ভারতকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তাঁর দু’হাতই পৌঁছে দিয়েছে। ম্যাচে একাধিক অবধারিত গোল বাঁচান গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু। টাইব্রেকারে লেবাননের অধিনায়ক হাসান মাতুকের শটও বাঁ দিকে উড়ে গিয়ে আটকান তিনি। গুরপ্রীতের পাখির চোখ এখন মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে কুয়েতকে হারিয়ে খেতাব ধরে রাখা।
গ্রুপ পর্বে কুয়েতের সঙ্গে ১-১ ড্র করেছিল ভারত। ফিফা ক্রমতালিকায় অনেক পিছিয়ে থাকলেও প্রতিপক্ষকে একেবারেই হাল্কা ভাবে নিতে রাজি নয় ভারতীয় দল। এই কারণেই ঝুঁকি না নিয়ে রবিবার রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করান কোচ ইগর স্তিমাচ। গুরপ্রীত বলছিলেন, ‘‘জাতীয় দলের হয়ে খেলা সবসময়ই আমার কাছে বিশেষ অনুভূতি। মনে রাখতে হবে আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই ফাইনালের আগে হাল্কা মেজাজে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই।’’
৬১টি ম্যাচের মধ্যে ২৪টিতে কোনও গোল খাননি গুরপ্রীত। শনিবার রাতে টাইব্রেকার শুরু হওয়ার আগে কি চাপে ছিলেন? আত্মবিশ্বাসী গুরপ্রীত বললেন, ‘‘আমি জানতাম ওদের যে (মাতুক) টাইব্রেকার মারতে এসেছিল, তার পক্ষে আমাকে পরাস্ত করা সহজ নয়। নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলের উপরে নজর রেখেছিলাম। সব কিছুই পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পেরেছি।’’ টাইব্রেকারে সাফল্যের জন্য সতীর্থদেরই কৃতিত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় দলের গোলরক্ষক। বললেন, ‘‘আমাদের দলের অনেকেই দুর্দান্ত পেনাল্টি মারে। ওদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করেই উপকৃত হয়েছি।’’
টাইব্রেকারে মাতুকের শট বাঁচানোই শুধু নয়, ৩১ মিনিটে লেবানন অধিনায়কের ফ্রি-কিকও আটকান গুরপ্রীত। ভারতীয় দলের গোলরক্ষক বললেন, ‘‘ভাল ফুটবলারদের সবসময়ই লক্ষ্য থাকে ফ্রি-কিকে গোলরক্ষকদের বোকা বানানো। নিশ্চিত ছিলাম ও পোস্টের কোণ দিয়ে বল গোল রাখার চেষ্টা করবে। আমি তাই তৈরিই ছিলাম।’’
লেবাননের বিরুদ্ধে ম্যাচে কী লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল ভারতীয় দল? গুরপ্রীত বললেন, ‘‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল গোল না খাওয়া এবং সুযোগ পেলে তার সদ্ব্যবহার করা। ১২০ মিনিটই আমরা এই মানসিকতা নিয়ে খেলেছি। প্রচুর গোলের সুযোগও আমরা তৈরি করেছিলাম পুরো ম্যাচে। দুর্ভাগ্য গোল হয়নি।’’ লাল কার্ড দেখায় সেমিফাইনালে সন্দেশ জিঙ্ঘন ছিলেন না। ফাইনালে তিনি ফিরছেন। উচ্ছ্বসিত গুরপ্রীত বললেন, ‘‘সন্দেশের অনুপস্থিতিতে বেশ কয়েক বার আমাদের রক্ষণ একটু সমস্যায় পড়েছিল। তবে আনোয়ার অসাধারণ খেলে পরিস্থিতি সামলেছে।’’
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন বেঙ্গালুরু এফসি ছেড়ে কোথায় যাবেন না ঘোষণা করা সুনীল ছেত্রী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচেও গোল করেছিলেন তিনি। লেবাননের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে গোল না পেলেও সুনীল উচ্ছ্বসিত সতীর্থ গুরপ্রীতের সাফল্যে। ভারতীয় ফুটবলের এই দুই তারকার উত্থানের কাহিনিতেও যে আশ্চর্য মিল!
সুনীলের বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে। ছেলেকে দিল্লির আর্মি পাবলিক স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বড় প্রতিযোগিতায় খেলবেন বলে বাবা-মা’কে না জানিয়েই সুনীল স্কুল বদল করার জন্য আবেদনপত্র (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) জমা দিয়েছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন মমতা মর্ডান স্কুলে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সুনীল সেই কাহিনি শুনিয়েছেন। আর গুরপ্রীতকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন তাঁর বাবা-মা। পঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থার অ্যাকাডেমিতে ভর্তিও করে দিয়েছিলেন ছেলেকে। কিন্তু গুরপ্রীতের লক্ষ্য ছিল ফুটবলার হওয়া। ছেলের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। ভর্তি করে দিয়েছিলেন চণ্ডীগড়ের সেন্ট স্টিভন স্কুলের ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। সুনীল-গুরপ্রীতকে ঘিরেই ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা স্বপ্ন দেখছেন নবম বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)