Advertisement
E-Paper

ইস্টবেঙ্গলকে ডোবাল সেই রক্ষণ, চেন্নাইয়িনের কাছে হেরে প্লে-অফের স্বপ্ন প্রায় শেষ লাল-হলুদের

প্লে-অফে উঠতে গেলে চেন্নাইয়িন ম্যাচ জেতা দরকার ছিল ইস্টবেঙ্গলের। তবে রক্ষণের খারাপ পারফরম্যান্স এবং স্ট্রাইকারদের গোল নষ্টে ঘরের মাঠে হারতে হল ইস্টবেঙ্গল। প্লে-অফের স্বপ্ন প্রায় শেষ।

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩০
football

ঘরের মাঠে হারল ইস্টবেঙ্গল। — ফাইল চিত্র।

ইস্টবেঙ্গল ০
চেন্নাইয়িন ৩ (নিশু-আত্মঘাতী, জর্ডান, চিমাচুকু)

স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন ভাঙা। চলতি মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এই শব্দগুলি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। কোনও ম্যাচে জিতলেই প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে যায়। হারলেই সেই স্বপ্ন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। শনিবার ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র কাছে ০-৩ গোলে হারের পর ইস্টবেঙ্গলের প্লে-অফে ওঠার স্বপ্ন অঙ্কের হিসাবে বেঁচে আছে বটে। তবে অনেক যদি-কিন্তুর উপরে নির্ভর করতে হবে তাদের। ইস্টবেঙ্গল সব ম্যাচ জিতলে এবং পাঁচ বা ছয়ে থাকা দলগুলি পর পর হারলে তবে সুযোগ থাকতে পারে। এই মুহূর্তে তেমনটা ভাবা দিবাস্বপ্নই।

কী করে বাঁচানো যাবে এই ইস্টবেঙ্গলকে? ভাল খেলোয়াড় এবং ভাল কোচ আনা পরিকল্পনার একটা অংশ হতে পারে। কিন্তু খেলোয়াড়েরা যদি একই ভুল দিনের পর দিন করে যান তা হলে কোনও কোচেরই কি কিছু করার থাকতে পারে? ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে। কার্লেস কুয়াদ্রাত থেকে অস্কার ব্রুজ়ো, হাজার চেষ্টা করেও কেউ ভুলের পুনরাবৃত্তি আটকাতে পারছেন না। আর কত বার ভুল করলে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়েরা শিক্ষা নেবেন কে জানে!

শিশুসুলভ ভুল নিশুর

দীর্ঘ দিন পর ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে প্রথম সারির ফুটবলারদের পেয়েছিলেন অস্কার ব্রুজ়‌ো। কিন্তু অভিজ্ঞ ফুটবলারেরা মাঠে নেমে যদি শিশুসুলভ ভুল করেন তা হলে একজন কোচের আর কী-ই বা করার থাকে! শুরুটা ভাল করেছিল ইস্টবেঙ্গল। তবু এ দিনও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দশ মিনিট যেতে না যেতেই তারা খোলসে ঢুকে পড়তে থাকে। কেন টানা চাপ বজায় রাখতে পারছে না ইস্টবেঙ্গল, তা ভাবতে হতে পারে অস্কারকে। চেন্নাইয়িন ধীরে ধীরে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। ইরফান ইয়াদওয়াদ এবং জিতেশ্বর সিংহকে থামাতে নাজেহাল হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ঠিক সেই মুহূর্তেই ভুলটা করে বসেন নিশু কুমার।

শুরু থেকেই কোনর শিল্ডস ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। তিনিই প্রথম গোলটা আদায় করে নেন। বক্সে ঢুকে বল ডান দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় আটকাতেই পারেননি নিশু। উল্টে শিল্ডসের ব্যাক হিলের সময় অনাবশ্যক বলে পা লাগিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন। বলে নিশুর পা না লাগলে ক্লিয়ার হতেও পারত। চলতি মরসুমে এই নিয়ে ১০টি আত্মঘাতী গোল হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের। কোনও দলের পক্ষেই এই পরিসংখ্যান কাম্য নয়। দ্বিতীয় গোলও হল সেই নিশুরই দোষে। এ বার ইরফানকে আটকাতে ব্যর্থ তিনি। ইরফানের ক্রসে পা লাগিয়ে গোল জর্ডান উইলমারের। লালচুংনুঙ্গা ধরতেই পারলেন না জর্ডানকে। গোটা ম্যাচে রক্ষণে এমন আরও বিড়ম্বনার মুহূর্ত তৈরি হল, যেখানে ইস্টবেঙ্গল গোল খেতে পারত।

অস্কারের ‘প্ল্যান বি’ ব্যর্থ

চলতি মরসুমে ইস্টবেঙ্গল ৭৮ শতাংশ গোল করেছে দ্বিতীয়ার্ধে। তার মধ্যে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে থেকে চার গোল দিয়েছে। সব ম্যাচে তা হয় না। পঞ্জাব যে ভাবে ইস্টবেঙ্গলের সামনে গোলের দরজা খুলে দিয়েছিল, তা করল না চেন্নাইয়িন। ওয়েন কয়েলের দলের রক্ষণ ম্যাচের শুরু থেকেই যথেষ্ট সংহত ছিল। গোটা ম্যাচে তাতে ভাঙন ধরাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বিরতির পরেই কৌশলে বদল আনেন অস্কার। হেক্টর ইয়ুস্তের জায়গায় প্রভাত লাকরাকে নামিয়ে দেন। নিশু উঠে যান মাঝমাঠে। সেই কৌশল প্রাথমিক ভাবে কাজে দেয়। ইস্টবেঙ্গল অনেক বেশি আক্রমণ করতে থাকে। এর পর রাফায়েল মেসি বোউলি এবং নন্দকুমারকেও নামিয়ে দেন অস্কার। তাতে ইস্টবেঙ্গলের খেলায় বদল এলেও ম্যাচ জেতানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। চেন্নাইয়িনের কোচও অভিজ্ঞ। ইস্টবেঙ্গল কোচের কৌশল বুঝে তিনি রক্ষণ জমাট করে দিলেন। সেই দেওয়ালে গিয়ে বার বার ধাক্কা খেল ইস্টবেঙ্গল।

সহজ সুযোগ নষ্ট

ম্যাচ না জিতলেও ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেতেই পারত। পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা তো বটেই, ইস্টবেঙ্গল এমন দু’টি সুযোগ পেয়েছিল যা কাজে লাগালে ম্যাচটা ২-২ হতে পারত। তিন মিনিটের ব্যবধানে দু’টি সুযোগই নষ্ট করে তারা। প্রথম সুযোগটি আসে ৫৫ মিনিটে। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নিশুর ভাসানো ফ্রিকিক ডান দিকে পেয়ে যান সাউল। সামনে একা ছিলেন চেন্নাইয়িনের গোলকিপার মহম্মদ নওয়াজ়‌। এত ভাল জায়গা থেকেও অবিশ্বাস্য ভাবে বাইরে শট মারেন সাউল। তিন মিনিট পরে সুযোগ নষ্টের তালিকায় নাম লেখান রিচার্ড সেলিস। নিজেদের অর্ধ থেকে লালচুংনুঙ্গার মাপা ক্রস তাঁর পায়ে পড়ে। সেলিসের ক্ষেত্রেও সামনে একা নওয়াজ় ছাড়া কেউ ছিলেন না। ভেনেজুয়েলার ফুটবলারের সামনে লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম গোল করার সুযোগ ছিল। তিনি পোস্টের বাইরে মারেন।

আবার উজ্জ্বল বিষ্ণু

ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ব্যর্থতার দিনে যদি কেউ আলাদা করে নজর কেড়ে নেন তা হলে তিনি পিভি বিষ্ণু। কেরলের তরুণ খেলোয়াড় যে ক’টি ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই ছাপ ফেলার চেষ্টা করেছেন। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হল না। চেন্নাইয়িন ফুটবলারদের বিরুদ্ধে অনেকগুলি ‘ডুয়েল’ জিতেছেন। সুবিধাজনক জায়গায় ফাউল আদায় করে নিয়েছেন। প্রতি ম্যাচেই নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার একটা খিদে রয়েছে বিষ্ণুর। তবে বল বেশি ক্ষণ পায়ে রাখার ‘রোগ’ এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

ইস্টবেঙ্গলের বিদেশিদের মান

সেলিস খুব খারাপ নয়। আজকে সুবর্ণতম সুযোগ নষ্ট করলেও বলার অপেক্ষা রাখে না যে তিনি অনেক বিদেশির থেকেই ভাল। গতি রয়েছে, পরিশ্রম করতে পারেন। তবে রাফায়েল মেসি বোউলিকে নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদিও দলের সঙ্গে এক বারও অনুশীলন করেননি। কতটা ফিট তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাঁকে মাঠে প্রায় ৪০ মিনিট রাখলেন অস্কার। খেলার থেকে দূরে থাকলেও যিনি জাত ফুটবলার হন, তিনি একটা-দুটো টাচ বা মুভমেন্টেই বুঝিয়ে দিতে পারেন নিজের ক্ষমতা। বোউলির প্রথম দিনের খেলায় অন্তত সেটা দেখা গেল। তবে মাঝমাঠে হতাশ করেছেন সাউল। খেলা তৈরি করার ব্যাপারে চূড়ান্ত ব্যর্থ। একটি সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন। প্রথম গোলের ক্ষেত্রেও তাঁর মিস পাস দায়ী।

East Bengal Chennaiyin FC ISL 2024-25
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy