ইউরোর ম্যাজিক গোল
এই ইউরোয় ফেভারিট সবাই বলে দিচ্ছে জার্মানি, স্পেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেরা গোল কোনটা, তা কে নিশ্চিত করে বলতে পারবে? সব ক’টাই দুর্ধর্ষ। এমন সব অ্যাঙ্গল থেকে গোল হচ্ছে যে ‘ল অব গ্র্যাভিটিকেও’ হার মানাবে! যে সমস্ত শট হাওয়ায় অবিশ্বাস্য বাঁক খাচ্ছে। গোলকিপারের অনুমানক্ষমতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গোলে ঢুকে যাচ্ছে।
এ সব গোল দেখে প্রশ্ন উঠতেই পারে, অধুনা গোলকিপারদের অবস্থা কি এতটাই খারাপ? ভাল গোলকিপার পাওয়া কি দুঃসাধ্য? নাকি স্ট্রাইকাররা রাতারাতি সব মারাত্মক হয়ে উঠলেন? ঘটনা হল, গোলকিপারদের মান যা ছিল, তেমনই আছে। আবার স্ট্রাইকাররা যেখানে ছিলেন, সেখানেই আছেন। আসল হল প্রযুক্তি।
প্রত্যেক বছর প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, কিপারদের চাপ তত বাড়ছে। এমন সব বল বানানো হচ্ছে যা হবে ওজনে হালকা, কিন্তু গতি আর সুইং থাকবে। টি-টোয়েন্টি যেমন পুরো ব্যাটসম্যানস গেম হয়ে গিয়েছে, ফিফা-উয়েফাও চাইছে খেলাটাকে স্ট্রাইকার্স গেম করে তুলতে। টিকিট কেটে মাঠে আসো, গোলের পর গোল দেখো, বিয়ার হাতে উৎসব করো, বাড়ি চলে যাও। গোলকিপারের কী হল না হল, কারও কিছু এসে যায় না।
এশীয় অল স্টার দলে নির্বাচিত হওয়া অতনু ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘ইউরোয় যে বলে খেলা হতে দেখছি, তাতে শটের গতি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। গোলকিপার তো চোখের উপর ভরসা করে বলের মুভমেন্ট বোঝার জন্য। কিন্তু তার সুযোগটাই পাচ্ছে না। সেকেন্ডের মধ্যে বল গোলে চলে যাচ্ছে।’’ একটু থেমে অতনু আবার বলতে থাকেন, ‘‘প্রত্যেক বার দেখি নতুন নতুন বল। ইপিএল বা লা লিগায় যে বলে খেলে আসছে কিপাররা, তারা এখানে এসে দেখছে অন্য বল। অ্যাডজাস্টমেন্ট বলেও তো কিছু আছে। তার উপর বাউন্স অসমান হওয়ায় কিপারদের কাজটা এখন অসম্ভব কঠিন।’’
প্রাক্তন ভারতীয় গোলকিপারের কথা এক দিক থেকে সত্যি। ইউরো বা বিশ্বকাপ মানে সত্যিই এখন নানা ধরনের পরীক্ষা। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী ২০০৪-এ রোটেরো যেমন ছিল সেলাই ছাড়া প্রথম বল। এ বারের ইউরোর বিউ জিউ বল সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তিতে বানানো। আরও বেশি হাল্কা। মাঠে জল জমলেও শট নিতে অসুবিধা হবে না। লং রেঞ্জ থেকেও সুইং নিখুঁত হবে। বাংলা কথা, গোলকিপারদের নির্ঘুম রাত কাটানোর আরও ভাল ব্যবস্থা।
অতনু ইস্টবেঙ্গলে গোলকিপিং কোচ ছিলেন। বলছিলেন, আধুনিক গোলকিপাররা গ্রিপের বদলে বেশি ফিস্ট করার দিকে যাওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ছে। নিজেদের বিপদমুক্ত রাখতে গিয়ে আরও বিপদ ডেকে আনছে। ‘‘পুরো দোষ দেওয়াও যায় না। গ্রিপ করতে গিয়ে গণ্ডগোল হলে তো আর দেখতে হবে না। কেউ শুনবে না,’’ বলছিলেন অতনু। ভারতের আর এক খ্যাতনামা গোলকিপার সুব্রত পালেরও মনে হচ্ছে, প্রযুক্তির বলি এখন হচ্ছেন গোলকিপাররাই।
‘‘আমি জাবুলানি দিয়ে খেলেছি। খুব সমস্যা হয়েছিল। আর এখন তো প্রতিটা শটই ১৩০-১৪০ কিলোমিটার গতিতে মারা হচ্ছে। গোলকিপাররা সময়ই পাচ্ছে না রিঅ্যাক্ট করার,’’ বলছিলেন সুব্রত। ভারতের বর্তমান গোলমেশিন জেজে— তিনিও ঘুরেফিরে যা মেনে নিচ্ছেন। বলছেন,
‘‘পায়েত, হামশিক বড় ফুটবলার। গোলগুলোও অসাধারণ। ইউরোর বলে খেলিনি। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারি যে, আগের বলগুলো ভারী ছিল। লং রেঞ্জ শট মারতে অসুবিধে হত। কিন্তু এখনকার বলগুলোয় শট বা হেড দু’টোই অনায়াসে নেওয়া যায়।’’
কিন্তু করারও বা কী আছে? চেক-বুফনদের অসুবিধে হচ্ছে ঠিক। চেক বহু দিন ধরে নানা সময় বল নিয়ে অভিযোগ করেও এসেছেন। কিন্তু সব বুঝেও কিছু করার নেই। ফুটবল-দর্শক তো একটাই ভাষা বোঝে, গোলের ভাষা। ফিফা-উয়েফার সেই ভাষায় কথা না বলে আর উপায় কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy