গোলদাতা শুভাশিস বসুর (ডান দিকে) সঙ্গে উল্লাস সাহাল আব্দুল সামাদের। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: সমাজমাধ্যম।
মহমেডানকে পাড়ার স্তরের ক্লাবে নামিয়ে আনল মোহনবাগান। আইএসএলের ফার্স্ট বয় ও লাস্ট বয়ের মধ্যে কতটা তফাত তা পরিষ্কার বোঝা গেল যুবভারতীতে। মাত্র তিন বিদেশি নিয়ে হোসে মোলিনার দল যে ফুটবল খেলল তা অবাক করার মতো। গত তিনটি ম্যাচে বাগানের খেলার মান পড়েছিল। শনিবার যুবভারতীতে আবার পুরনো মোহনবাগান। আইএসএল ডার্বিতে মহমেডানকে ৪ গোল দিল তারা। জোড়া গোল করলেন শুভাশিস বসু ও মনবীর সিংহ। সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অন্তত ৮ গোল করতে পারত বাগান। এই জয়ের ফলে ১৯ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগশিল্ড জয়ের পথে আরও এক পা বাড়াল মোহনাবাগান। লজ্জার হারের পর ১৩ নম্বরেই থাকল মহমেডান। ১৮ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১১।
শুরু থেকেই ম্যাচের দখল বাগানের
খেলার শুরু থেকেই দাপট বাগানের। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠলেন মনবীর সিংহ, লিস্টন কোলাসোরা। দুই প্রান্ত ধরে একের পর এক আক্রমণ ভেসে আসতে থাকে। ফলে চাপে পড়ে যায় মহমেডান রক্ষণ। মাঝেমধ্যে দু’এক বার প্রতি-আক্রমণে উঠলেও ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারেনি সাদা-কালো ব্রিগেড। অন্য দিকে যত বার মোহনবাগান ফুটবলারেরা আক্রমণে উঠছিলেন, মনে হচ্ছিল গোল হবে।
তিন সেট পিসে তিন গোল
এ বারের লিগে সেট পিস সবচেয়ে ভাল ভাবে কাজে লাগিয়েছে বাগান। কর্নার ও ফ্রি-কিক থেকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে তারা। আধুনিক ফুটবলে ওপেন প্লে-র গুরুত্ব বাড়লেও সেট পিস কী ভাবে কাজে লাগানো যায় তা দেখিয়েছেন মোলিনা। এই ম্যাচেও সেটা দেখা গিয়েছে। ১২ মিনিটের মাথায় লিস্টনের কর্নার থেকে বক্সে একের পর এক পাস খেলেন জেসন কামিংস, জেসন ম্যাকলারেন, দীপেন্দু বিশ্বাসেরা। শেষে বল আসে শুভাশিস বসুর পায়ে। ঠান্ডা মাথায় গোল করেন বাগান অধিনায়ক। ২০ মিনিটের মাথায় কামিংসের কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন মনবীর। প্রথমার্ধে সংযুক্তি সময়ে ফ্রি-কিক নেন কামিংস। তাঁর বল ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় শুভাশিসের কাছে পাঠান ম্যাকলারেন। নিজের দ্বিতীয় গোল করতে ভুল করেননি শুভাশিস। প্রথমার্ধেই ৩-০ এগিয়ে যায় বাগান।
বাগানের জমাট রক্ষণ, নজর কাড়লেন দীপেন্দু
চোটের কারণে এই ম্যাচে ছিলেন না আলবের্তো রদ্রিগেস। বদলে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের দায়িত্ব পান দীপেন্দু। তরুণ বাঙালি ফুটবলার প্রমাণ করে দিলেন, কেন তাঁর উপর ভরসা রেখেছেন কোচ। দায়িত্ব নিয়ে বল বাঁচালেন। বলের লাইনে শরীর ছুড়ে দিলেন। আবার আক্রমণেও সাহায্য করলেন। টম অলড্রেড রক্ষণে দেওয়ালের মতো ছিলেন। শুভাশিসও গোল করার পাশাপাশি রক্ষণে নিজের ভূমিকা পালন করলেন। আর তেকাঠির নীচে ছিলেন বিশাল কাইথ। যে কয়েক বার মহমেডান গোল করারল পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তা আটকে দিয়েছে বিশালের হাত।
মোলিনার ছক চাপে ফেলল মহমেডানকে
এই ম্যাচে ছক বদলেছিলেন মোলিনা। কামিংসকে একটু পিছন থেকে খেলাচ্ছিলেন তিনি। ফলে গোল করার থেকে গোল করানোর দিকে নজর ছিল তাঁর। তিনটি গোল আসে তাঁর ক্রস থেকে। ম্যাকলারেনও কিছুটা পিছনে খেলেন। বদলে মনবীর অনেক বেশি সামনে খেলেন। এই ম্যাচে আলাদা করে কেউ স্ট্রাইকারের জায়গায় খেলেননি। যে সুযোগ পাচ্ছিলেন সেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে গোল করেন মিডফিল্ডার, ডিফেন্ডারেরা।
কাশিমভের লাল কার্ড আরও চাপে ফেলে মহমেডানকে
প্রথমার্ধের শেষ দিকে অলড্রেডকে ফাউল করেন মীরজালল কাশিমভ। তার পরে আবার ইচ্ছা করে লাথি মারেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি লাল কার্ড দেখান কাশিমভকে। ফলে ১০ জন হয়ে যায় মহমেডান।
মাঠ জুড়ে খেললেন কামিংস
এই ম্যাচে দুর্দান্ত খেললেন কামিংস। সাধারণত এত পরিশ্রম তাঁকে করতে দেখা যায় না। এই ম্যাচে করলেন। বলের দখল নেওয়ার জন্য দৌড়লেন। বলের নিয়ন্ত্রণ রাখলেন। ডিফেন্স চেরা ক্রস বাড়ালেন। তাঁর ক্রস থেকে ৫২ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করেন মনবীর। কামিংস নিজেও গোল করতে পারতেন। বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
মহমেডানকে নিয়ে ছেলেখেলা বাগানের
০-৪ গোলে পিছিয়ে ছিল মহমেডান। তাদেরই গোল করার তাগিদ বেশি হওয়ার কথা। উল্টে দাপট দেখাল মোহনবাগান। দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরো খেলাটাই হল মহমেডানের অর্ধে। বার বার সুযোগ তৈরি করল বাগান। ম্যাকলারেন, লিস্টন, দিমিত্রি পেত্রাতোসরা সহজ সুযোগ না ছাড়লে আরও অন্তত ৪টি গোল করতে পারত বাগান। দেখে বোঝা যাচ্ছিল না যে কলকাতার দুই প্রধানের খেলা হচ্ছে। হিমশিম খাচ্ছিল মহমেডানের রক্ষণ। ভাগ্যের জোরে কয়েকটি ক্ষেত্রে বাঁচে তারা। পেত্রাতোসের একটি শট বারে লেগে বেরিয়ে যায়। নইলে লজ্জা আরও বাড়ত।
জিতলেও নতুন দুই চিন্তা বাগান কোচের
মহমেডানকে সহজে হারালেও বাগান কোচ মোলিনার চিন্তা গেল না। এই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না আপুইয়া ও অলড্রেড। মাঝমাঠ ও রক্ষণের দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের বিকল্প খুঁজতে হবে মোলিনাকে। তবে বাগান এই মরসুমে যে ভাবে দলগত ফুটবল খেলছে তাতে হয়তো ৫ ফেব্রুয়ারি নামার আগে সেই সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন কোচ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy