Advertisement
E-Paper

মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তীসগঢ়ে যুব সমাজকে মূলস্রোতে ফেরাতে ফুটবলই অস্ত্র ফেডারেশনের

ছত্তীসগঢ়ের বস্তার, দন্তেওয়াড়া, অনন্তগড়ে মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে শুধুই আতঙ্ক। এই অশান্ত অঞ্চলের যুব সমাজকে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী এআইএফএফ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ১৮:০৭
AIFF with the help of Ramkrishna Mission is trying socialize Maoist affected Chattisgarh

বস্তারে অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। খেলছেন রামকৃষ্ণ মিশনের এক সাধুও। ছবি: সংগৃহীত।

শাল-সেগুনের জঙ্গলে ঘেরা বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ের বস্তার, দন্তেওয়াড়া, অনন্তগড়ে মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে শুধুই আতঙ্ক। প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে রক্তাক্ত শৈশব। হাতে বইয়ের বদলে মারণাস্ত্র। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মাসখানেক আগেও ১৩জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। এই অশান্ত অঞ্চলের যুবসমাজকে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে এখন ভরসা ফুটবল। উদ্যোগ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ)।

সম্প্রতি বস্তারে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা হল। ছত্তীসগঢ় দলের একাধিক ফুটবলারের কারও বাবা মাওবাদী কম্যান্ডার, কেউ আবার সাধারণ মাওবাদী কর্মী। প্রতিযোগিতা চলাকালীন খবর এসেছিল, যৌথবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। অনেকেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। আতঙ্ক ভুলতে আশ্রয় করেছিলেন ফুটবলকেই।

ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে যখন ফোনে ধরা হল, তখন তিনি ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘বস্তার জেলা আয়তনে কেরলের চেয়েও বড়। ঘন জঙ্গল। দারিদ্রের ছাপ সর্বত্র। শুনেছি, বন্য জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখনও অনেক জনজাতির মানুষ গাছের উপরে রাত্রিবাস করেন। তার উপরে রয়েছে মাওবাদী সমস্যা। ১৯৮৬ সাল থেকে রামকৃষ্ণ মিশন এই অশান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছে। ওদের সঙ্গেই যৌথ উদ্যোগে ফেডারেশন অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবলের আয়োজন করেছিল।’’

এর পরেই কল্যাণ যোগ করলেন, ‘‘অনন্তগড়ে বিকেল পাঁচটার পরে আতঙ্কে কেউ বাড়ির বাইরে বেরোতে পারতেন না। ছত্তীসগঢ় দলেরই সাত থেকে আট জন ফুটবলারের বাবা বা পরিবারের কেউ মাওবাদী। প্রতিযোগিতা চলাকালীনও ১৩জন মাওবাদী যৌথবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে। যুব সমাজ অস্ত্র নয়, বেছে নিচ্ছে শান্তিকে। নেপথ্যে ফুটবল। ফিফার মূল মন্ত্র হল, ফুটবলের মাধ্যমে বিশ্বকে এক করা। আমরাও সেই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছি। এই কারণেই টানা তিন বছর বস্তারে অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

রামকৃষ্ণ মিশনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ফেডারেশন সভাপতি আরও বললেন, ‘‘শি‌ক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলোর আয়োজন থেকে ন্যায্য মূলের দোকান— সব কিছুই রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার সময় ৩২টি দলের মোট ৫৭২ জন ফুটবলার ও প্রায় দু’হাজার ছাত্রের জন্য দৈনিক তিন হাজার ডিম প্রয়োজন। এ ছাড়াও প্রায় সাড়ে চারশো লিটার দুধ প্রয়োজন হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশনের দেড়শো গরু রয়েছে। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে তিন হাজার মুরগি কেনে তারা। এর ফলে দৈনিক সাড়ে চার হাজার টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে।’’

ফুটবলের মাধ্যমে যুব সমাজকে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ অবশ্য ফেডারেশনের নতুন নয়। কল্যাণ বলছিলেন, ‘‘কাশ্মীরে আমরা অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলের শিবির করেছি। অসমের কোকরাঝাড়ে সন্তোষ ট্রফি করেছিলাম। মণিপুরে ইন্ডিপেন্ডেন্টস কাপের সময় দেখেছিলাম, জাতীয় পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসেছেন যুব সমাজের প্রতিনিধিরা। এশিয়ান গেমসের আগে অরুণাচল প্রদেশের খেলোয়াড়দের পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কারণ, চিন স্ট্যাপলড ভিসা (স্বাভাবিক ভিসা নয়) দিচ্ছিল চিন। এই কারণেই আমরা সন্তোষ ট্রফির আয়োজন করেছিলাম অরুণাচল প্রদেশে। অভূতপূর্ব উন্মাদনা দেখেছিলাম সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই সাফল্যই আমাদের উৎসাহিত করছে ফুটবলের মাধ্যমে বিপথগামী যুব সমাজকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনায় উদ্যোগী হতে।’’

AIFF Ramkrishna mission Chattisgarh football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy