১১ বছর বয়স থেকে যা পরেছি, সেই এক সিনগার্ডই এখনও রয়েছে। যদিও ওটার হাল খুব খারাপ। কিন্তু কী করব? আমি তো মারাত্মক কুসংস্কারে বিশ্বাসী।” ইংল্যান্ডেরই ফিল জোনস আবার মাঠে নামার সময় সাদা লাইনে পা দেন না।

ব্রাজিলের ডিফেন্ডার মার্সেলো আবার সব সময় মাঠে আসেন ডান পা প্রথমে রেখে। রস্তভ-অন-ডনে সুইত্জারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভুল করেছিলেন। তাই ফিরে গিয়ে ফের ডান পা সামনে রেখে মাঠে আসেন তিন। প্রশ্নের জবাবে একগাল হেসে মার্সেলো বলেছেন, “প্রত্যেকেই তো ডান পা সামনে রাখে। শুধু আমার কথা হচ্ছে কেন?”

আরও পড়ুন: জার্মানি শিবির ভাগ, মুলারকে নিয়েও প্রশ্ন

মরক্কোর কোচ হারভে রেনার্ড আবার ২০১২ সালে জাম্বিয়াকে আফ্রিকা কাপ অব নেশনস জেতানোর পর থেকে সাইডলাইনে শুধু সাদা শার্টই পরেন। রাশিয়াতেও তিনি তা করছেন। যদিও এবার সাফল্য অধরাই থেকেছে। গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় নিচ্ছে মরক্কো।

অর্থাত্, তুকতাক বা কুসংস্কার মানেই সাফল্যের সহজ পাঠ এমনটা আদৌ নয়! তবে সফলদের সংস্কার স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি আলোয় এসে পড়ে।

FIFA World Cup 2018 বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ Superstitions
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy