মোহনবাগান মাঠে শুক্রবার বিকেলে তাঁর জন্যই অপেক্ষা করে ছিলেন ফুটবলারেরা। একধারে টেবলের উপরে রাখা ছিল কেক। কোচ হোসে ফ্রান্সিসকো মলিনা মাঠে প্রবেশ করতেই জয়ধ্বনি উঠল। কয়েক মিনিট আগেই সাংবাদিক বৈঠকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট কোচের মুখে হাসি থাকলেও বক্তব্যে উদ্বেগের স্পষ্ট ছাপ ছিল।
চোটের কারণে মনবীর সিংহ, আলবার্তো রদ্রিগেস, সুহেল বাট ও কিয়ান নাসিরি ছিটকে গিয়েছেন। আজ, শনিবার ডুরান্ড কাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ডায়মন্ড হারবার এফসি-র বিরুদ্ধে কার্ড সমস্যায় পাবেন না দীপেন্দু বিশ্বাসকেও। অথচ এই ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছে মোহনবাগানের ডুরান্ড কাপ ভাগ্য। সরাসরি শেষ আট নিশ্চিত করতে হলে জেতা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই। ড্র করলে অথবা হারলে অপেক্ষা করবে জটিল অঙ্ক। কারণ, ডুরান্ড কাপের নিয়ম অনুযায়ী ছ’টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি শেষ আটে পৌঁছে যাবে। দ্বিতীয় সেরা হিসেবে আরও দু’টি দল ছাড়পত্র পাবে শেষ আটের। টানা দু’ম্যাচ জিতে ছয় পয়েন্ট অর্জন করে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষ স্থানে এখন ডায়মন্ড হারবার। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহনবাগানের সংগ্রহেও ছয় পয়েন্ট। কিন্তু গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় এক নম্বরে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার। তাই শেষ আটে যোগ্যতা অর্জনের জন্য জেমি ম্যাকলারেনদের যে কোনও মূল্যে জিততেই হবে।
প্রশ্ন উঠছে মরসুমের শুরুতেই মোহনবাগান চোট-আঘাতে জর্জরিত কেন? মলিনা দায়ী করলেন ভারতীয় ফুটবলকেই। বললেন, ‘‘ভারতে ফুটবল মরসুম ছোট। অথচ দু’টি মরসুমের মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি থাকে। ফলে ফিট থাকার জন্য ফুটবলারেরা নির্দেশ মেনে ঠিক মতো অনুশীলন করে কি না বলা কঠিন। ভারতীয় ফুটবলে পরিকল্পনার অভাবেই এই সমস্যা হচ্ছে।’’
আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে গত বারের চ্যাম্পিয়ন ডায়মন্ড হারবার। এই মরসুমে শক্তিশালী দল গড়েছেন কোচ কিবু ভিকুনা। গত মরসুমে পঞ্জাব এফসি-র হয়ে আইএসএলে খেলা স্ট্রাইকার লুকা মায়সেন যোগ দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারে। দুরন্ত ছন্দে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন দা সিলভিয়েরা। রক্ষণের ভরসা স্পেনীয় মিকেল কোর্তাসা। আছেন জবি জাস্টিনও। তার উপরে রয়েছে মোহনবাগানকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ কিবুর মগজাস্ত্র। মহমেডান স্পোর্টিংকে ২-১ গোলে হারিয়ে ডুরান্ড কাপে যাত্রা শুরু করে ডায়মন্ড হারবার। দ্বিতীয় ম্যাচে বিএসএফের বিরুদ্ধে জয় ৮-১ গোলে! পুরনো ক্লাবের বিরুদ্ধে দ্বৈরথের আগে সতর্ক কিবু। বললেন, ‘‘ভারতের সেরা ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলব আমরা। কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে।’’
আইএসএলে দ্বিমুকুটজয়ী মোহনবাগান এ বার আরও বেশি শক্তিশালী। জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রি পেত্রাতস, জেসন কামিংস, টম আলড্রেড ও আলবার্তো রদ্রিগেসরা আছেন। যোগ দিয়েছেন ভারতীয় দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসা অভিষেক সিংহ। চেন্নাইয়িন এফসি ছেড়ে ফিরে এসেছেন কিয়ান নাসিরিও। মোহনবাগানও ডুরান্ড কাপে যাত্রা শুরু করেছিল মহমেডানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে মনবীররা বিএসএফ-কে হারান ৪-০ গোলে। তা সত্ত্বেও স্বস্তি নেই মলিনার। তাঁর প্রধান চিন্তা রক্ষণ নিয়েই। কারণ দুই ডিফেন্ডার আলবার্তো ও দীপেন্দু নেই। পরিস্থিতি সামলাতে ছক বদলে তিন ডিফেন্ডারে খেলার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি। বললেন, ‘‘ওরা নেই বলে কোনও অজুহাত দিতে চাই না। কারণ, আমরা মোহনবাগান। আমাদের দলে প্রত্যেকেই দুর্দান্ত ফুটবলার।’’ ডায়মন্ড হারবার কোচ কিবুকে নিয়ে অবশ্য চিন্তিত মলিনা। বললেন, ‘‘মোহনবাগানের কিংবদন্তি কিবু। আইলিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন দলকে। ওঁর কোচিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’’
দিমিত্রি পেত্রাতস কি খেলবেন? বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কলকাতা এসেছেন অস্ট্রেলীয় তারকা। এ দিন বিকেলে ডায়মন্ড হারবার ম্যাচের প্রস্তুতিতেও নেমে পড়েছিলেন তিনি। মলিনা অবশ্য বলছেন, ‘‘মাত্র একবেলা অনুশীলন করিয়ে দিমিকে খেলানোর কোনও প্রশ্ন ওঠে না। ডায়মন্ড হারবার ম্যাচ জেতা জরুরি, তার জন্য এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে ফুটবলারদের চোট পাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’’
দিমিত্রির অভাব অবশ্য একাই দূর করতে পারেন দুরন্ত ছন্দে থাকা লিস্টন কোলাসো। শেষ দু’ম্যাচে চার গোল করেছেন তিনি। শনিবার যুবভারতীতে কি হ্যাটট্রিক করবেন? সাংবাদিক বৈঠকে হাসতে হাসতে লিস্টন বললেন, ‘‘সব সময়ই আমি হ্যাটট্রিক করতে চাই। তবে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলের জয়। শনিবার হ্যাটট্রিক করতে পারলে অবশ্যই খুশি হব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)