কেরল ব্লাস্টার্স ২ (জিমেনেজ়-পেনাল্টি, নোয়া)
ইস্টবেঙ্গল ০
সুপার কাপে নামার আগে ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজ়ো জানিয়েছিলেন, তাঁর দল তিন সপ্তাহ ধরে ‘কঠোর’ পরিশ্রম করেছে। আবার এশীয় মঞ্চে ফিরতে তারা তৈরি। সেই ফানুস চুপসে যেতে এক দিনও লাগল না। রবিবার সুপার কাপের প্রথম ম্যাচেই কেরল ব্লাস্টার্সের কাছে ০-২ হেরে বিদায় নিল গত বারের চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল। ফলে পরের শনিবার কলকাতা ডার্বি হচ্ছে না। এশীয় মঞ্চে পরের বছর লাল-হলুদের খেলার সম্ভাবনাতেও ইতি।
ব্রুজ়ো যা যা বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের খেলায় তার কোনও ছাপই দেখা গেল না। যে দল তিন সপ্তাহ ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছে, তাদের খেলায় না আছে কোনও বুদ্ধিমত্তার ছাপ, না আছে কোনও বাড়তি খিদে, না আছে জেতার তাগিদ। অস্কার সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে যতই লাফালাফি করুন, তাঁর হাতে যে ফুটবলারেরা রয়েছেন তাঁদের নিয়ে এর থেকে ভাল কিছু আশা করা সম্ভব নয়, এটা এখনই মেনে নেওয়া ভাল।
ম্যাচটা কেরল আরও বেশি গোলে জিততে পারত। পারল না নিজেদের ভুল এবং ইস্টবেঙ্গলের কিছু খেলোয়াড়ের পরিশ্রমে। আনোয়ার আলির একটি ভুল থেকে ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি হজম করেছে ঠিকই। কিন্তু গোটা ম্যাচে তিনি না থাকলে বিপদে পড়তে হত। তেমনই দিক পরিবর্তন করে করে পি ভি বিষ্ণু বার বার সমস্যায় ফেলেছেন বিপক্ষকে। কিন্তু ১১ জনের খেলায় এক জন-দু’জন কতটাই বা ছাপ ফেলতে পারেন।
এই ইস্টবেঙ্গল দলকে ডোবানোর জন্য একটা রিচার্ড সেলিস বা হেক্টর ইয়ুস্তেই যথেষ্ট। প্রথম জনের সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। মাঠের বাইরে তাঁর আচার-ব্যবহারের সঙ্গে খেলার কোনও মিল নেই। সহজ বলও ঠিক করে ক্রস করতে পারছেন না। বক্সের ঠিক বাইরে পাওয়া ফ্রিকিক বারের অনেক উপর দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁকে ‘সম্মান’ জানিয়ে ওয়ালও ঠিক করে সাজায়নি কেরল।
সুপার কাপে ছয় বিদেশিকে প্রথম একাদশে রাখা যাবে। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের হাতে ছিলই পাঁচ বিদেশি। তাঁদেরও একজন, সাউল ক্রেসপোকে চোটের কারণে শুরু থেকে খেলাতে পারেননি অস্কার। বিদেশিদের মধ্যে একটু হলেও চোখে লাগল রাফায়েল মেসি বোউলির খেলা। বড় শরীর নিয়ে কিছুটা হলেও লড়াই করলেন।
দিমিত্রি দিয়ামানতাকোস আইএসএলও যা ছিলেন, সুপার কাপেও তাই। বক্সে বল নিয়ে ঢুকলেই পড়ে গিয়ে পেনাল্টি আদায়ের চেষ্টা, শরীর ঘোরাতেই অনেকটা সময় লেগে যাওয়া, সবই তাঁর খেলায় আগের মতোই রয়েছে। পরের দিকে নেমে তা-ও ক্রেসপো বেশ কিছু পাস বাড়ালেন, সেট পিস নিলেন। তবে পুরো ফিট এখনও নন। তাই নিজের সেরাটাও দিতে পারলেন না।
অস্কারের কৌশলও অবাক করার মতোই। বিষ্ণুকে উইং দিয়ে সে ভাবে ব্যবহারই করলেন না। বল না পেয়ে বিষ্ণুকে বার বার নীচে নেমে আসতে হল। তাঁর খেলার মধ্যেও আগের মতো ঝাঁজ দেখা যায়নি। কেরলের নোয়া সাদাউই যে কাজটা করে গেলেন, সেটা ইস্টবেঙ্গলের কেউ পারলেনই না। দু’দিক থেকে বিষ্ণু এবং নন্দকুমারকে খেলালে একটু হলেও চাপে পড়ত কেরল। বিরতির আগে বিষ্ণুর শট পোস্টে লাগার পর ফিরতি বলে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন বোউলি।
আরও পড়ুন:
ইস্টবেঙ্গলের হারের ব্যবধান আরও বাড়ত যদি কেরল সুযোগ নষ্ট না করত। ডান দিক থেকে নোয়ার ভাসানো একটা বল সোজা এসে পড়েছিল জেসুস জিমেনেজ়ের পায়ে। পা ছোঁয়ালেই গোল। সেটাও তিনি পারলেন না। কিছু ক্ষণ পরে আবার জিমেনেজ়কে একটি পাস বাড়ান নোয়া। সেটাও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। আনোয়ার বক্সের মধ্যে নোয়াকে ফেলে দেওয়ায় পেনাল্টি পেয়েছিল কেরল। সেখানেও প্রথম প্রয়াসে তাঁর শট বাঁচিয়ে দেন প্রভসুখন। তবে লাল-হলুদ গোলকিপার এগিয়ে আসায় রেফারি আবার পেনাল্টি নিতে বলেন জিমেনেজ়কে। সেই প্রয়াসে সফল স্পেনীয় ফুটবলার।
নোয়ার গোলটি চোখে লেগে থাকার মতোই। ডান দিক থেকে একাই বল নিয়ে দৌড়ে হালকা বাঁক নিয়ে বাঁ পায়ে জোরালো শট মারলেন। প্রভসুখন জায়গায় থাকলেও বলের যা গতি ছিল তাতে আঙুলও ছোঁয়াতে পারলেন না। সেই নোয়াই সংযুক্তি সময়ে একা প্রভসুখনকে পেয়েও বাইরে মারলেন।
দল দু’গোল খেয়ে যাওয়ার পর শৌভিক চক্রবর্তীকে নামালেন অস্কার। তখন তিনি কী করতেন? আরও গোল খাওয়া আটকাতেন? এই পরিবর্তনের মানেই বোঝা গেল না। ঠিক তেমনই ৮৩ মিনিটে ডেভিড লালানসাঙ্গাকে না নামিয়ে কেন আরও আগে নামানো গেল না, সেই প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক।
আপাতত সব প্রশ্নেরই উত্তর অজানা। ইস্টবেঙ্গলের আরও একটি মরসুম শেষ খালি হাতেই।