দেড় বছর পর আবার বড়দের ডার্বির রং লাল-হলুদ। ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগানকে হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। জোড়া গোলে ম্যাচের নায়ক দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস। এই জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে কোচ অস্কার ব্রুজ়োর মগজাস্ত্রের। তিনি টেক্কা দিয়েছে হোসে মোলিনাকে। ঠিক কোথায় কোথায় মোহনবাগানকে টেক্কা দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।
দলের ফাঁক ভরাট— গত বার ইস্টবেঙ্গলের দলে অনেক ফাঁক ছিল। তা ভরাট করতে পেরেছেন ব্রুজ়ো। রক্ষণে হিজাজি মাহেরের বদলে এনেছেন কেভিন সিবিলেকে। আনোয়ার আলির সঙ্গে সিবিলের জুটি ভাল দেখাচ্ছে। এই ম্যাচে জেমি ম্যাকলারেনকে নড়তে দেননি তাঁরা। দ্বিতীয়ার্ধে বাগানের আক্রমণের চাপ সামলেছেন। গোললাইন সেভ করেছেন সিবিলে। মিগুয়েল ফিগুয়েরার মতো বিদেশি দলে এসেছে। আবার বিপিন সিংহ ও এডমুন্ড লালরিন্ডিকার মতো দু’জন ভাল ভারতীয় উইঙ্গার এনেছেন ব্রুজ়ো। ডার্বিতে তাঁরা দুর্দান্ত খেলেছেন। লাল-হলুদের অনেক আক্রমণ হয়েছে প্রান্ত ধরে। ফলে এ বার মোহনবাগানকে টেক্কা দেওয়ার মতো দল নামাতে পেরেছে ইস্টবেঙ্গল। তার ফল পেয়েছে তারা।
মাঝমাঠের দখল— ফুটবলে মাঝমাঠের দখল যার কাছে থাকে, ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা তার বেশি। এটা সহজ সত্য। সেটাই করে দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষ মোহনবাগানের মাঝমাঠ তারকাখচিত। জাতীয় দলে খেলা লিস্টন কোলাসো, সাহাল আব্দুল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপা, আপুইয়ারা খেলেন সেখানে। তাঁদেরই মাটি ধরালেন ব্রুজ়ো। ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে মিগুয়েল, সাউল ক্রেসপো, শৌভিক চক্রবর্তীদের মধ্যে দূরত্ব খুব কম ছিল। ফলে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছিলেন তাঁরা। চাপে পড়ে বাগানের মাঝমাঠের ফুটবলারদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। ফলে বোঝাপড়া ঠিকমতো হচ্ছিল না। সেই কারণে প্রথমার্ধে তেমন আক্রমণই করতে পারেনি বাগান।
আক্রমণাত্মক ফুটবল— গত কয়েকটা ডার্বিতে দেখা গিয়েছে, শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল শুরুটা দেখে নিতে চেয়েছে। কিন্তু এই ডার্বিতে মোলিনাকে শুরুতেই চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন ব্রুজ়ো। তাই শুরু থেকেই আক্রমণ শুরু করে লাল-হলুদ। প্রথম মিনিটেই বাগানের গোলে শট মারেন লালরিন্ডিকা। সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, কোন মনোভাব নিয়ে খেলবে তারা। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৫ মিনিটের আগে আক্রমণের ঝাঁজ বেশি ছিল ইস্টবেঙ্গলের। সেখানেই পিছিয়ে পড়ে মোহনবাগান। দ্বিতীয়ার্ধে আবার ৮০ মিনিটের পর আবার আক্রমণে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। এই আক্রমণাত্মক ফুটবল কাজে লাগল।
আরও পড়ুন:
মোলিনার পরিকল্পনাকে ভোঁতা করা— মোহনবাগান কোচ মোলিনার পরিকল্পনাকে ভোঁতা করেছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ ব্রুজ়ো। মোলিনা যে যে তাস খেলেছেন তার পাল্টা তাস খেলেছেন ব্রুজ়ো। ৬০ মিনিটের পর একসঙ্গে তিন পরিবর্তন করেন মোলিনা। ফলে বাগান আক্রমণ থেকে গোল তুলে আনে। সেটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে খেলার গতি কমিয়ে দেন ব্রুজ়ো। সময় নষ্ট করতে থাকেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। তাতে বাগান যে ছন্দ পেয়ে গিয়েছিল তা নষ্ট হয়। তার পর প্রয়োজন অনুযায়ী বদল করেন ব্রুজ়োও। অর্থাৎ, মোলিনার চালে অবাক হননি ব্রুজ়ো। তাঁর কাছে আগে থেকেই সব চালের জবাব ছিল।
ইস্টবেঙ্গলের জেতার তাগিদ— দেড় বছর পর আবার ডার্বি জিতেছে ইস্টবেঙ্গল। শেষ বার জিতেছিল গত বছর সুপার কাপে। আইএসএল ডার্বিতে এখনও পর্যন্ত মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকেরা বার বার হতাশ হয়েছেন। তার পরেও মাঠ ভরিয়েছেন। লাল-হলুদ ফুটবলারদের মধ্যে একটা জেতার তাগিদ তৈরি করতে পেরেছেন ব্রুজ়ো। তাঁদের খেলা দেখে সেটা বোঝা গিয়েছে। দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোসকে শুরুতে নামাননি ব্রুজ়ো। কোচের প্রথম পছন্দ হতে না পেরে কি জেদ আরও বেড়ে গিয়েছিল তাঁর? দিয়ামানতাকোসের জোড়া গোল সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই জেদটাই আগের ডার্বিতে ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। সেটা আনতে পেরে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন ব্রুজ়ো।