Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
FIFA World Cup 2022

মেসিদোনা! তারুণ্যকে হারিয়ে বিশ্বজয়ী বৃদ্ধ রাজা, বিশ্বকাপ জিতে মারাদোনাকে ছুঁলেন মেসি

তৃতীয় বারের জন্য বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সকে হারালেন মেসিরা। জোড়া গোল মেসির। অতিরিক্ত সময়ের শেষে খেলার ফল ছিল ৩-৩। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হল ফয়সালা।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ জিতলেন লিয়োনেল মেসি।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ জিতলেন লিয়োনেল মেসি। ছবি: ইমাগো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:২৫
Share: Save:

বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সেরা ফাইনাল। গোটা ম্যাচ জুড়ে বার বার বদলাল খেলার রং। প্রথমার্ধে লিয়োনেল মেসি ও অ্যাঙ্খেল দি মারিয়ার গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে জোড়া গোল করলেন কিলিয়ান এমবাপে। অতিরিক্ত সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন মেসি। খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হল খেলার ফয়সালা। সেখানে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা। মেসিদের হয়ে নায়ক হয়ে উঠলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ফ্রান্সের দু’টি গোল বাঁচালেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের শেষ বিশ্বকাপ জিতে মাঠ ছাড়লেন মেসি।

দুই অর্ধে দেখা গেল দুই ছবি। প্রথমার্ধ যদি লিয়োনেল মেসির হয়, তা হলে দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ থেকে ৮৫ মিনিটের মধ্যে খেলার ছবি বদলে দিলেন কিলিয়ান এমবাপে। দু’দলের দুই সেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন মেসি। প্রথমার্ধে মেসি একটি গোল করলেন তো এমবাপে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে লড়াইয়ে রাখলেন। প্রথম ৭০ মিনিট খেলায় দাপট দেখাল আর্জেন্টিনা। কিন্তু তার পরে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশ‌ঁর দুটো পরিবর্তন খেলার রং বদলে দিল। কোম্যান ও কামাভিঙ্গা নামার পরে এমবাপে সেই খেলাটা খেললেন যেটা তিনি প্রথমার্ধে খেলতে পারেননি। ৯০ মিনিটে খেলা শেষ হল ২-২। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে আবার গোল করলেন মেসি। কিন্তু তাতেও জয় আসেনি। তিন মিনিট বাকি থাকতে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত খেলা গড়া টাইব্রেকারে। সেখানে বাজিমাত করলেন মেসিরা।

খেলাটা হওয়ার কথা ছিল মেসি বনাম এমবাপের। দুই দলের দুই ১০ নম্বর জার্সিধারীদের। সেখানে প্রথমার্ধে তরুণ যুবরাজকে প্রতি পদে টেক্কা দিলেন বৃদ্ধ রাজা। বয়স হয়তো হয়েছে, কিন্তু ধার কমেনি। গতি হয়তো কিছুটা কমেছে, কিন্তু রক্ষণ চেরা পাস কমেনি। প্রথমার্ধ জুড়ে তার ঝলক দেখা গেল। নিজের শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে মরিয়া হয়ে খেলছিলেন মেসি। আর তাঁকে বিশ্বকাপ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে খেলছিলেন আর্জেন্টিনার বাকি ১০ ফুটবলার। রক্ষণ, মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ, কোথাও ফ্রান্সকে একটু জায়গা দিলেন না আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে রক্ষণেও নামতে দেখা গেল মেসিকে। যথার্থ নেতার মতো খেললেন তিনি।

প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার দুরন্ত ফুটবলের পিছনে কোচ স্কালোনির মস্তিষ্কের প্রশংসা করতে হয়। তিনি জানতেন ফ্রান্সের সেরা দুই ফুটবলার এমবাপে ও গ্রিজম্যান। এমবাপে খেলেন প্রান্ত ধরে। গ্রিজম্যান খেলেন মাঝখান থেকে। অনেকটা মেসির মতো। এমবাপের দৌড় বন্ধ করার জন্য মোলিনা ও ম্যাক অ্যালিস্টারকে রেখেছিলেন স্কালোনি। পালা করে এমবাপেকে নজরে রাখলেন তাঁরা। এক বারের জন্যও ফাঁকা পেলেন না এমবাপে। প্রথমার্ধে এক বার ছাড়া আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকতে পারেননি এমবাপে। প্রথমার্ধে জোড়া গোল খাওয়ার পরে বাধ্য হয়ে দেম্বেলে ও অলিভিয়ের জিহুকে তুলে নেন ফ্রান্সের কোচ দেশঁ। এমবাপেকে প্রধান স্ট্রাইকার করে দেওয়া হয়। তাতে তাঁর কার্যকারিতা আরও কমে যায়। দেখাই যাচ্ছিল না এমবাপেকে।

প্রথমার্ধে মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনার আরও এক জনের নাম করতেই হয়। অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। চোটের কারণে নকআউটের কোনও ম্যাচে খেলেননি। ফাইনালের জন্য তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। কেন রেখেছিলেন, সেটা বোঝা গেল। আর্জেন্টিনার প্রায় সব আক্রমণই হল প্রান্ত ধরে। দি মারিয়া না থাকায় আগের তিন ম্যাচে যেটা দেখা যায়নি। প্রথম গোলের পিছনে দি মারিয়া। বক্সের মধ্যে তাঁকে ফাউল করেন ওসমান দেম্বেলে। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। স্পটে বল বসালেন মেসি। এক বার চোখ বন্ধ করলেন। একটু সময় নিলেন। তার পরে হুগো লরিসকে ভুল দিকে ফেলে গোল করলেন। ফাইনালে গোল করে মেসির উচ্ছ্বাস প্রকাশেও দেখা গেল নতুনত্ব। গোল লাইনের বাইরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন তিনি। ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন বাকি সতীর্থরা।

আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোল এল দি মারিয়ার পা থেকেই। প্রতি আক্রমণে নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে বাঁ পায়ের আউট সাইড দিয়ে রদ্রিগো দি পলকে পাস দেন মেসি। দি পলের পা থেকে বল পান আলভারেস। বাঁ দিক দিয়ে অরক্ষিত উঠছিলেন দি মারিয়া। আলভারেসের থেকে বল পেয়ে আগুয়ান লরিসের উপর দিয়ে গোল করতে ভুল করেননি দি মারিয়া।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলা যত গড়াল তত ম্যাচে দাপট দেখাতে শুরু করলেন এমবাপে। বয়সের ছাপ কোথাও হয়তো দেখা গেল মেসির খেলায়। বল ধরছিলেন। কিন্তু সে ভাবে আক্রমণ তৈরি করতে পারছিলেন না। অন্য দিকে এমবাপে নিজের পছন্দের জায়গায় খেলা শুরু করতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। বক্সের মধ্যে ওটামেন্ডি ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গোল করেন এমবাপে। দু’মিনিট পরেই বক্সের মধ্যে থেকে ডান পায়ের দুরন্ত শটে ফ্রান্সের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন এমবাপে। নির্ধারিত সময়ের শেষ ১০ মিনিটে এগিয়েও যেতে পারত ফ্রান্স। এমবাপের জোরালো শট একটুর জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়। খেলার সংযুক্তি সময়ে আবার ফ্রান্সের গোল লক্ষ্য করে একটি শট মেরেছিলেন মেসি। নিজেকে শূন্যে ছুড়ে দিয়ে সেই বল বাঁচান লরিস।

অতিরিক্ত সময়েও আক্রমণ- প্রতি আক্রমণের খেলা চলতে থাকে। প্রথমার্ধে বেশি সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। সুযোগ নষ্ট করেন আরভারেস। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করেন মেসি। লাউতারো মার্তিনেসের শট লরিস আটকে দিলেও ফিরতি বলে গোল করেন মেসি। দেখে মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনা জিতে যাবে। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে মন্তিয়েল বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। নিজের তিন নম্বর গোল করেন এমবাপে। শেষ দিকে ম্যাচ জেতার সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন কোলো মুয়ানি। কিন্তু তাঁর শট দারুণ বাঁচান মার্তিনেস। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে বাজিমাত করল আর্জেন্টিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE