গত মরসুমে টানা চার ম্যাচ বার্সেলোনার কাছে হারার পর অবশেষে নতুন মরসুমে চিরশত্রুকে হারাল রিয়াল মাদ্রিদ। রবিবার ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবিউতে হওয়া ‘এল ক্লাসিকো’তে রিয়াল জিতেছে ২-১ গোলে। নতুন কোচ জ়াবি আলোন্সো প্রথম ‘এল ক্লাসিকো’তেই দলকে জয় এনে দিলেন। ১০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষস্থান মজবুত করল রিয়াল। বার্সেলোনা ১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্টেই থাকল।
বরাবরের মতোই ম্যাচে নাটকের কোনও কমতি ছিল না। ম্যাচের শুরুতে রিয়ালকে পেনাল্টি দিয়েও সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন রেফারি। অফসাইডে রিয়ালের গোল বাতিল হয়। পেনাল্টি মিস্ করেন কিলিয়ান এমবাপে। ম্যাচের শেষ দিকে একাধিক বার ঝামেলায় জড়ায় দুই দল। শেষ পর্যন্ত এমবাপে এবং জুড বেলিংহ্যামের গোলে জিতেছে রিয়াল। বার্সেলোনার একমাত্র গোল ফারমিন লোপেজ়ের।
ম্যাচের শুরুই হয় নাটক দিয়ে। দ্বিতীয় মিনিটেই পেনাল্টি পায় রিয়াল। বক্সের মধ্যে ভিনিসিয়াসকে ফাউল করেছিলেন লেমিনে ইয়ামাল। বার্সেলোনার ফুটবলারেরা প্রতিবাদ করলেও রেফারি শোনেননি। তবে রেফারির সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেন ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার)। প্রথমে মনে হয়েছিল, ফাউল হওয়ার আগে অফসাইডে ছিলেন ভিনিসিয়াস। পরে রিপ্লে দেখে রেফারি জানান, পেনাল্টি হওয়ার মতো ফাউল হননি। রিয়াল সমর্থক এবং গ্যালারিতে থাকা সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ় একেবারেই খুশি হতে পারেননি।
এর পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা ছিল বার্সেলোনার পায়ে। বেশ কয়েক বার রিয়ালের বক্সে ঢুকে পড়ে তারা। ১২ মিনিটের মাথায় আবার নাটক। রিয়ালের বক্সে বল হারায় বার্সেলোনা। প্রতি আক্রমণে ওঠে রিয়াল। পাস পেয়ে চলতি বলে শট নিয়ে রিয়ালকে এগিয়ে দেন এমবাপে। তবে উচ্ছ্বাস হয় ক্ষণস্থায়ী। রেফারি গোল দিলেও আবার হস্তক্ষেপ করে ভার। দেখা যায়, গোলের আগে ভিনিসিয়াস অফসাইডে ছিলেন। দ্বিতীয় বার বেঁচে যায় বার্সেলোনা।
দু’বার বেঁচে গেলেও তৃতীয় বার বাঁচেনি বার্সেলোনা। ২২ মিনিটে সেই এমবাপেই এগিয়ে দেন রিয়ালকে। এ বার আর গোল নিয়ে সমস্যা হয়নি। বার্সেলোনার রক্ষণ চিরে এমবাপের উদ্দেশে পাস বাড়ান বেলিংহ্যাম। ফরাসি স্ট্রাইকার নিখুঁত দৌড়ে সেই পাস ধরেন। বক্সে ঢুকে পড়ে নিখুঁত শটে গোল করেন তিনি। এটি এমবাপের মরসুমের ১১তম গোল।
গোল পেয়ে আক্রমণ বাড়িয়ে দেয় রিয়াল। পাঁচ মিনিট পরে দূর থেকে গোল করার চেষ্টা করেন ফেদেরিকো ভালভার্দে। সফল হননি। ২৯ মিনিটে এমবাপে বিপক্ষের পাউ কুবারসিকে পিছনে ফেলে গোলে শট নিয়েছিলেন। তিনিও সফল হননি। ভিনিসিয়াসও একটি সুযোগ নষ্ট করেন। এর মাঝে বার্সেলোনাও দু’টি সুযোগ পেয়ে গোল করতে পারেনি। তবে ৩৯ মিনিটে সমতা ফেরায় তারা। দলগত প্রচেষ্টায় গোল আসে। বাঁ প্রান্তে বল পান মার্কাস রাশফোর্ড। তিনি বক্সের মাঝে ফারমিনকে দেখতে পেয়ে পাস বাড়ান। চলতি বলে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন ফারমিন। সামনে আর্দা গুলের থাকলেও আটকাতে পারেননি।
প্রথমার্ধেই আবার এগিয়ে যায় রিয়াল। এ বার গোল বেলিংহ্যামের। বাঁ প্রান্ত থেকে বার্সেলোনার বক্সে বল ভাসিয়েছিলেন ভিনিসিয়াস। এদের মিলিতাও হেড করেন গোলমুখে। ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ছিলেন বেলিংহ্যাম। তিনি ফাঁকা গোলে বল ঠেলেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে মাদ্রিদ। ৫২ মিনিটে রেফারি পেনাল্টি দেন রিয়ালকে। বেলিংহ্যামের পাস আটকেছিলেন এরিক গার্সিয়া। সেই সময় বল তাঁর হাতে লাগে। রেফারি সিদ্ধান্ত বিশ্বাস করতে না পেরে বিদ্রূপ করতে থাকেন গার্সিয়া। এমবাপে শট মেরেছিলেন বাঁ দিকে। বার্সেলোনার গোলকিপার উজসিয়েচ শেজ়নি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে সেই শট বাঁচিয়ে দেন।
আরও পড়ুন:
গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপায় বার্সেলোনা। তারা চেষ্টা করছিল রিয়ালের বক্সের সামনে গিয়ে চোরা পাসে বাজিমাত করতে। ফ্রেঙ্কি দি ইয়ংয়ের এেকটি ভাল পাস পেয়েছিলেন ফেরান তোরেস। তিনি ইয়ামালকে পাস দেন। তবে সেই প্রয়াস কাজে লাগেনি। রিয়াল মূলত প্রতি আক্রমণেই নজর দিচ্ছিল। ভিনিসিয়াস, বেলিংহ্যাম এবং এমবাপে— ত্রিমুখী ফলার সাহায্যে আক্রমণ করছিল তারা।
তবে কোনও দলই গোল করতে পারেনি। ম্যাচের শেষ মিনিটে দুই দলই ঝামেলায় জড়ায়। শেষ বাঁশি বাজার পরেই ঝামেলা, হাতাহাতি হয় দু’দলের ফুটবলারদের।