Advertisement
E-Paper

লিগে ভবানীপুরের খেলা নিয়ে মধ্যরাতের নাটক! শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল, রাজনীতির গন্ধ ময়দানে, নজর আজকের ম্যাচে

ভবানীপুর প্রথমে জানিয়েছিল, শেষ ম্যাচ খেলবে না। পরে নিজেরাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে খেলার কথা জানায়। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে পরের রাউন্ডে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে তারা হঠাৎ খেলতে চাইছিল না কেন?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫৪
football

(বাঁ দিকে) ডায়মন্ড হারবার ক্লাবের কর্ণধার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবানীপুর ক্লাবের কর্ণধার সৃঞ্জয় বসু (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

কলকাতা ময়দানে আবার নাটক। এবং সে নাটকে খানিক রাজনীতি-রাজনীতি গন্ধ। আপাতদৃষ্টিতে কলকাতা ফুটবল লিগে ভবানীপুর ক্লাব বনাম ইউনাইটেড এসসি-র ম্যাচ নিয়ে জল্পনা। ম্যাচ বুধবার। নৈহাটিতে।

মঙ্গলবার ভবানীপুর প্রথমে জানিয়ে দিয়েছিল, বুধবারের ম্যাচ তারা খেলবে না। কিন্তু মধ্যরাতে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে খেলার কথা জানায়। কেন প্রথমে না খেলার সিদ্ধান্ত? কেনই বা পরে সিদ্ধান্ত বদল? কারণটি ‘হীরকখচিত’।

রাউন্ড রবিন লিগে এটিই ভবানীপুরের শেষ ম‍্যাচ। বুধবার এই ম‍্যাচ জিতলে তাদের পরবর্তী রাউন্ড, অর্থাৎ সুপার সিক্সে যাওয়ার ভাল সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ম‍্যাচ তারা ওয়াকওভার দিলে বা হেরে গেলে পরের রাউন্ডে চলে যাবে ডায়মন্ড হারবার এফসি। প্রসঙ্গত, ডায়মন্ড হারবার তাদের শেষ ম্যাচে হেরে গেলেও তাদের সুপার সিক্সে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকবে না। ধাঁধা এখানেই। পরের রাউন্ডে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা সত্ত্বেও ভবানীপুর রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচ খেলতে চাইছিল না কেন?

এ এক ঘটনাচক্রই যে, ডায়মন্ড হারবার এফসি-র কর্ণধারের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবানীপুরের কর্ণধার সৃঞ্জয় (টুম্পাই) বসু। এ-ও এক ঘটনাচক্রই যে, অভিষেক শাসক তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর। এবং সৃঞ্জয়ের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ভাল। ফলে সৃঞ্জয়ের ভবানীপুর যখন শেষমুহূর্তে বুধবারের ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃত হয়েছিল (যে ম্যাচ তারা না খেললে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার সুপার সিক্সে চলে যাবে), তখনই ময়দানে গুঞ্জন শুরু হয়। গুঞ্জন এই মর্মে যে, ভবানীপুর এবং সৃঞ্জয়ের সিদ্ধান্ত এবং সে বাবদে ডায়মন্ড হারবারের সুপার সিক্সে চলে যাওয়ার পথ খুলে যাওয়া কি কাকতালীয়? না কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে?

প্রসঙ্গত, অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার সদ্যসমাপ্ত ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠেছিল। সেমিফাইনালে তারা হারিয়েছিল তাদের তুলনায় ‘দৈত্য’ ইস্টবেঙ্গলকে। ফাইনালে অবশ্য নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের কাছে ৬ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল তারা। কিন্তু কলকাতা ফুটবল লিগে ডায়মন্ড হারবার মন্দ খেলছে না। সেই সূত্রেই যাবতীয় জল্পনা এবং আলোচনা।

যদিও ম্যাচ না খেলতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সৃঞ্জয়ের দাবি ছিল, ‘‘আমাদের সুযোগ নেই। হাতে ফুটবলারও নেই। তাই এই ম্যাচটা খেলতে চাইনি। চুক্তি অনুযায়ী, ৩১ অগস্টের পর আমরা ফুটবলার ধরে রাখতে পারি না। সেই কারণেই আমরা আইএফএ-কে গত বছর থেকে বলে আসছি, লিগের প্রাথমিক রাউন্ডটা অগস্টের মধ্যেই শেষ করে দিতে। তা হলে যাদের পরের রাউন্ডে যাওয়ার আর সুযোগ থাকবে না, তারা ফুটবলারদের ছেড়ে দিতে পারবে। যারা সুপার সিক্সে উঠবে, শুধু তারাই ফুটবলার ধরে রাখবে।’’

কিন্তু ভবানীপুর এখনও লিগ থেকে ছিটকে যায়নি। শুধু তা-ই নয়, তাদের পরের রাউন্ডে যাওয়ার সব রকম সুযোগই রয়েছে। ‘বি’ গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে ইউনাইটেড এসসি। তাদের ২৬ পয়েন্ট। ইউনাইটেড কলকাতা দ্বিতীয় (২৩ পয়েন্ট), ডায়মন্ড হারবার তৃতীয় (২২ পয়েন্ট), ভবানীপুর চতুর্থ (২১ পয়েন্ট) স্থানে। সকলেরই একটি করে ম্যাচ বাকি। বুধবার ভবানীপুর জিতলে এবং শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার পয়েন্ট নষ্ট করলেই ভবানীপুর প্রথম তিনে শেষ করবে এবং পরের রাউন্ডে চলে যাবে। মঙ্গলবার রাতে সৃঞ্জয় প্রথমে বলেন, তাঁদের আর সুযোগ নেই। পয়েন্টের হিসাব বুঝিয়ে বলার পর তিনি আবার বলেন, ‘‘ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দল নামানোর মতো ফুটবলার আমাদের এখন নেই।’’

ভবানীপুর লিগের শেষ ম্যাচটি খেলবে না জানানোর পর আইএফএ মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই ইউনাইটেড এসসি-কে চিঠি দেয়। সেখানে লেখা হয়, ‘ভবানীপুর ক্লাব আমাদের সরকারি ভাবে জানিয়েছে, আপনাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে তারা দল নামাতে পারবে না। এই প্রেক্ষিতে আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে, ভবানীপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে আপনারা দল নামাবেন না।’

তখনই নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের শুরু। তারা যে বুধবারের ম্যাচ খেলতে চাইছে না, এই খবর ছড়ানোর কিছু ক্ষণের মধ্যে ভবানীপুর সিদ্ধান্ত বদলে তড়িঘড়ি আইএফএ-কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, তারা বুধবার খেলবে। সে চিঠি পেয়ে আইএফও-ও নৈহাটি পুরসভাকে চিঠি দিয়ে এই ম্যাচ হওয়ার কথা জানিয়ে দেয়। সূত্রের খবর, ম্যাচ না-খেলার সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মনে করার অবকাশ রয়েছে, এই মর্মে আলোচনা হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত বদল। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূলের এক নেতার সঙ্গে ভবানীপুরের কর্মকর্তাদের কথা হয়। অসমর্থিত সূত্রের দাবি, তৃণমূলের তরফেই বলা হয়, ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে। নতুবা এর ‘অন্য রকম’ ব্যাখ্যা হওয়ার অবকাশ রয়েছে। সেইমতোই ভবানীপুর মধ্যরাতে আইএফএ-কে জানায় তারা বুধবারের ম্যাচ খেলবে।

আইএফএ-কে লেখা চিঠিতে ভবানীপুর জানিয়েছে, তারা কেন মত বদলে ম্যাচ খেলতে চাইছে। সেখানে লেখা হয়েছে ‘ফুটবল স্পিরিট’, ‘প্রতিযোগিতার মনোভাব’ এবং ‘স্পোরর্টসম্যানশিপ’-এর মতো ভাল ভাল কারণসমূহ। না-খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অবশ্য ভবানীপুর ক্লাব কর্তৃপক্ষের এই শব্দগুলি মনে পড়েনি। সৃঞ্জয় বললেন, ‘‘কোচ আমাদের বলেন, হাতে যে ফুটবলার রয়েছে, তাদের দিয়েই উনি ম্যাচ খেলিয়ে দেবেন। ফলে আমরাও ফুটবলের স্বার্থে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

অতএব, বুধবার নৈহাটিতে ভবানীপুর-ইউনাইটেড এসসি ম্যাচ হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি। বুধবার বিকেল ৩টেয় নৈহাটির বঙ্কিমাঞ্জলি স্টেডিয়ামে দু’দল মাঠে নামবে। যে ম্যাচের উপর নজর রাখছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ম্যাচ শেষের পরেই ফলাফল (ভবানীপুর ম্যাচ হারলেও ডায়মন্ড হারবার সুপার সিক্সে চলে যাবে) দেখে বোঝা যাবে ‘খেলা’ কোন দিকে গড়াল!

CFL 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy