E-Paper

শৃঙ্খলাই হার মানাচ্ছে বয়সকে, বলছেন সুনীল, কাপ জয়ে সতীর্থদেরই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন ভারত অধিনায়ক

সকলেই উচ্ছ্বসিত ভারতীয় দলের সাফল্যে। আপ্লুত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও। প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বার করে বুধবার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৫:৫৭
An image of Sunil Chhetri

কিংবদন্তি: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পরে উল্লসিত ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।  —ফাইল চিত্র।

কুয়েতকে হারিয়ে নবম বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। সাডেন ডেথে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পরেই তাঁকে কাঁধে তুলে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন সতীর্থরা। বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চ থেকে নেমেই তিনি ছুটেছিলেন সন্তানসম্ভবা স্ত্রী সোনমের গলায় পদক পরিয়ে দিতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর, সকলেই উচ্ছ্বসিত ভারতীয় দলের সাফল্যে। আপ্লুত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও। প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বার করে বুধবার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: অভিনন্দন অধিনায়ক। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় দলের একাধিপত্য অব্যাহত। নবম বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি কী?

সুনীল ছেত্রী: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় দল অপ্রতিরোধ্য ঠিকই। আমার কাছেও এই ট্রফি জয় নতুন নয়। কিন্তু এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।

প্র: এ বারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অন্য রকম কী কারণে?

সুনীল: আমি মনে করি এ বারের প্রতিযোগিতা অনেক বেশি কঠিন ছিল। কুয়েত ও লেবানন ফিফা ক্রমতালিকায় এই মুহূর্তে আমাদের চেয়ে যতই পিছিয়ে থাকুক, দারুণ শক্তিশালী দেশ। সাফ গোষ্ঠীভুক্ত দেশ না হলেও এএফসি এশিয়ান কাপে আমাদের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখেই ওদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ফলে শুরু থেকেই কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। গ্রুপ পর্বেও কুয়েতের বিরুদ্ধে খেলতে হয়েছিল। সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলাম লেবাননের। ফাইনালে ফের প্রতিপক্ষ কুয়েত। আসলে কোচ ইগর স্তিমাচ-সহ আমরা সকলেই চাইছিলাম এএফসি এশিয়ান কাপের আগে যত বেশি সম্ভব শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলে নিজেদের পরীক্ষা করতে। এই তিনটি ম্যাচেই ছেলেরা নিজেদের নিংড়ে দিয়েছে। ওদের জন্য আমি গর্বিত।

প্র: আটত্রিশ বছর বয়সেও আপনার খেলায় আঠারোর তেজ। বয়সকে হার মানানোর রহস্য কী?

সুনীল (হাসি): ৩৮ কী বলছেন? আর কয়েক সপ্তাহ পরেই তো আমি ৩৯ বছরে পা দিতে চলেছি (সুনীলের জন্মদিন ৩ অগস্ট)। আমি মনে করি, বয়সটা কোনও ব্যাপারই নয়। শুধু খেলোয়াড় নয়, প্রত্যেকের জীবনেই শৃঙ্খলা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি ট্রেনিংয়ে কখনও ফাঁকি দিই না। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য ও প্রচুর পরিমাণে জলপান করি। চেষ্টা করি রাত ন’টার মধ্যে শুয়ে পড়তে। সুস্থ থাকার আরও একটা শর্ত হল পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম। আমি অন্তত আট থেকে দশ ঘণ্টা ঘুমোই। ভোরবেলা উঠে ধ্যান করি। তার পরে অনুশীলনে যাই। মরসুম শেষ হওয়ার পরেও চেষ্টা করি এই রুটিন মেনে চলতে। তা ছাড়া আমার জীবনযাপন খুবই সাধারণ। হয়তো এই কারণেই এখনও খেলা চালিয়ে যেতে পারছি। ধন্যবাদ দেব কোচ, ফিজ়িক্যাল ট্রেনার-সহ দলের প্রত্যেক সদস্যকে।

প্র: সাংবাদিক বৈঠকে এলেই আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, অবসর কবে নিচ্ছেন? বারবার একই প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হন না?

সুনীল: ৩০ পেরিয়ে ৩১ বছরে পা দেওয়ার পর থেকেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত হতাম। এখন বেশ মজা পাই (হাসি)। আশা করছি, আর কত দিন খেলব, এই প্রশ্ন সম্ভবত আর কেউ করবেন না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালে লেবাননের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিনই ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কী ভাবছি, তা সকলকে বুঝিয়ে দিতে সফল হয়েছি।

প্র: ত্রিদেশীয় সিরিজ়, আন্তঃমহাদেশীয় কাপের পরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। ট্রফি জয়ের হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করার পরে অধিনায়কের পরবর্তী লক্ষ্য কী?

সুনীল: সামনে কিংস কাপ ও মারডেকা কাপ রয়েছে। তার পরে শুরু হবে আইএসএল। আগামী বছরের শুরুতে এএফসি এশিয়ান কাপ। সামনে প্রচুর খেলা রয়েছে। তবে সাফ জয়ের পরেই ড্রেসিংরুমে প্রত্যেককে বলেছি আগামী পাঁচ-ছয় দিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতে। মন তরতাজা করতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বা বেড়াতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি ।

প্র: আপনি কী করবেন?

সুনীল: আমার স্ত্রী সোনম সন্তানসম্ভবা। ও যাতে সবসময় সুস্থ এবং খুশি থাকে, এই মুহূর্তে সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্র: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে সচিন তেন্ডুলকর— সকলেই উচ্ছ্বসিত ভারতীয় দলের সাফল্যে। সমাজমাধ্যমে তাঁরাও অভিনন্দনও জানিয়েছেন ভারতীয় দলকে।

সুনীল: প্রত্যেকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। মঙ্গলবার ম্যাচের পরেই বলেছিলাম, এই জয়ে শুধু আমাদের নয়, স্টেডিয়ামে উপস্থিত সকলেরই অবদান রয়েছে-।

প্র: সুনীল ছেত্রীকে কখনওই সে ভাবে উচ্ছ্বাসে ভাসতে দেখা যায় না। কিন্তু সাফ জয়ের পরেই দেখা গেল অন্য ছবি। বিশ্বকাপ জয়ের পরে লিয়োনেল মেসিরা যে ভাবে ট্রফি নিয়ে নেচেছিলেন, ভারতীয় দলের ফুটবলাররাও হোটেলে ফিরে উৎসব করলেন। গান গাইছিলেন অধিনায়ক। হঠাৎ এই পরিবর্তনের রহস্য কী?

সুনীল: প্রথমে ইম্ফলে ত্রিদেশীয় কাপ। তার পরে ভুবনেশ্বরে আন্তঃমহাদেশীয় কাপ। তা শেষ হতে না হতেই বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। টানা ৫৫ দিন ধরে আমরা প্রত্যেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। কুয়েতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে তাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। সকলের সঙ্গে উৎসবে আমিও শামিল হয়েছিলাম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sunil Chhetri Indian Football Interview SAFF Championship

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy