গত বার লিভারপুলের প্রিমিয়ার লিগ জয়ের উৎসবে ছিলেন দিয়োগো জোতা। এ বার তিনি নেই। গত মাসে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে লিভারপুল ও পর্তুগালের ফুটবলার জোতা ও তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভার। তাই জোতাকে স্মরণ করেই প্রিমিয়ার লিগের নতুন মরসুম শুরু করল লিভারপুল। কিন্তু তার পরেও শুরুতেই বিতর্ক হল মাঠে। ফলে কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকল খেলা।
প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে বোর্নমাউথের মুখোমুখি হয়েছিল লিভারপুল। খেলা শুরুর আগে গোটা স্টেডিয়াম নীরবতা পালন করে। মাঠের মাঝে দুই দলের ফুটবলারেরা হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। দু’দিকের গ্যালারিতে জোতা ও সিলভার স্মরণে বিভিন্ন পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যাচ্ছিল। একটা বড় ব্যানার দেখা গেল মাঠে। সেখানে জোতার স্ত্রী রুট কার্ডোসো ও তাঁদের তিন সন্তানকে বার্তা দিল লিভারপুল। সেই ব্যানারে লেখা ছিল, “রুট, দিনিস, দুয়ার্তে, মাফালদা— অ্যানফিল্ড সব সময় তোমাদের ঘর হয়ে থাকবে। তোমরা একা নও।” একই পোস্টার দেখা গেল জোতার জন্য। সেখানে লেখা, “ডিজে ২০। তুমি একা নও। অ্যানফিল্ড তোমার সঙ্গে আছে।”
লিভারপুলের কোচ আর্নে স্লট, সাপোর্ট স্টাফ ও ফুটবলারেরা কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলছিলেন। খেলা শুরুর আগে জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠল জোতার ছবি। বাজল ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন।’ বোর্নমাউথকে ৪-২ গোলে হারাল লিভারপুল। নিজের গোলের পর জোতার কায়দায় উল্লাস করলেন মহম্মদ সালাহ্। খেলা শেষে সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। কাঁদলেন সালাহ্। তাঁর হয়তো মনে পড়ে যাচ্ছিল জোতার সঙ্গে কাটানো গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন মুহূর্ত। দু’জনে একসঙ্গে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ জিতেছেন। সেই সব স্মৃতি ভিড় করছিল সালাহের মাথায়।
লিভারপুলের গ্যালারিতে জোতার নামে ব্যানার। ছবি: রয়টার্স।
জোতার মৃত্যুর পর তাঁর ২০ নম্বর জার্সির অবসর ঘোষণা করেছে লিভারপুল। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে কেউ কোনও দিন ২০ নম্বর জার্সি পরে ওই ক্লাবে খেলতে পারবেন না। তা ছাড়া ক্লাবে জোতার এক মূর্তিও বসেছে। এ বার প্রিমিয়ার লিগের শুরুটা হল তাঁর স্মরণে। প্রথম জয় তাঁকেই উৎসর্গ করলেন ফুটবলারেরা।
তবে তার মাঝেও বিতর্ক থামল না। ম্যাচের প্রথমার্ধে বোর্নমাউথের ফুটবলার আন্তোইনে সেমেনিয়ো অভিযোগ করেন যে লিভারপুলের কিছু সমর্থক তাঁকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটের মাথায় দেখা যায়, রেফারি অ্যান্থনি টেলর কথা বলছেন সেমেনিয়োর সঙ্গে। তার পর লিভারপুলের কোচ স্লট ও বোর্নমাউথের কোচ আন্দোনি ইরাওলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দুই দলের অধিনায়কের সঙ্গেও কথা বলেন রেফারি। ফলে কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। সকলের সঙ্গে কথা বলার পর আবার খেলা শুরুর নির্দেশ দেন রেফারি।
আরও পড়ুন:
প্রথমার্ধ শেষে বিরতিতে বিবৃতি দেয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)। সেখানে লেখা, “গ্যালারির একটা অংশ থেকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের যে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে তা চিন্তা বাড়াচ্ছে। ফুটবলে এই ধরনের ব্যবহারের কোনও জায়গা নেই। দুই ক্লাব ও রেফারিদের সঙ্গে কথা চলছে। এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই অভিযোগ ভাল ভাবে নেয়নি লিভারপুলও। খেলা শেষে তারা জানিয়েছে, তদন্তে সব রকমের সাহায্য করবে। এক বিবৃতিতে ক্লাব বলেছে, “বর্ণবিদ্বেষ-সহ সব রকম বিভেদ তৈরির চেষ্টার কড়া নিন্দা করছি। আমাদের সমাজ ও ফুটবলে এর কোনও জায়গা নেই। এ দিনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তাই এখন কোনও মন্তব্য করা যাবে না। তবে তদন্তে সব রকমের সাহায্য করা হবে।”
উল্লেখ্য, লিভারপুলের বিরুদ্ধে ২-৪ হারের ম্যাচে বোর্নমাউথের হয়ে দুটো গোলই করেছেন সেমেনিয়ো। সেই তিনিই বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগ করেছেন। এখন দেখার এই ঘটনার জল কত দূর গড়ায়।