বিস্তর টালবাহানার পর আপাতত স্থগিত হয়ে গিয়েছে এই মরসুমে আইএসএল। পাঁচ দিন আগে ক্লাবগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে আয়োজক এফএসডিএল। সেই খবরে বেশ উদ্বিগ্ন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। সমাজমাধ্যম দীর্ঘ বার্তা পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, ফুটবলের ব্যবস্থাপনার কাঠামোই ‘চিন্তিত, ব্যথিত এবং ভীত’।
আইএসএলে বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলেন সুনীল। দু’বছর আগে আইএসএল কাপ জিতেছে তাঁর দল। সেই সুনীল সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “এমনিতেই আমি কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। হাতে থাকা সময় ক্রমশ কমছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি, আমার স্বার্থপর সমস্যা অতটাও গুরুতর নয়। ভারতীয় ফুটবল এখন যে অবস্থায় রয়েছে তা অত্যন্ত চিন্তার।”
সুনীল আরও লিখেছেন, “শুধু নিজের ক্লাব নয়, অন্যান্য ক্লাবের খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ, ফিজিয়ো, ম্যাসিওরদের থেকে বহু বার্তা পেয়েছি। যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা দেখে ভারতীয় ফুটবলের কাঠামোর সঙ্গে জড়িত থাকা প্রত্যেকে চিন্তিত, ব্যথিত এবং ভীত। আমি জানি যাঁরা ফুটবলটা চালান তাঁরা মরসুম শুরু করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। আশা করি দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত হবে।”
সুনীল জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সব উত্তর তাঁর কাছেও নেই। তবে যাঁরা ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের শান্ত থাকার আবেদন করেছেন তিনি। একসঙ্গে এই সময়টা কাটিয়ে ফেলবেন, এমনই আশা তাঁর।
আইএসএল স্থগিত হয়ে যেতে পারে এমন একটা খবর ছিলই। অনেক ক্লাবই তাঁদের প্রাক মরসুম প্রস্তুতি পিছিয়ে দিয়েছে। ব্যতিক্রম নয় বেঙ্গালুরুও। তারা ডুরান্ড কাপে খেলছে না। আইএসএলের প্রস্তুতিও এখনও শুরু করেনি।
সুনীল নিজের বার্তার শুরুতে লিখেছেন, “কিছু দিন আগে যখন খবর পেলাম আমাদের প্রাক মরসুম প্রস্তুতি এক পক্ষকাল পিছিয়ে গিয়েছে, তখন হেসেছিলাম। ছুটিতে থাকার কারণে খুব বেশি পরিশ্রম করিনি। খাওয়া-দাওয়াও সে ভাবে কমাতে পারিনি। তাই নিজেকে পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতে কিছুটা বাড়তি সময় চলে এসেছিল। সেই ‘পক্ষকাল’ এখন ‘অনির্দিষ্টকাল’ হয়ে গিয়েছে। আমার মুখের হাসিও মিলিয়ে গিয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই ক্লাবগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে এফএসডিএল জানিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ) স্বাক্ষরিত হওয়া মাস্টার্স রাইটস্ এগ্রিমেন্ট (এমআরএ) আগামী ৮ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আইএসএল শুরু হলেও এক-তৃতীয়াংশ সময়ের মধ্যে চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। নতুন করে চুক্তি সই নিয়ে বেশ কয়েক মাস আগে আলোচনা শুরু হলেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে হেতু ডিসেম্বরের পর আর চুক্তি থাকছে না, তাই ২০২৫-২৬ মরসুমের আইএসএলের পরিকল্পনা, আয়োজন বা বাণিজ্যিকীকরণ করতে এফএসডিএল অপারগ।
আরও পড়ুন:
এফএসডিএল চিঠিতে লিখেছিল, “এই পরিস্থিতিতে আমরা ২০২৫-২৬ মরসুম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গায় নেই। তাই যত দিন না নতুন চুক্তি নিয়ে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে তত দিন এই প্রতিযোগিতা মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।” এফএসডিএল জানিয়েছে, অনেক ভাবনাচিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্লাবগুলির সঙ্গে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং তারা যাতে নিজের মতো করে পরিকল্পনা করতে পারে, তাই চিঠি দিয়ে সকলকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
২০১০ সালে ১৫ বছরের জন্য এআইএফএফের সঙ্গে চুক্তি সই হয় এফএসডিএলের। প্রতি বছর এর মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা পায় ফেডারেশন। তাদের প্রতি দিনের খরচ চালানো এবং বিভিন্ন লিগ আয়োজন করার ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মুহূর্তে এমআরএ সই করতে পারবে না ফেডারেশন। যত দিন না সুপ্রিম কোর্টে ফেডারেশনের সংবিধান চূড়ান্ত হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এই কাজ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর নতুন কমিটিও তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারাই এফএসডিএলের সঙ্গে চুক্তিতে সই করবে। তাতে দীর্ঘ সময় লাগার কথা।