Advertisement
E-Paper

বিশাল-হাতে বাগানে বসন্ত, টাইব্রেকারে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে আইএসএল সবুজ-মেরুনের

বিশাল কাইতের হাত এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসের জোড়া গোলে প্রথম বার আইএসএল ট্রফির স্বাদ পেয়ে গেল এটিকে মোহনবাগান। বেঙ্গালুরু এফসিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ট্রফি জিতল তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ২২:২৩
vishal kaith

টাইব্রেকারে একটি গোল বাঁচালেন বিশাল কাইত। সেটাই ট্রফি এনে দিল মোহনবাগানকে। — ফাইল চিত্র

ভারতসেরা এটিকে মোহনবাগান। প্রথম বারের মতো আইএসএল ট্রফি জিতল তারা। শনিবার আইএসএল ফাইনালে টাইব্রেকারে হারিয়ে দিল বেঙ্গালুরু এফসিকে। নির্ধারিত সময়ের ম্যাচের ফল ছিল ২-২। টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জিতল তারা। দু’বছর আগে ফাইনালে উঠে মুম্বই সিটি এফসির কাছে হারতে হয়েছিল। এ বার আর ভুল করেনি তারা।

ফাইনালে আগাগোড়া দাপট ছিল মোহনবাগানেরই। মাঝে কিছুটা সময় বেঙ্গালুরু প্রাধান্য দেখা গেলেও, এক বারের জন্যেও এটা মনে হয়নি তারা ট্রফি নিয়ে যেতে পারে। বরং, জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেদের দেখে মনে হচ্ছিল, বাড়তি তাগিদ কাজ করছে তাদের মধ্যে। গোটা মরসুমে অনেক উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। চোটের কারণে একাধিক খেলোয়াড়কে হারাতে হয়েছে। এ দিন ফতোরদা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে যিনি বসেছিলেন, সেই জনি কাউকোর এই মরসুমে প্রচুর অবদান রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত তিনি শেষের দিকে চোট পেলেন। কিন্তু ট্রফিজয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকলেন না। তাঁকে ট্রফি উপহার দিলেন সতীর্থরাই।

অসাধারণ খেললেন পেত্রাতোস। জোড়া গোল করাই নয়, গোটা ম্যাচে দাপট দেখালেন তিনি। আক্রমণভাগে গোল করার লোকের অভাব নিয়ে গোটা মরসুমে অনেক ভুগেছেন ফেরান্দো। পেত্রাতোস আসায় অনেকটা নিশ্চিন্তে ছিলেন। সেই পেত্রাতোস ফাইনালেও উতরে দিলেন স্পেনীয় কোচকে। দু’টি পেনাল্টি এবং একটি টাইব্রেকারে তিনটি শট নিয়েছেন। তিনটি একই দিকে, একই জায়গায়, একই গতিতে। তিন বারই একই দিকে ঝাঁপিয়েছিলেন গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। কোনও বারই থামাতে পারেননি। বলের গতিতেই তা চোখের পলকে জালে জড়িয়ে গিয়েছে।

রেফারির কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। বিশেষত, মোহনবাগান দ্বিতীয় যে পেনাল্টিটা পেল, তাতে স্পষ্ট মনে হয়েছে কিয়ান নাসিরিকে বক্সের বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেঙ্গালুরুও একটি পেনাল্টি পায়নি। তা ছাড়া, আইএসএলে রেফারিদের এ রকম ভুল গোটা মরসুমে প্রচুর রয়েছে। বেঙ্গালুরুর সমর্থকরা এতে খুব বেশি আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না।

এ দিন প্রথম একাদশে একটাই বদল এনেছিলেন মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। বাঁ প্রান্তে কিয়ান নাসিরির জায়গায় ফিরিয়েছিলেন চোটমুক্ত আশিক কুরুনিয়নকে। বেঙ্গালুরু অপরিবর্তিত দল নামিয়েছিল। অর্থাৎ প্রথম একাদশে রাখা হয়নি সুনীল ছেত্রীকে। কিন্তু তিন মিনিটের মধ্যেই মাঠে নামতে হল সুনীলকে। চোট পেয়ে বেরিয়ে যান বেঙ্গালুরুর অন্যতম অস্ত্র শিবশক্তি। তাঁর জায়গায় নামেন সুনীল।

শুরুটা স্বপ্নের মতো হয় মোহনবাগানের। এমনিতেই শুরু থেকে ম্যাচের দাপট ছিল তাদের হাতে। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন এক প্রাক্তনীই। রয় কৃষ্ণের ভুলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। সবুজ-মেরুনের কর্নার বাঁচাতে গিয়ে হাতে বল লাগিয়েছিলেন কৃষ্ণ। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। দিমিত্রি পেত্রাতোস কোনও ভুল করেননি। পরাস্ত করেন গুরপ্রীতকে। লিগে ১১তম গোল হয়ে যায় তাঁর।

ম্যাচে দাপট বজায় রাখে মোহনবাগান। কিছু ক্ষণ পরে আরও একটি হ্যান্ডবলের আবেদন করে তারা। কিন্তু রেফারি কান দেননি। মোহনবাগানের আক্রমণের ধার তাতে অবশ্য কমেনি। এর পরেই কৃষ্ণকে পিছন থেকে মারার কারণে পেনাল্টি চেয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ফুটবলাররা। তাতেও রেফারি সাড়া দেননি। বেঙ্গালুরুর ফুটবলাররা সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন।

সেই কৃষ্ণই অবশ্য পেনাল্টি আদায় করে নেন বেঙ্গালুরুর জন্যে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচ চলছিল। তখনই ভুল করেন মোহনবাগানের ডিফেন্ডার শুভাশিস। বল ক্লিয়ার করতে বড্ড বেশি সময় লাগালেন। বক্সের মধ্যে সোজা মারেন কৃষ্ণের পায়ে। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিতে দেরি করেননি। ঠান্ডা মাথায় গোল করেন সুনীল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ভাল করেছিল বেঙ্গালুরুই। মোহনবাগান তাদের প্রতিপক্ষকে একটু মেপে নিতে চাইছিল। তবে ধীরে ধীরে ম্যাচে প্রাধান্য ফিরে পায় মোহনবাগান। লিস্টনের শট দুর্দান্ত ভাবে বাঁচান গুরপ্রীত। ফিরতি বল চলে এসেছিল পেত্রাতোসের কাছে। চলতি বলে শট নিতে গিয়ে বাইরে মারলেন তিনি। সুবর্ণ সুযোগ হারায় মোহনবাগান।

৭৭ মিনিটে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। আবার সেই রয় কৃষ্ণ। সেই প্রাক্তনীই এসে আঘাত করেন মোহনবাগানকে। বেঙ্গালুরুর কর্নার ভেসে এসেছিল মোহনবাগান বক্সে। এক ডিফেন্ডার এবং গোলকিপারকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান কৃষ্ণ। পুরনো দলের বিরুদ্ধে গোল করে কোনও উৎসব করেননি।

তবে খেলার তখনও বাকি ছিল। চমকের পর চমক। আবার পেনাল্টি থেকে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। তবে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। বক্সের বাইরে কিয়ানকে ফাউল করেছিলেন বেঙ্গালুরুর ফুটবলার। কিন্তু রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেত্রাতোস কোনও ভুল করেননি।

খেলার নির্ধারিত সময়ে কোনও দলই আর গোল করতে পারেনি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধেও কিছু পাওয়া গেল না দু’দলের খেলাতে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানকে অনেক বেশি উজ্জীবিত লাগল। প্রথম দিকে রয় কৃষ্ণ একটি অসামান্য সুযোগ মিস্ করেন। মোহনবাগানের হয়ে একই কাজ করেন মনবীর। পেত্রাতোসের মাপা ক্রসে মাথা ছোঁয়ালেও বল ঠিক জায়গায় লাগেনি। ফলে গোলের বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়।

টাইব্রেকারে ব্রুনো র‌্যামিরেসের শট আটকে দেন বিশাল কাইত। মোহনবাগান বা বেঙ্গালুরুর বাকি কোনও ফুটবলার গোল করতে ভুল করেননি। কিন্তু তাতে ম্যাচের ফলাফলে পার্থক্য হয়নি।

ATK Mohun Bagan ISL 2022-23 Bengaluru FC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy