কোচিং করানোর সময় বেশ কড়া হিসাবেই পরিচিত ছিলেন স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন। কোনও দিন অনুশাসন, শৃঙ্খলার সঙ্গে আপস করেননি। কখনও-সখনও তা মাত্রাও ছাড়িতে যেত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্স তথা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন ফুটবলার প্যাট্রিস এভরা দাবি করলেন, এখন কোচিং করালে জেলে যেতে হত ফার্গুসনকে।
এভরার কথা কি কোনও ভাবে প্রভাবিত করবে গৌতম গম্ভীরকেও? ভারতের কোচ এখন কড়া হাতে দলের রাশ নিয়েছেন। ফার্গুসনের মতোই তিনিও দলের খেলোয়াড়দের অনুশাসন, শৃঙ্খলা এবং দলীয় সংস্কৃতি মেনে চলার দিকে জোর দেন। অনেকেই মনে করছেন, গম্ভীরের এই আগ্রাসন কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এমনকি ভবিষ্যতে ক্রিকেটারদের বিদ্রোহের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ম্যান ইউয়ে দীর্ঘ দিন খেলেছেন এভরা। পাঁচটি লিগ খেতাব জিতেছেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। তাঁর মতে, ফার্গুসন যে ভাবে কোচিং করাতেন তা আজকালকার দিনে অচল।
এভরার কথায়, “ফার্গুসন এখন কোচিং করালে হয়তো জেলে যেতে হত। যে ভাবে কাজ করতেন তাতে ওঁকে জেলে পাঠানো ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা পাওয়া যেত না। আপনারা জানেন ওঁর জন্য কত জন ফুটবলারকে চোখের সামনে কাঁদতে দেখেছি?”
এভরা উল্লেখ করেছেন ফার্গুসনের বিখ্যাত ‘হেয়ারড্রায়ার ট্রিটমেন্ট’-এর কথা। অর্থাৎ হেয়ারড্রায়ার থেকে যে ভাবে জোরালো এবং শব্দ করে হাওয়া বার হয়, সে ভাবেই ফার্গুসনের মুখ থেকে ফুটবলারদের উদ্দেশে তীব্র স্বরে আওয়াজ এবং শব্দের বন্যা বেরিয়ে আসত। অনেকেই তা সহ্য করতে পারতেন না।
লিভারপুলের মাঠে হওয়া একটি ম্যাচের কথা উল্লেখ করেছেন এভরা। সেই ম্যাচে লিভারপুলের জেমি ক্যারাঘারের ট্যাকলে জোরে আঘাত পেয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টারের নানি। তিনি মাঠেই কাঁদতে শুরু করেছিলেন। তাঁকেও ছাড়েননি ফার্গুসন। এভরার কথায়, “ফার্গুসন ওকে বলেছিলেন, ‘মনে হয় তোমার পা ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু ইউনাইটেডের ফুটবলারেরা কখনও অ্যানফিল্ডে (লিভারপুলের ঘরের মাঠ) এসে কাঁদে না। যদি রক্ত পড়ছে বলে তুমি কাঁদো, তা হলে তুমি শেষ। তুমি আর আমাদের অংশ নও।”
আরও পড়ুন:
গম্ভীর কোচ হয়ে আসার পর গত ছ’মাসে ভারতের তিন ক্রিকেটার অবসর নিয়েছেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড যে ভাবে ফার্গুসনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল, বিসিসিআইও পুরোপুরি স্বাধীনতা দিয়েছে গম্ভীরকে। ক্রিকেটারদের একাংশের সঙ্গে গম্ভীরের সম্পর্কও ভাল নয় বলে জানা গিয়েছে। দলের বেশ কিছু ক্রিকেটারকে গম্ভীর চাইছেন না। তিনি জোর দিতে চাইছেন তরুণ প্রজন্মের উপরে। সেটা করতে গিয়ে একাংশের বিরাগভাজন হচ্ছেন।
দলের মধ্যে তারকাদের সামলাতে গেলে কড়া হাতে হাল ধরতে হয়। ফার্গুসন সেটাই করেছিলেন। একই পথে হাঁটছেন গম্ভীরও। তিনিও দলে তারকাপ্রথার অবসান চান। এখন দেখার, তাঁর কোচিং জীবন ফার্গুসনের মতো সফল, অথচ বিতর্কে জীর্ণ হয় কি না।