দলের অনুশীলনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সোমবার দোহার গ্র্যান্ড হামাদ স্টেডিয়ামে। ছবি রয়টার্স।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ভরসা। আবার তাঁকে নিয়েই যত সমস্যা পর্তুগাল শিবিরে!
লুসেল স্টেডিয়ামে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের শেষ ষোলো ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠকে রোনাল্ডোর আচরণ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ফের্নান্দো স্যান্টোস। সোমবার বিকেলে কাতার কনভেনশন সেন্টারের সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে পর্তুগাল কোচ যখন থমথমে মুখে ঢুকলেন, বোঝাই যাচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ৬৫ মিনিটে তাঁকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি সি আর সেভেন। প্রকাশ্যেই তিনি অসন্তোষ জানান। স্যান্টোস বলছেন, ‘‘ওর এই আচরণ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমার খুবই খারাপ লেগেছে।’’
সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অন্দরমহলের অশান্তি পর্তুগাল শিবিরকে কতটা চাপে রাখছে? এ বার সতর্ক হয়ে গেলেন স্যান্টোস। দাবি করলেন, ‘‘বন্ধ দরজার আড়ালেই সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। এই নিয়ে আর কোনও কথা বলতে চাই না। সুইৎজ়ারল্যান্ড ম্যাচে এখন মনোনিবেশ করছি আমরা।’’
সত্যিই সব সমস্যা কি মিটে গিয়েছে? পর্তুগালের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে কিন্তু তা মনে হল না। তাঁদের মতে, বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছেন জাতীয় দলের কোচ। অন্দরমহলের পরিস্থিতি একেবারেই ইতিবাচক নয়। কেন? তাঁদের দাবি, ‘‘মাঠ থেকে তুলে নেওয়ায় ক্ষিপ্ত রোনাল্ডো অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন কোচকে। স্যান্টোসের পক্ষে এই অপমান মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’ সি আর সেভেন যদিও দাবি করেছেন, তিনি কোচকে আক্রমণ করেননি। সেই ম্যাচের পরেই বলেছিলেন, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলাররা আমাকে তাড়াতাড়ি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলছিল। আমি ওদের বলেছিলাম, চুপ করো। তোমাদের কোনও অধিকার নেই আমাকে এ ভাবে বেরিয়ে যেতে বলার। স্যান্টোসের সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলাই হয়নি।’’
তাতেও কিন্তু ছবিটা বদলাচ্ছে না। পর্তুগালের এক সাংবাদিক হতাশ হয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘মেসিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে মরিয়া। ক্ষুধার্ত হয়ে রয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। রোনাল্ডোরও এটাই শেষ বিশ্বকাপ সম্ভবত। অথচ ওর মন যেন অন্য কোথাও পড়ে রয়েছে। বিশ্বকাপে খুব একটা আশা দেখছি না আমরা। তা ছাড়া ফিটনেসের সমস্যাও রয়েছে সি আর সেভেনের।’’ এই মুহূর্তে কোচের সঙ্গে রোনাল্ডোর যা সম্পর্ক, তাতে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে থাকবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। স্যান্টোসের কথাতেও সে রকমই ইঙ্গিত। স্যান্টোস সাংবাদিক বৈঠকে বলে দিলেন, ‘‘ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে ঢুকেই আমি প্রথম একাদশ ঘোষণা করি।’’
সাম্প্রতিক সাক্ষাতে দু’টি দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছে। উয়েফা নেশনস লিগে লিসবনে ঘরের মাঠে ৪-০ জিতেছিল পর্তুগাল। জোড়া গোল করেছিলেন রোনাল্ডো। ঘরের মাঠে ১-০ জিতে তার বদলা নিয়েছিলেন জ়ারদান শাকিরিরা। এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। কোচ বনাম অধিনায়ক বিবাদের জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছে পর্তুগালের অন্দরমহল।
ঠিক উল্টো ছবি সুইৎজ়ারল্যান্ড শিবিরে। সার্বিয়াকে ৩-২ হারিয়ে শেষ ষোলোয় উঠে চনমনে আল্পসের মেসিরা। তিনি ইতিমধ্যেই হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন, ‘‘ম্যাচে বিশেষজ্ঞরা পর্তুগালকেই এগিয়ে রাখছেন। এই কারণেই আমাদের এই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতে হবে। আমাদের দলে কোনও ক্রিশ্চিয়ানো নেই। এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক। সব ঠিক থাকলে আমরা শেষ আটে যোগ্যতা অর্জন করব।’’
শোনা যাচ্ছে, সৌদি আরবের আল নাসের দলের সঙ্গে রোনাল্ডোর কথাবার্তা পাকা হয়ে গিয়েছে। ১৭১৯ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে পর্তুগিজ তারকার সঙ্গে। কোচের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে কাতার বিশ্বকাপের শেষ আটে পর্তুগালকে তোলার অগ্নিপরীক্ষায় কি সফল হবেন রোনাল্ডো? প্রতীক্ষায় রয়েছেন সকলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy